• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক বিলিয়ন ডলারের মালিক নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০২০, ০৩:২০ পিএম
এক বিলিয়ন ডলারের মালিক নেই

ঢাকা : গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।

আর সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ শীর্ষক যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে (২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

অথচ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কোনো নমিনি নেই। ওইসব ব্যাংক হিসাবে ১ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো দাবিদার নেই। সম্প্রতি এমন একটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান মিলেছে সিঙ্গাপুরে। ব্যাংক হিসাবধারী অবশ্য বাংলাদেশি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য বলেছে, পুরো অর্থই পাচার করা হয়েছে সিঙ্গাপুরে। তাই এই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে চায় সংস্থাটি। অর্থ ফিরিয়ে আনতে সংস্থাটি বাংলাদেশের আইন, সিঙ্গাপুরের আইন ও মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স আইন খতিয়ে দেখছে।

দুদকের আইনজীবী জানিয়েছেন, গুঞ্জন রয়েছে, কোনো একটি মামলায় এ অ্যাকাউন্টের মালিকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ টাকার মালিক।

জানা গেছে, দেশ থেকে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে। পাচারকৃত এসব অর্থ চিহ্নিতকরণ ও টাকা ফেরত আনার বিষয়টি অনেক জটিল প্রক্রিয়া। প্রতি বছর কত টাকা বিদেশে পাচার হয় সে সংক্রান্ত নির্দিষ্ট কোনো তথ্য কোথাও নেই। তবে দেশ থেকে টাকা পাচারকারীর প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও বছরে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তার ধারণা পাওয়া যায় মার্কিন গবেষণা সংস্থাসহ কয়েকটি বিদেশি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা স্থানীয় মুদ্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা।

আর সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ শীর্ষক যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে (২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচারকৃত এসব অর্থ চিহ্নিতকরণ ও টাকা ফেরত আনার বিষয়টি অনেক জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক পাচারকৃত অর্থ চিহ্নিত করে তদন্তের পর মামলা করতে হয়। এরপর আদালত রায় দিলেই কেবল প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কানাডায় অর্থ পাচারের ২৮টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে সরকার। তার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে। এরপরই তথ্য সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশির নামে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সন্ধান পাওয়া যায়।

বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ বিপুল পরিমাণ অর্থের কোনো দাবিদার নেই। তবে বাংলাদেশ ওই টাকার মালিকানা দাবি করেছে। সে টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, টিটি চুক্তি অনুযায়ী এখনই নাম প্রকাশ করা যাবে না। তবে গুঞ্জন রয়েছে, কোনো একটি মামলায় এ অ্যাকাউন্টের মালিকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তার স্ত্রী-সন্তানও আছেন, কিন্তু তারাও এ টাকার মালিকানা দাবি করতে যাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সহজসাধ্য নয়, যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ তবে সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এ টাকার মালিক। অবশ্য এ ধারণার পক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খুরশীদ আলম খান বলেন, সাধারণত কেউ মারা গেলে তার নমিনিরা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের মালিক হন।

বাংলাদেশের মতো সিঙ্গাপুরের ব্যাংকগুলোরও একই নিয়ম। কিন্তু সিঙ্গাপুরের ওই অ্যাকাউন্টের কোনো নমিনি নেই। আবার এ টাকাগুলো তার স্ত্রী বা ছেলে কেউ নিজেদের বলে দাবিও করছেন না। হয়তো তাদের আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছেন তোমরা যদি টাকাটা নিজেদের দাবি কর তাহলে দুদক তোমাদের নামে অভিযোগ দায়ের করবে। ফলে এখন কেউ দাবি না করায় টাকাটা আনা মুশকিল হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের আইন, সিঙ্গাপুরের আইন ও মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স আইন খতিয়ে দেখছি কীভাবে টাকাটা আনা যায়। যদিও আমরা ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর সরকারকে বলেছি এ টাকাগুলো আমাদের দেশের। কিন্তু শুধু মুখে বললেই তো হবে না, তারা এর সপক্ষে কিছু কাগজপত্র চায়।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দেশের টাকা যদি অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয় অবশ্যই তা ফেরত আনতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। রাষ্ট্রের টাকা কোথাও যদি পাচার হয় তাহলে অবশ্যই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। রাষ্ট্র এবং জনগণের টাকা ফেরত আনা হবে। একই সঙ্গে এ টাকা পাচারে যুক্তদের খুঁজে বের করা হবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফএফআই) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা দীর্ঘ ও জটিল বিষয়। অর্থ পাচারের ব্যাপারে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেতে হবে এবং তিনি যেখানে পাচার করেছেন সেখান থেকে যে কোনো মাধ্যমে সঠিক তথ্যটি পেতে হবে।

পাচার যে দেশে হয়েছে সেখানকার তথ্য পাওয়ার পর দুদেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট পারস্পারিক তথ্য বিনিময় করবে। কিন্তু এসব গোপন তথ্য আদালতে দেওয়া যায় না। তাই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের অনুরোধ করতে হয়। সেটা দিয়ে আদালতে উপস্থাপনের মতো করে তথ্য আনতে হয়।

তিনি বলেন, ওই অনুরোধের পর পাওয়া তথ্য আদালতে উপস্থাপন করে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ ফ্রিজ বা জব্দ করাতে হয় এবং সেটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে পাঠিয়ে সেখানকার আদালতেও ফ্রিজ বা জব্দ করাতে হয়। আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, এ পর্যায় পর্যন্ত গেলে পাচার করা অর্থ আনার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!