• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশ বছর পর ঈদে স্বস্তিতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা


নিজস্ব প্রতিনিধি মে ১১, ২০২১, ০৯:৫২ পিএম
দশ বছর পর ঈদে স্বস্তিতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: সরকার ঘোষিত লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মধ্যে দেশের দুই বাজারে এক মাসের বেশি সময় ধরে সূচক ও লেনদেন টানা ঊর্ধ্বমূখী। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচক ৫৭০০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। 

ঈদের আগে দেশের শেয়ারবাজারে চাঙাভাব স্বস্তি এনে দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনে। গত দশ বছরে এই প্রথম কোন ঈদে স্বস্তিতে রয়েছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক থাকলেও পুঁজিবাজার রয়েছে সম্পূর্ণ ইতিবাচক।

বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমান কমিশনের সঠিক ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা ফিরে এসেছে। ফলে বাজারে চাঙাভাব রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরো উৎসাহিত হবে বিনিয়োগে। একই সাথে বর্তমান কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশের শেয়ারবাজার আরও বড় হবে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান বাড়বে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অনেক দিনপর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। বর্তমান কমিশন বাজার নিয়ে অনেক চেষ্টা করছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।করোনাকালীন সময়ে অন্য কোন জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ না থাকায় মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে।

লকডাউনের মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারবাজার মূলধন বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা কাটিয়ে বাজার স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত এক মাসে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ৬০০ পয়েন্টের বেশি।

দৈনিক লেনদেনের গড়হারও দেখা গেছে, মার্চ মাসে ছিল ৪০০ কোটি টাকার নিচে। যা গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে হয়েছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি। ডিএসইতে এই সময় এক দিনে ১৪০০ কোটি টাকাও লেনদেন ছাড়িয়েছে। যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজার মূলধন এই এক মাসে বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিলের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। যা সর্বশেষ রবিবার পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

মঙ্গলবার (১১ মে) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার অংকে ১৪০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৬২ টি কোম্পানির মধ্যে ২১৮ টি কোম্পানিরই শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জানা গেছে, আগের কার্যদিবসের চেয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যা গত সাড়ে ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগের চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি সূচক ৫৭২৪ পয়েন্টে অবস্থান করেছিল।

এবিষয়ে ঢাক স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, বহুবছর পর বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে ঈদ করতে পারবে। আমি সব সময় বিনিয়োগকারীদেরকে বলি মৌলিক শেয়ারে বিনিয়োগ করতে। অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের শেয়ারবাজার অনেক দূর যাবে। তাই আমি বিনিয়োগকারীদেরকে বলি সঞ্চিত অর্থের পুড়োটা ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ না করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করতে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের শেয়ারবাজার ভালো থাকার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ বিনিয়োগকারীদের। কারণ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি উন্নত বাজার উপহার দিতে, আমাদের চেষ্টায় আস্থা রেখেছে বিনিয়োগকারীগন। যার ফলে বাজার ইতিবাচক রয়েছে। এটা মাত্র শুরু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং বাজারের স্বার্থে বর্তমান কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, আজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩৫ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৬৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৮৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬৫টির আর ৪৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে প্রথম দিনও উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে যেসব খাতের কোম্পানির শেয়ার দর কমার পরিমাণ বেশি সেসব খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দরও বেড়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেক্সটাইল উল্লেখযোগ্য। তবে এই সময় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানির শেয়ার দর। অনেক ব্যাংকের শেয়ার দর গত কয়েক বছর ধরে ফেসভ্যালু ১০ টাকার কাছাকাছি ছিল। কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ার দর ১০ টাকার নিচে ছিল। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি ফেসভ্যালুর নিচে থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর ১৫ টাকার ওপরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর ৫৮ টাকা ৩০ পয়সা। একই অবস্থা আর্থিক খাত ও বিমা কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে। এবার সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এভাবে বেশির ভাগ খাতের কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এতে বেড়েছে বাজার মূলধনের পরিমাণ।

সোনালীনিউজ/আরএইচ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!