• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী


বিনোদন ডেস্ক অক্টোবর ২৯, ২০২০, ০১:৩৩ পিএম
বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী

ঢাকা: বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯১৭ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান। হীরালাল ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রগ্রাহক, যাকে সাধারণত ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন বলে গণ্য করা হয়।

এছাড়া তিনি ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপনবিষয়ক চলচ্চিত্রের নির্মাতা। এমনকি ভারতের প্রথম রাজনীতিক চলচ্চিত্রও তিনিই বানিয়েছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত তখনকার ব্রিটিশ-শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশের তথা বিশ্ব চলচ্চিত্র ইতিহাসের বিস্মৃতপ্রায় কিন্তু অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়ের রচয়িতা ছিলেন বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার বকজুরি গ্রামের সমত্মান হীরালাল সেন। হীরালাল সেন শুধু অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশেরই নন, সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা অঞ্চলেরও প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রকার।

তবে দুঃখের বিষয় ১৯১৭ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে তার তৈরি সকল চলচ্চিত্র নষ্ট হয়ে যায়।

হীরালাল সেনের জন্ম ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে। তার পিতার নাম চন্দ্রমোহন সেন, মাতা বিধুমুখী। পিতামহ গোকুলকৃষ্ণ মুনশি ছিলেন ঢাকার জজ আদালতের নামকরা আইনজীবী। পরে তিনি কোলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসাবে যোগ দেন। পিতা মাতার আট সন্তানের মধ্যে হীরালাল ছিলেন দ্বিতীয়। মানিকগঞ্জ মাইনর স্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। একই সঙ্গে মৌলভী সাহেবের কাছে ফারসী ভাষাও শিখতেন। ১৮৭৯ সালে মাইনর পরীক্ষা পাস করে ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। পরে বাবার সঙ্গে হীরালাল কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন। আই.এস.সি. অধ্যয়ন কালে চলচ্চিত্রের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় যবনিকাপাত ঘটে।

হীরালাল সেনের আদি বাড়ি ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়। যদিও তিনি সেই এলাকার এক জমিদার বংশের এক উকিলের ছেলে ছিলেন, তার শৈশব কেটেছিল কলকাতাতেই। ১৮৯৮ সালে, প্যারিসের ‘পাথে ফ্রেরেস স্টুডিও’র সদস্য অধ্যপক স্টিভেনসনের একটি নাতিদীর্ঘ সিনেমা কলকাতার স্টার থিয়েটারে দেখানো হয়, The Flower of Persia (পারস্যের ফুল) নামে একটি অপেরার সঙ্গে। স্টিভেনসনের ক্যামেরা ধার করে নিয়ে হীরালাল বানান তার প্রথম সিনেমা- ‘A Dancing Scene From the Opera, The Flower of Persia’। যা অপেরার একটি নাচের দৃশ্য নিয়ে তৈরি। ভাই মতিলাল সেনের সাহায্যে লন্ডনের ওয়ারউইক ট্রেডিং কম্পানীর চার্লস আরবানের থেকে তিনি একটি ‘Urban Bioscope’ কিনে নেন। পরের বছর তিনি ভাইয়ের সঙ্গে রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানীর গোড়াপত্তন করেন।

হীরালাল সেনের সৃষ্টিশীল কর্মজীবন ব্যাপ্ত ছিল ১৯১৩ অবধি, যার মধ্যে তিনি চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। বেশিরভাগ সিনেমাতেই তিনি ক্যামেরাবদ্ধ করেন অমরেন্দ্রনাথ দত্তের কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে মঞ্চস্থ বিভিন্ন থিয়েটারের দৃশ্য। সেই যুগে ব্যবহারযোগ্য ফিল্ম আনা হত বিদেশ থেকে। ১৯০১ আর ১৯০৪-এর মধ্যে ক্লাসিক থিয়েটারের পক্ষে তিনি অনেকগুলো সিনেমা নির্মাণ করেন।

চলচ্চিত্র-গবেষক সৈকত আসগর, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, কালীশ মুখোপাধ্যায়, সজল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের গবেষণামূলক কাজের তথ্য-উপাত্ত থেকে এ পর্যন্ত হীরালাল সেন-নির্মিত বিজ্ঞাপনচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য, রাজনৈতিক চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র সব মিলিয়ে মোট পঞ্চান্নটি চলচ্চিত্রের নাম উদ্ধার করা গেছে।

মোটকথা হীরালাল সেনের হাত ধরেই বাংলা সিনেমাতে গল্প বলা শুরু, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প-অবলম্বনে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ভ্যাগাবন্ড (১৯০৯) নামক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। 

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!