• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক হত্যার জেরে কুয়েট বন্ধ ঘোষণা


কুয়েট প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩, ২০২১, ০১:৫১ পিএম
শিক্ষক হত্যার জেরে কুয়েট বন্ধ ঘোষণা

ছবি : সংগৃহীত

খুলনা : অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জেরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। গত ৩০ নভেম্বর ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর সাক্ষাতের পর ড. সেলিমের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ক্যাম্পাসের বাসার টয়লেটে অচেতন হয়ে পড়ার পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীর লাঞ্ছনার পর মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে। পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

অভিযোগ উঠেছে, ওই সাক্ষাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং মানসিক নির্যাতন চালান। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার কমিটির দুই সদস্য দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ড. সেলিম কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। 

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমবেত হন কুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বেলা সোয়া ১১টায় তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

পরে ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস। এ সময় শিক্ষক ড. সেলিমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

অপর দাবিগুলো হলো— ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং শিক্ষকের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. সজল কুমার অধিকারী বলেন, শিক্ষক সেলিমের মৃত্যু একটি সম্ভাবনার মৃত্যু।

এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের মূলোৎপাটন করতে হবে। প্রফেসর ড. মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সেসব মানসিক নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী ছাত্রদের স্থায়ীভাবে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার ও শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও প্রশাসনিক ভবনের ভেতরের ফাঁকা অংশে অবস্থান শুরু করেন। সেখানে দুপুর ২টার দিকে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সেলিম স্যারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।

তার সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার বা মানসিক চাপ দিইনি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি লালন শাহ হলের ডিসেম্বরের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান নিজের লোককে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য শিক্ষক সেলিমকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিমকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তী সময় তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান করে। পরে শিক্ষক ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাসায় যান। সেখানে দুপুর ২টার দিকে টয়লেটে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কুয়েট সূত্র জানায়, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে কমিটির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে কমিটিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বিকাল ৪টায় জরুরি সিন্ডিকেটের সভা আহ্বান করেন। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা মুলতবি করা হয়। আজ সকাল ১০টায় আবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/এমএস

Wordbridge School
Link copied!