• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২২, ২০২২, ০৮:২৪ পিএম
চীনে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে

ঢাকা:  বাংলাদেশের বড় বিনিয়োগ নির্ভর অন্যতম দেশ চীন। দেশটির সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যাপকতা বহুমাত্রিক।

বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রধানত আমদানি নির্ভর হলেও তৈরী পোষাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যের কাঁচামালের অন্যতম যোগানদাতা চীন। 

ওপরদিকে চীনের বাজারে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। এগুলো হলো- জুট বাস্ট ফাইবার, ওভেন গার্মেন্টস, নীটওয়্যার, চামড়া, আয়রন এন্ড স্টীল, হিউম্যান হেয়ার, এডিবল অ্যাকোয়েটিক এনিমলস/ফিস এন্ড ক্রাস্টাসেনস ফুটওয়্যার ইত্যাদি। 

এর মধ্যে অন্যতম চামড়াজাত পণ্য। করোনার আগে চীনে চামড়া রপ্তানির অবস্থান ভালো থাকলেও বর্তমানে এর অবস্থান মন্দার দিকে। চীনে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার সম্পর্কে সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায় বিগত কয়েক বছরে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কর্মাশিয়াল উইং এ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের বাজারে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের বাংলাদেশের রপ্তানি চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চীনে চামড়া পণ্যের গড় রপ্তানি হয় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর বছর ২০২০ সালকে বাদ দিলে চামড়া পণ্যের সর্বোচ্চ রপ্তানি হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যা ৭৬.৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন রপ্তানি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত চীনে চামড়া রপ্তানি হয় ৫৩.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গড় রপ্তানির চেয়ে বেশি।

বিগত ১০ বছরে চীনে শুধু চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চামড়াজাত পণ্যের সর্বোচ্চ রপ্তানি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ১৪৪.৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে চীনে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেতে শুরু করে এবং সর্বনিম্ন রপ্তানি হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ২.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানি তথ্য অনুযায়ী চীনের বাজারে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বিগত কয়েক বছরে হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া চীনে ফুটওয়্যার পণ্যের সর্বোচ্চ রপ্তানি হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ৩৩.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সর্বনিম্ন রপ্তানি হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা ১২.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিগত ১০ বছরে চীনে ফুটওয়্যার পণ্যের গড় রপ্তানি হয় ১৬.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত চীনে ফুটওয়্যার রপ্তানি হয় ১৩.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কর্মাশিয়াল উইং বলছে- রপ্তানি তথ্য পর্যালোচানায় প্রতীয়মান হয় যে, চীনের বাজারে বাংলাদেশীয় ফুটওয়্যার পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

বর্তমানে চীন চামড়া আমদানি করে থাকে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও কোরিয়া থেকে। বাংলাদেশের চামড়ার আকার অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু ওইসকল দেশের চামড়ার সাইজ বড় এবং মেশিনের মাধ্যমে পশুর শরীর থেকে পৃথক করা হয় বলে তা চীনা ক্রেতাগণ লাভজনক মনে করে। এছাড়াও চীনা ক্রেতাগণ প্রতিযোগীতার বাজারে গুনগত মানসম্পন্ন এবং বেশি মূল্য মানের চামড়া বাংলাদেশ থেকে আমদানির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইটালী এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনতেই বেশি আগ্রহী। 

অপরদিকে, বিগত কয়েক বছরে কিছু বিশ্বমানের লেদার কোম্পানি বাংলাদেশিয় চামড়াজাত পণ্যের কারখানার সাথে যৌথভাবে লেদার প্রোডাক্টস উৎপাদন করায় চামড়ার চাহিদা বৈশ্বিক বাজারের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে।

বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে কর্মাশিয়াল উইং। তারা বলছে, চীনসহ বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি চামড়ার রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের শহর এবং গ্রাম এলাকায় সুবিধামত একাধিক নির্ধারিত সেন্টারিং সেন্টার স্থাপন করে মেশিনের সাহায্যে এবং এ কাজে দক্ষ জনবল দিয়ে জবাইকৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া পৃথক করতে হবে। তাহলে চামড়ার গুনগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং চামড়ার গ্রেড উন্নত মানের (এ থেকে ডি) হবে যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

চীনের স্থানীয় উৎপাদনকারীরা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বা সমমূল্যে অধিকতর ফিনিশড প্রোডাক্ট বাজারে সরবরাহ করতে পারায় বাংলাদেশ থেকে একই মূল্যে চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার আমদানীতে উৎসাহী নয়। অপরদিকে, চীনা আমদানীকারকদের অফারকৃত মূল্যের চেয়ে গুণগত স্টান্ডার্ড এর রিকোয়ারমেন্ট বেশি হওয়ায় বাংলাদেশী কিছু রপ্তানীকারকগণ চীনে রপ্তানিতে খুব আগ্রহী হয় না। 

কিন্তু বিশ্বমানের ব্র্যান্ডেড পণ্যসমূহের চাহিদা চীনে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডসমূহের আউটলেট নেই। এজন্য চীনের বাজারে বাংলাদেশি উন্নত মানের চামড়াজাত পণ্য এবং ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডসমূহের আউটলেট স্থাপন করে এজেন্টের মাধ্যমে মার্কেটিং, প্রোমোশন, এডভারটাইজমেন্ট এর মাধ্যমে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানির সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

সোনালীনিউজ/এআর

Wordbridge School
Link copied!