• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ক্ষতির মুখে বিনিয়োগকারীরা

কারণ ছাড়াই বাড়ছে লোকসানী সেন্ট্রাল ফার্মার দর


নিজস্ব প্রতিনিধি আগস্ট ৫, ২০২১, ১২:১৮ পিএম
কারণ ছাড়াই বাড়ছে লোকসানী সেন্ট্রাল ফার্মার দর

ফাইল ছবি

ঢাকা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ-রসায়ন খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মা লিমিটেডের পুঞ্জিভূত লোকসান বাড়লেও শেয়ার দর বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। 

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়া এই কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিটি পক্ষ থেকে ২ আগস্ট জানানো হয়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ার দর এভাবে বাড়ছে। 

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত ২৫ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৪ টাকা ৭০ পয়সা । বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার দর ২০ টাকা ৬০ পয়সায়  উন্নীত হয়।
কোম্পানিটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার লেনদেন চলাকালীন সময় কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বেড়ে হল্টেড হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির পর্ষদের পরিচালকরা আলাদাভাবে তাদের ধারণ করা শেয়ার আলিফ গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর যেখানে কোম্পানির শীর্ষ ৫ পরিচালকের (চেয়ারম্যান মোরশেদা আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আহমেদ, মো. রোকনুজ্জামান, নাসিমা আকতার এবং পারভেজ আহমেদ ভুইয়া) শেয়ার কিনতে চেয়েছিল আলিফ গ্রুপ। যাদের হাতে কোম্পানিটির মোট ৩০ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার ছিল। এর ৩ দিন পরে কোম্পানি ২টির মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি সই হয়।

বছরের শেষ দিকে কোম্পানিটি জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার বিক্রি না হওয়ার কারণে উভয় পক্ষ এই চুক্তি বাতিল হয়। 

এ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হয়। 

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেধে দেয়া নিয়মও মানছে না কোম্পানিটি। কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিধান থাকলেও সেন্ট্রাল ফার্মার পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ২৫.৮৯ শতাংশ শেয়ার। 

সেন্ট্রাল ফার্মার নিরীক্ষক খোদ তাদের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে। নিরীক্ষকের মতে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৮ কোটি ২২ লাখ টাকার মজুদ পণ্য হিসাব থেকে বাদ (রিটেন অফ) দিয়েছে। ওই পরিমাণ মজুদ পণ্য ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে। যা আর্থিক হিসাবে বিক্রিত পণ্যের ব্যয় (কস্ট অফ গুডস সোল্ড) হিসাবে দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এর আগের অর্থবছরের নীরিক্ষায় কোম্পানিটির ক্রয়, উৎপাদন সক্ষমতা, বিক্রিত পণ্যের ব্যয় ও বিক্রির তুলনায় মজুদ পণ্যের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছিল বলে নিরীক্ষক জানিয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সেন্ট্রাল ফার্মা কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা ৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা হিসাব থেকে বাদ দিয়েছে। তবে সাপোর্টিং কোন প্রমাণাদি দিতে পারেনি। কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের দাবি, ওইসব পাওনা টাকা দীর্ঘদিনের, দোকানদার ও মেডিক্যাল অফিসারদের পাওয়া যাচ্ছে না এবং মেয়াদাত্তীর্ণ পণ্য ফেরতের কারনে এমনটি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত হিসাব বা সাপোর্টিং কোন কিছু সরবরাহ করা হয়নি।

বিগত অর্থবছরের (২০১৮-১৯) নিরীক্ষায় পর্যবেক্ষনের কথা উল্লেখ করে নিরীক্ষক জানিয়েছে, প্রতিবছর দেনাদার বেড়েছে। তবে কোন কোন বিক্রিয় কেন্দ্র বা পার্টির কারনে দেনাদার বেড়েছে, তার কোন রিপোর্ট ও নিশ্চয়তার সনদ দেয়নি।

নিরীক্ষক জানিয়েছে, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে ৩২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবের নোট ২১-এ উল্লেখ করা হলেও সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ তার কোন প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। এছাড়া ১৪ কোটি ১ লাখ টাকার নিট বিক্রয়, ৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার কাচাঁমাল ক্রয় এবং ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্যাকিং ম্যাটেরিয়াল ক্রয়ের প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি।

এদিকে করোনা চলাকালীন সময় ওষুধ খাতের অন্যান্য কোম্পানির অবস্থা ভালো থাকলেও সেন্ট্রাল ফার্মায় রয়েছে বিপরীত চিত্র। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়েছে ০.১০ টাকা।

৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরে সেন্ট্রাল ফার্মা শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। এসময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৯ টাকা ২৪ পয়সা আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা।

অন্যদিকে কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এমন দূর্বল কোম্পানির শেয়ার দর আকাশচুম্বী হচ্ছে, আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না জেনে বিনিয়োগ করে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। 

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দ্রুত পদক্ষেপ নিবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। তবে বিনিয়োগকারীদের জেনে-শুনে বিনিয়োগ করার পরমর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। 

সোনালীনিউজ/এলএ

Wordbridge School
Link copied!