• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাকৃবিতে স্মার্ট সিটি, বুয়েটে স্মার্ট ভিলেজের পাইলটিং


নিজস্ব প্রতিবেদক  অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৬:৩৯ পিএম
বাকৃবিতে স্মার্ট সিটি, বুয়েটে স্মার্ট ভিলেজের পাইলটিং

ঢাকা: ডিজিটাল বাংলাদেশে স্মার্ট ভিলেজ ও স্মার্ট সিটি গঠনের কাজ করছে সরকার। এই কাজে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্মার্ট ভিলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাসে স্মার্ট সিটির পাইলটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এটি বাস্তবায়ন করবে। গত ১লা আগস্ট রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটোরিয়ামে সোমবার ‘ভিশন ২০৪১: বিল্ডিং স্মার্ট সিটি অ্যান্ড স্মার্ট ভিলেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের কর্মশালায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর সভাপতিত্বে কর্মশালাটিতে মডারেটর ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান এবং সংশ্লিষ্ট খাতের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা।

কর্মশালার শুরুতে স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ নির্মাণে নকিয়া বেল ল্যাবস-এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশে স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলাদা দুটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বাংলাদেশে নকিয়ার কান্ট্রি হেড মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আরবানাইজেশন এর ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি শহরের ২৫% ট্রান্সপোর্ট কমিউনিকেশনের জন্য ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ৭% ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ার সাথে সাথে মানুষ ঢাকামুখী হবে এবং এর কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাতেও এর প্রভাব পড়বে। গ্রামাঞ্চলেও গাড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সেখানেও আধুনিক রাস্তার দরকার হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত হব এবং প্রবলেম সলভ করতে করতে সূত্র শিখবে। অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন ও সক্রিয় শিখনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যা কিছু করবে সেটা প্রয়োগ করতে শিখবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নিতে নতুন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন শিখন পদ্ধতিতে অভ্যস্ততা তৈরী করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রিসার্স এবং ইনোভেশনের একটা কালচার তৈরী করতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নাগরিকদের কম খরচে দ্রুতাতর সময়ের মধ্যে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্মার্ট ভিলেজ এবং স্মার্ট সিটি তৈরীর মহাড়ক হচ্ছে ডিজিটাল কানেকটিভিটি। ডিজিটালাইজেশন এর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সার-সেচসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইওটি ব্যবহারের সুযোগ তৈরী হচ্ছে। সব ধরনের ইনোভেমনের পেটেন্ট নিশ্চিতকরণসহ বাণিজ্যিকীকরণ করা প্রয়োজন।

মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সবার ঢাকা অ্যাপসের মাধ্যমে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৭৬৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ‘ডিএনসিসিতে ৪৮ হাজার স্মার্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে যা মোবাইল ফোন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব লাইটের আলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হচ্ছে। অনলাইনে ট্যাক্স আদায় শুরু করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে এক লক্ষ ২৮ হাজার বাসা-বাড়িকে সার্ভের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটি’র মাধ্যমে দুই হাজার ৩৫০টি স্থানে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নাগরিক সেবার সব কার্যক্রমকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩ এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে এর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।

বুয়েট এর ভিসি প্রফেসর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বুয়েট-এ এরই মধ্যে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নয়নের জন্য এগ্রিকালচার, পাওয়ার ও অন্যান্য সেক্টরের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট এগ্রিকালচার তৈরিতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করছে। স্মার্ট ভিলেজের অন্যতম উপাদান স্মার্ট এগ্রিকালচার। স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য আইওটি ডিভাইস ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, স্মার্ট এগ্রিকালচারের জন্য ন্যানো টেকনোলজি এবং এআই ব্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক কতটুকু সার ও ওষুধ দেওয়া লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। প্রযুক্তি ব্যবহারে আগামী দুই বছরে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে। উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদের মাধ্যমে আগামীতে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়াবে। ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এবং আমদানি না করতে হলে আমাদেরকে কোনো দুঃচিন্তা করতে হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালা থেকে পাওয়া সংশ্লিষ্টদের সুচিন্তিত মতামত, উপদেশ ও সুপারিশ ভবিষ্যতে আমাদের পথ দেখাবে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সর্পোটেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনিং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং ও সাইবার সিকিউরিটি এই চারটি প্রযুক্তিতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।

কর্মশালায় ৫টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বাস্তবায়ন করবে। স্মার্টসিটি ও স্মাট ভিলেজ এর পাইলটিংসহ বাকী সিদ্ধান্তগুলো হলো, বেসিস এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এবং নোকিয়া বেল ল্যাবস সহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে নলেজ শেয়ারিং অব্যহত রাখার মাধ্যমে স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজের পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের সুবিধার্থে ইন্টারনেট সেবা/কানেক্টিভিটি বিস্তৃতির বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, আএসপি প্রতিষ্ঠান এবং টেলিযোগাযোগ কোম্পানি, এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এর সাথে সমন্বিত উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয়ভাবে ফোর হুইলার ইলেক্ট্রিক গাড়ী ও ব্যবহারের সম্ভব্যতা যাচাইপূর্বক চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরীর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ইলেক্ট্রিক ভেক্যাল চার্জিং ইকো সিস্টেম তৈরির বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নে স্মার্ট এগ্রিকালচার, স্মার্ট ইউটিলিটি, স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানজেমেন্ট, স্মার্ট হেলথ সার্ভিস, স্মার্ট এডুকেশন ইত্যাদি কম্পোনেন্টগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!