• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আগের মতো বিদেশে অর্থ পাচার হয় না’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৮, ২০২১, ১২:০০ পিএম
‘আগের মতো বিদেশে অর্থ পাচার হয় না’

ফাইল ছবি

ঢাকা : বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার নিয়ে সম্পূরক বাজেট পাসের আগে সাধারণ আলোচনায় বিএনপি এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

সোমবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য ১৩ হাজার ৯৮৭  কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাসের সময় দুর্নীতি ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সমালোচনামুখর হন তারা।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে। বিদেশে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ জানেন কত টাকা বিদেশে গেছে!’

তিনি আরো বলেন, ‘সংসদে ঋণখেলাপির তালিকা দেওয়া হলো। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো?’
 
এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব সঠিক হলেও কর্তৃত্ব দুর্বল। ব্যাংকগুলোর ওপর তার কর্তৃত্ব নেই। ফলে এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছে। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাচ্ছে।’ 

বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা জিরো টলারেন্স। অর্থমন্ত্রী বলেছেন অপ্রদর্শিত আয় নিয়ে। এটা সাংঘর্ষিক। দুর্নীতি, মাদক, অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বিত্ত গড়ে তুললে তাকে সুযোগ দিয়ে ন্যায় করা হবে না।’
 
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্যাতিত এতিমদের মতো। দেখার কেউ নেই। লুটপাট হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। কিছুই হয় না। শাস্তি হয় না।’ তীব্র সমালোচনার মুখে অর্থ পাচারের কথা মেনে নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন আর তেমন নেই। এখনো অনেকেই জেলে আছেন। বিচার হচ্ছে।’ 

তবে বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে কারা জড়িত তা তিনি জানেন না উল্লেখ করে বলেন, ‘বিদেশে কারা টাকা নিয়ে যায় তা আমার জানা নেই। লিস্ট আমার কাছে নেই। আপনারা নামগুলো আমাদের দেন। কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে।’ 

মন্ত্রী অনিয়ম বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আগামী ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ১৫টি আইন দেখতে পাবেন এগুলো বন্ধ করার জন্য।’ তিনি অর্থ পাচারের জন্য অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অকার্যকর সিস্টেমকে দায়ী করে বলেন, ‘আমরা সংস্কারমুখী কাজ করব। নতুন নতুন আইন করব। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। কোনো টলারেন্স নেই এখানে।’ 

উল্লেখ্য, গত ২ মে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে (২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত) দেশের বাইরে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ২০১৪ সালেই প্রায় ৭৩ হাজার টাকা (৯১১ কোটি ডলার) পাচার হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। প্রতিবেদনে অর্থ পাচারের মাধ্যম হিসেবে প্রধানত আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ভয়েস এবং ওভার ভয়েসকে চিহ্নিত করা হয়। 

এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২১’ গতকাল (৭ জুন) সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের থেকে অতিরিক্ত খরচ করেছে, সেটার অনুমোদন নিতেই সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়।

সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের ১১ জন সংসদ সদস্য ১৯০টি ছাঁটাই প্রস্তাব দিলেও তা কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান; বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশারফ হোসেন; গণফেরামের মোকাব্বির খান, স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ১৯টি মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।

চলতি অর্থবছরের (২০২০-২০২১) মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ১৯টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪২ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা হ্রাস পেয়েছে।

সার্বিকভাবে ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত নিট বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।

সম্পূরক বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ১২৬টি চলমান এবং ৩১টি নতুন প্রকল্পে অর্থের সংস্থান করায় এ অতিরিক্ত বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

আর সবচেয়ে কম ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। এ বিভাগের ১২টি চলমান প্রকল্পের অর্থের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দরকার।

গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে পেশ হয় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে যার আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায়।

সম্পূরক বিল পাস হওয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!