• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষিকা মাহমুদা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০৫:৩২ পিএম
প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষিকা মাহমুদা

ঢাকা: করোনার সময়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা বাসায় বন্দি, পড়াশোনা থেকে বলতে গেলে প্রায় বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সময় তো আর থেমে থাকছে না। কীভাবে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে পড়াশোনাতে আগ্রহী করা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদা আক্তার মিষ্টি। 

শিক্ষার্থীদের মূল‌্যবান সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার উপায় খুঁজতে থাকেন তিনি। একদিন বিষয়টি তিনি ফুলবাড়ীর দেশসেরা তেতাল্লিশের শিক্ষক শিরিন বকুলকে জানান। তিনি মাহমুদাকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন‌্য পরামর্শ দেন। বিষয়টা মাহমুদা আক্তারের ভাল লাগে কিন্তু প্রথমে তিনি এই বিষয়ে নার্ভাস ছিলেন।

কীভাবে কী করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। তারপর একদিন সাহস করে পঞ্চম শ্রেণির গণিত বিষয়ে একটা ভিডিও করে ফেলেন। একাজে তাকে সহযোগিতা করে তার মেয়ে রিফা। সেই যে শুরু এরপর আর থেমে থাকেননি মাহমুদা। একের পর এক অনলাইনে ক্লাস নিয়ে চলেছেন তিনি। তার অনলাইন ক্লাস উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 
অভিভাবক নাজমা ফারুকী বলেন, ‘আমার মেয়ে অনন্যা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। করোনার সময় ঘরে বন্দি থেকে সে খুব অস্থির হয়ে উঠেছিল। পড়াশোনা তো করতেই চাইতো না। একদিন জানতে পারি অনলাইনে মিষ্টি আপা ক্লাস নিচ্ছেন। এরপর মেয়েকে সেই ক্লাসে যুক্ত করি। অনলাইন ক্লাসে গণিত, ইংরেজিসহ সকল বিষয় আমার মেয়ে পড়ে। এখানে খুব সহজ করে সব বিষয় বোঝানো হয়।’ 
আড়ানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. আফিফা তাবাসসুম বলে, ‘মিষ্টি আপার অনলাইনে ক্লাস করতে আমার খুব ভালো লাগে। তিনি খুব সুন্দর করে প্রতিটি বিষয় বুঝিয়ে দেন। এরপরেও যদি কোনো বিষয়ে সমস‌্যা হয় তো আমি ফোন করে তার সমাধান জেনে নেই। এ কাজে আমার বাবা আমাকে সহায়তা করেন।’ 

এ বিষয়ে মাহমুদা আক্তার মিষ্টি জানান, প্রথমে আমি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, সমাজ, বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান এবং ধর্ম ফোনে হোমওয়ার্ক দিতাম। ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পড়া সকলের ফোনে মেসেঞ্জারে দিতাম। যেগুলো হোমওয়ার্ক দিতাম, শিক্ষার্থীরা ঠিক ওভাবেই সেগুলো ফলো করতো। যেসব পড়া তাদের সমস্যা মনে হতো, সেগুলোর ছবি তুলে ফোনে আমাকে পাঠিয়ে দিত।

আমি সেগুলোর সমাধান করে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতাম। হোমওয়ার্কগুলো যখন ফেসবুকের টাইমলাইনে দিতে শুরু করলাম, আমি লক্ষ্য করলাম আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এরপর আমি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্লাস নিয়েছি। এ বিষয়ে ব‌্যাপক সাড়া পাচ্ছি যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’ 

প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ের এই শিক্ষক আরও জানান, এই কাজে ফুলবাড়ীর শিক্ষক শিরিন বকুল আপা, ফরিদপুরের সুমনা রায় রিপা দি, বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেজের প্রতিষ্ঠাতা কিশোরগঞ্জের অসীম কুমার সেন স্যার আমাকে উৎসাহ দিতেন। তাদের উৎসাহে আমি সাহস পাই। এরপর আমি বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজে লাইভ ক্লাস নেই। সেখানে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে সাড়া পেয়েছি তাতে আমি বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমার বিশ্বাস ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এই ক্লাসগুলো থেকে উপকৃত হবে।’ অনলাইন স্কুলে পাঠদানে তিনি বেশ কয়েকটি সার্টিফিকেটও পেয়েছেন যা তার কাছে মূল্যবান বলেও জানান এই মেধাবী শিক্ষক। 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা জানান, করোনাকালে শিক্ষক মাহমুদা আক্তারের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি বেশ সময়পোযগী। অল্প সময়ে তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার সাফল‌্য কামনা করি।

সূত্র-বাংলাকথা

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!