• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ নিয়ে যা বলল র‌্যাব


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৮, ২০২২, ০৪:৫৪ পিএম
চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ নিয়ে যা বলল র‌্যাব

ঢাকা: টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা পরিকল্পিত ছিল, তবে ডাকাতির সময় মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনের কথায় এক নারী যাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশেষ বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

হোতা রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে রোববার গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হলেও ধর্ষণের ঘটনা ডাকাতির সময় তাৎক্ষণিকভাবে রতনের পরিকল্পনায় ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রতন ঘটনার ৩ দিন আগে তার সহযোগী ডাকাত রাজাকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিলে রাজা দলের অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলে। পরে রতন তার অন্য সহযোগী মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে এবং মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে এই ডাকাতির পরিকল্পনায় যুক্ত করে ১৩ জনের বড় একটি দল গঠন করে।’

‘ঘটনার দিন দুপুরে তারা ঠিক করে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কোন বাসে ডাকাতি করবে। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনার যাবতীয় খরচ রতন বহন করে এবং টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহার করার জন্য ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও একটি ক্ষুর কিনেন তিনি।’

এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ মোড় এলাকায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস বাসটি সিরাজগঞ্জ মোড়ে পৌঁছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেয় এবং যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে। পরবর্তীতে কিছু দুরে আরও দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠে। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাসের পিছনের দিকে বসে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন তার দলের সদস্যদেরকে চাকু ও ধারালো কাঁচি দেন। আউয়াল ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে চালককে মারধর করে এবং রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।

অন্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত-মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখ ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।

পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় রতন গাড়ি চালনার সময় লুটকৃত মালামাল ভাঘাভাগি করা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। ওই বাক বিতন্ডার ফলে অসতর্কতায় রতন নিয়ন্ত্রণ হারালে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বালুর ঢিবির সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। তখন ডাকাতদলের সবাই লুটকৃত মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়।

সেখান থেকে অন্য বাসে করে ডাকাত চক্রের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যায় এবং অটোরিকশায় করে মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুন্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে।

‘এরপর ডাকাত রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজারে, মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু আলাদাভাবে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায়, ডাকাত আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায়, ডাকাত জীবন কোনাবাড়ীতে, ডাকাত দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে ও পরবর্তীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় এবং ডাকাত সোহাগ প্রথমে জিরানী বাজার ও পরবর্তীতে জামালপুর জেলায় এবং পুনরায় জিরানী বাজারে আত্মগোপন করে,’ যোগ করেন র‍্যাব কর্মকর্তা।

ডাকাতির পাশাপাশি বাসে ধর্ষণের ঘটনাটি রতনের পরিকল্পনায় হয়েছে বলে জানান খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ করা তাদের পূর্বপরিকল্পনায় ছিল না। এটা রতন তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছে। তবে কি কারণে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে রতন ও তার সহযোগিরা এ বিষয়ে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’

তবে পুরো ঘটনায় বাসের চালক-হেলপার-সুপারভাইজার কেউই জড়িত নন বলে জানান তিনি।

ডাকাতদের সম্পর্কে র‍্যাব মুখপাত্র জানান, রতন হোসেন পেশায় গাড়ির হেলপার। তার বিরুদ্ধে আগেও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। সে ২০১৮ সালে নূরনবী, জীবন ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সাভার পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি করে। ঐ ডাকাতির ঘটনায় রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে আবার নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিকশা ছিনতাই করে।

ওই ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রতন ও জীবন এক বছর জেল খাটে।

এরপর জামিনে বের হয়ে রতন তার সিন্ডিকেট নিয়ে সাভার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে আরও বেশ কয়েকটি ডাকাতি করে।

জীবন পেশায় গাড়ির হেলপার। এই পেশার আড়ালে সে বেশ কয়েকটি পরিবহনে ডাকাতিতে অংশ নেন।

সবশেষ ঈগল স্পেশাল পরিবহনের ডাকাতিতে সে যাত্রীদের মালামাল লুটের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

এর আগে সে ২০১৮ ও ২০২০ সালে দুটি ডাকাতির মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে।

মান্নান গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় একটি চুরির মামলায় কারাভোগ করেছে। তার পরিকল্পনায় ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টস কর্মী আলাউদ্দিন, সোহাগ, বাবু, দীপু, রাসেল, রায়হান, নাঈম ওই ডাকাতিতে অংশ নিতো।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!