• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালানি তেল ক্রয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বিপিসি


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১২, ২০১৬, ০৫:০২ পিএম
জ্বালানি তেল ক্রয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বিপিসি

ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরেরও বেশি সময় জ্বালানি দাম কমতির দিকে থাকলেও বিপিসি কিনছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। গত ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে ব্যারেল প্রতি জ্বালানি তেলের দাম ছিল মাত্র ৩৬ ডলার, বিপিসি সেখানে প্রতি ব্যারেলের দাম ধরেছে ৬১ ডলার ৩১ সেন্ট। গত ১৭ ডিসেম্বর ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ দর অনুমোদন করা হয়। এ হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় দ্বিগুণ দামে জ্বালানি তেল কিনছে সংস্থাটি। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সরকারি জ্বালানি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) হিসাবের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।

ইতঃপূর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছিলেন, বিপিসির জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়টি পরিষ্কার নয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বিপিসির হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে একাধিকবার আপত্তি তুলেছে। এজন্য সংস্থাটি বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা সম্পাদনের শর্ত দেয়। কিন্তু সে অনুযায়ী নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হলেও তাদের সুপারিশ মানা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিপিসি আগামী ছয় মাসের জন্য (জানুয়ারি-জুন) ১০ লাখ ৮৫ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনবে। এজন্য ব্যারেলপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ৬১ ডলার ৩১ সেন্ট। তবে এর সাথে পরিবহন ব্যয়, সার্ভিস চার্জ, জাহাজ ভাড়া এবং শুল্ক ও ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত নয়। আর ব্যারেলপ্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ ডলার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে আগামী ৬ মাসের জন্য জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় হবে ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। অথচ বিপিসির ব্যারেলপ্রতি ৬১ ডলার ৩১ সেন্টের দর প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমেছে। গত ৭ জানুয়ারি তা ৩৩ ডলারে নেমে আসে। যা প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের মতে, জ্বালানি তেলের দাম কমার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। জ্বালানি তেলের দাম আগামী মে মাস নাগাদ ব্যারেলপ্রতি ২০ ডলারেও নেমে আসতে পারে।

সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল যে বন্দর থেকে সরবরাহ করা হয় সেখানকার দামের ভিত্তিতেই বিপিসির ক্রয়মূল্য নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে ১-২ ডলার বন্দর চার্জ যুক্ত হয়। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে বিপিসিকে প্রিমিয়াম চার্জসহ প্রতি ব্যারেলে ৪০-৪১ ডলার পরিশোধ করতে হবে। আর বিপিসি সাধারণত ৬ মাসের জন্য তেল কেনার চুক্তি করে। সেক্ষেত্রে শর্ত থাকে যেদিন বন্দর থেকে সরবরাহ দেয়া হবে সেদিনের দর বিবেচিত হবে। তবে রক্ষণশীলতার জন্য সরবরাহের দিন এবং তার আগে ও পরের দিনের দামের গড় ধরা হয়। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বন্দরে ১-২ ডলার বেশি হয়। গত ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামে (৩৩ ডলার) জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে তা আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির জন্য। ওইদিন বাংলাদেশের জন্য তেল সরবরাহ করা হলে বিপিসিকে প্রতি ব্যারেলের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ ডলার পরিশোধ করতে হবে। ফলে ৬১ দশমিক ৩১ ডলারে জ্বালানি তেল  কেনা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন না জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র আরো জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) বিপিসি ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ২ সেন্টে জ্বালানি তেল  কেনে। গত ২৭ আগস্ট অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী সংস্থাটি ৫ লাখ ৭০ হাজার টন তেল কেনে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৪৯ ডলার। অর্থাৎ ওই সময়ও আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনেছে বিপিসি।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় মুনাফা করছে বিপিসি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি গত অর্থবছর ৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর তাদের মুনাফা ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা যায়, গত বছর জানুয়ারি থেকে বিপিসি পেট্রল ও অকটেনে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে। তাছাড়া ফার্নেস অয়েলে মুনাফা করেছে ৪৮ শতাংশ, জেট ফুয়েলে ৩৪ শতাংশ, ডিজেলে ২৭ শতাংশ ও কেরোসিনে ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের শেষদিকে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে চলতি অর্থবছর দাম আরো কমায় এ মুনাফা বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে বিপিসির চেয়ারম্যান এএম বদরুদ্দোজার দাবি, বেশি দামে জ্বালানি তেল কেনার তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, ক্রয় কমিটিতে জ্বালানি তেলের যে দামে অনুমোদন নেয়া হয় তা জ্বালানি তেলের প্রকৃত মূল্য নয়। মূলত রেফারেন্স মূল্য। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সাথে কিছুটা প্রিমিয়াম যোগ করে জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করা হয়। তবে ক্রয় কমিটির দামের চেয়ে কমে কেনা হলেও সেজন্য পরে আর অনুমোদন নেয়া হয় না।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!