• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার কারণ জানালো র‌্যাব


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৬, ২০২২, ০২:৩৪ পিএম
শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার কারণ জানালো র‌্যাব

ঢাকা: জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে প্রকাশ্যে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করা কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী কাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন কাজী আনিসকে তার পাওনা বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। সেদিন বিকেলে তাকে চেক দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেননি আমিন দম্পতি। ফলে রাগে-ক্ষোভে এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে আনা ঋণের চাপে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এসব বিষয় জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে কাজী আনিসের সঙ্গে আমিন দম্পতির পরিচয় হয়। পরে ঘনিষ্ঠতা হয়। এক পর্যায়ে তারা পাশের দেশে (ভারত) অবস্থান করেন। বিভিন্ন পর্যায় তাকে লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে রাজি করা হয়। ২০১৮ সালে তিনি এক কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এই বিনিয়োগের টাকা আনিস তার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। এই দম্পতির সঙ্গে কাজে আনিসের ভালো সম্পর্ক থাকায় টাকা নেওয়ার বিষয়টি কোনো কাগজে ডিড করা হয়নি। প্রথম দিকে প্রাথমিকভাবে কয়েক মাস নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছিলেন নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিন। এক পর্যায়ে এই লভ্যাংশের অংশ তারা দেওয়া বন্ধ করে দেন। পরে আমিন দম্পতির সাথে বিষয়টি কাগজ-কলমে চুক্তি করার জন্য বলতে থাকেন আনিস। কিন্তু নুরুল আমিন তাতে গড়িমসি করেন। তিনি চুক্তিও করছিলেন না পাশাপাশি টাকাও দিচ্ছিলেন না। যার পরিপ্রেক্ষিতে কুষ্টিয়াতে কাজী আনিস একটি মামলা দায়ের করেন। যেখানে চেক জালিয়াতি ও আরেকটি মামলা ছিল। সেই মামলার কার্যক্রম এখনও চলমান।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কাজী আনিস বিভিন্ন সময় এই দম্পতির কাছে পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য আসতেন, তাদেরকে অনুরোধ করতেন এবং তাদের কাছে যেতেন। ভুক্তভোগী গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বন্ধু-বান্ধব ও মানুষের সহযোগিতা চান। পাশাপাশি গত ৩১ মে তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানান। তিনি সেখানে কত টাকা দিয়েছিলেন এবং টাকা পাচ্ছেন না এসব বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ জুন কাজী আনিস ঢাকায় আসেন এবং সেদিন তাকে চেক দেওয়ার কথা ছিল। তাকে বলা হয়েছিল, বেশ কিছু লভ্যাংশ তাকে দেওয়া হবে। এই কারণে তিনি ঢাকায় আসেন। ঘটনার দিন পাওনা টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন বিকেলে কাজী আনিস তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা তাকে টাকা দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাদের আচরণে হতাশ হয়ে রাগে-ক্ষোভে অভিমান করে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কাজী আনিস।

গ্রেফতার হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক ও তার স্ত্রীর ব্যাপারে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় এলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামে নামকরণ করেন। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশন ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন।

বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে চার তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। বর্তমানে ওই ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস ও জে কে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।  

হেনোলাক্স কোম্পানির মালিকের স্ত্রীর ব্যাপারে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে এক বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশোনা করেন।

এক প্রশ্নের জবাব হবে আল মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এখন পর্যন্ত কোনো থানাতেও কোনো অভিযোগ আসেনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে আর কেউ টাকা পায় না। টাকা পাবে এমন কোনো ব্যক্তি থাকলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি দেখব।

কত টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল এবং কত টাকা পাওনা ছিল এ বিষয়ে তিনি বলেন, মারা যাওয়া আনিসের সাথে তাদের আর্থিক লেনদেন ছিল। যেহেতু কাজী আনাস মারা গেছেন এই কারণে দুই পক্ষের কথাবার্তা যাচাই করা আমাদের পক্ষে এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। টাকার যে গড়মিল সেটি অবশ্যই মামলার তদন্ত করে কর্মকর্তা বের করতে সক্ষম।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার দম্পতি বলেছেন, তারা কিছু টাকা চেকে দিয়েছেন, কিছু টাকা নগদে দিয়েছেন। যারা মামলা করেছেন তারা তো বিষয়টি এজাহারে উল্লেখ করেছেন। আর কেউ তাদের কাছে টাকা পাবে কি না বা বিনিয়োগ করেছে তারা বিষয়টি জানাননি।

ঘটনার দিন থেকে আমিন দম্পতি পলাতক ছিলেন জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত জুন মাসে তাদের সাথে আনিসের কিছু কথাবার্তা ও বার্গেনিং হয়। গত ৪ জুলাই তারা উত্তরায় পালিয়ে যান। আনিস আত্মহত্যা করার পর তারা ভয়ে পালিয়ে যান।

আল মঈন বলেন, এই ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ঘটনা বলা হয়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সম্মিলিতভাবে তাদের গ্রেফতার করেছি। যিনি মামলার দায়িত্বে থাকবেন তিনি বিভিন্নভাবে তদন্ত করবেন। তখন জানা যাবে দুই পক্ষের মধ্যে কত টাকা পাওনা ছিল এবং কত টাকা লেনদেন হয়েছিল। যদিও বিষয়টি ভুক্তভোগী পরিবার মামলায় উল্লেখ করেছে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!