• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তপু গেল হারিয়ে


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১৩, ২০২১, ০৮:০১ পিএম
তপু গেল হারিয়ে

ঢাকা: তপু ৭ম শ্রেনির ছাত্র। বার্ষিক পরিক্ষা শেষ। ইচ্ছা গ্রামের বাড়ীতে ঘুরতে যাবে। কিন্তু বাবা নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই বললেই চলে। তপুর মার সাথে তার খুব মিল। একদিন মাও তপু মিলে একটি ফন্দি আটলো। মা বাবার জন্য বাবার পছহন্দের খাবার রান্না করল। বাবার পছন্দের খাবার গলদা চিংড়ি। বাবার পছন্দের খাবার দেখে জিবে জল চলে আসে। বাবার পছন্দের খাবার সামনে পেলে বাবার কাছে যদি চাঁদে যাওয়ার আবদার করে তা হলেও নিয়ে যাবে। খাওয়া দাওয়া শেষ তপু বলল “বাবা পরীক্ষা শেষ পড়ালিখা শেষ ঘরে বসে থেকে ভালো লাগছেনা, চলনা গ্রামের বাড়ি যাই।”

বাবা গম্ভীর ভাবে থেকে কতক্ষণ পর হাসিমুখে বলল“ঠিক আছে যাব”। তপুরতো খুশির আর শেষ নেই।পরের দিন বিকাল ৫.৩০ ট্রেনে তপু তার বাবা মার সাথে গ্রামে যাবে। তপুর গ্রামের বাড়ি বান্দরবন। তপুর বাবা আজ অফিস থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়ে বাসায় তারাতারি চলে আসে। মা পথে খাওয়ার জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে নিচ্ছে।তপু তার ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। তার বাবা মাও ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। তপু, মা ও বাবা সবাই পরিপাটি হয়ে তৈরি হয়ে গেল। 

৪.৩০ বাজে তপুরা বের হয়ে গেল বাসা থেকে। তপুর বাসা রেলস্টেশনের কাছে। তপুরা ১৫ মিনিট আগেই স্টেশনে পৌঁছেগেছে। সেখানে টুল এর মধ্যে একটি লোক বসা। লোকটির পড়নে একটি টুপি, একটি ফুল প্যান্ট ও একটি শার্ট। লোকটাকে একটু রহস্যময় মনে হচ্ছে। লোকটি কি যেন একটি বই পরছিল। হটাত করে তিনি তপুর দিকে তাকালো, তপু ভয় পেয়ে গেল। তপুকে লোকটা কিছু বলতে চাচ্ছিল এমন সময় ট্রেন চলে এলো। বাবা মার সাথে তপু উঠে পরল ট্রেনে। মাঝ পথে তারা কিছু খাবার খেয়ে নিল। পরদিন সন্ধ্যায় তারা বান্দরবন পৌছালো। সেখানে রেলস্টেশনে তপুর কাকা এসেছিল তাদের নিতে। তপু তার কাকাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো “কাকা আপনি ভালো আছেন?” তিনি উত্তর দিলো “হ্যাঁ।” 

সবার সাথে সাক্ষাৎ হল। এরপর তপুরা একটি টেম্পুতে উঠে পরলো বাড়ির উদ্দেশে। তাদের গভীর অন্ধকার জঙ্গল দিয়ে যেতে হয়েছিলো। তাই তপুর একটু ভয় লাগছিল। চারদিকে ঝিঝি পোকা ডাকছিল, শিয়াল ডাকছিল। তপু মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়েছিল। ১০মিনিট পর তারা বাড়িতে পৌঁছে গেল। সেখানে তপুর দাদা, দাদু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। তপু তার দাদা, দাদুকে দেখে দৌড়ে গেল। তপুর দাদু তাদের জন্যসরবত, নাস্তা তৈরি করে রেখেছে। খেতে খেতে তারা অনেক গল্প করেনিলো। সবাই ফ্রেশ হয়ে রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পরল। ভরে তপু ঘুম থেকে উঠে পরে। তপুদের বাড়ির পাশেই একটি বড় মাঠ রয়েছে। সে মাঠে তপু কিছুক্ষণ হাঁটা হাটি করলো। হাঁটতে হাঁটতে তপু বাজারে চলে যায়। তপু ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায়, সে একটি ঠাণ্ডা পানি কিনে খেল। 

তপু বাসায় এসে দেখলো টেবিলে নাস্তা রেডি। সবাই একসাথে নাস্তা করতে বসলো। নাস্তা করতে করতে দাদা বলল “গ্রামে তোমার বয়সী অনেক ছেলে আছে। তুমি তাদের সাথে খেলতে পার।” তপু বলল “ঠিক আছে কিন্তু আমি তাদের কে কোথায় পাবো?” দাদা বলল, “তাদেরকে তুমি নদীর ধাঁরে পেতে পার। তাদের আমিও খানেই দেখি। তারা আমার বাজার এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি জিনিস এর ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করে। 

তপু খাবার শেষ করে চলে যায় নদীর ধাঁরে। সেখানে গিয়ে দেখলো চারটা ছেলে গুটি খেলছে। তারা তপুকে দেখে বলল, “তোমার নামকি?” তপু বলল, “আমার নাম তপু।” তপুও তাদের নাম জিজ্ঞেস করলো। একজন তপুর প্রশ্নের জবাব দিল,“আমার নাম আরিফিন, ওর নাম সামশুল ,ওর নাম সাইফ, আর সবার শেষে যে আছে তার নাম খালেদ। কিন্তু তোমাকে তো আগে এখানে দেখিনি, খালেদ বলল। “তপু উত্তর দিল, “আমি আমার দাদা বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। কাজি বাড়ি আমার দাদা বাড়ি। আমার দাদার নাম আব্দুল বশির।” “ও তুমি বশির চাচার নাতি! তিনি তোমার কথা বলেন প্রায়ই। “তুমি কোথা থেকে এসেছ তপু?”, সাইফ বলল। “আমি ঢাকা থেকে এসেছি।” খালেদ জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কত দিন থাকবে?” “এই ধরো সাত দিন।”
 
সামসুল জিজ্ঞেস করলো, “তুমি ক্রিকেট খেলতে পার?” তপু বলল, হ্যাঁ। খালেদ আরিফিনকে বলল, বেট, বল নিয়ে আয়তো বাড়ি থেকে। আরিফিন বলল, আমি আনব কেন তুই যেয়ে আন। খালেদ বলল, আচ্ছা ঠিক আছে বাবা যাচ্ছি আমিই, তোর আর যেতে হবেনা। ব্যাট, বল নিয়ে এলে সবাই মিলে ক্রিকেট খেলল। খেলা শেষে সবাই একটু বিশ্রাম নিল। তখন তপু বলল, তোমরা কি আমকে গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবে? আরিফিন বলল, হ্যাঁ অবশ্যই। তাহলে আজ ৪.৩০ এ এই যায়গায় চলে এসো সবাই। তপু বলল ঠিকাছে, আমি চলে আসব। 

তপু বাসায় এসে দেখে সবাই রেগে আছে। দাদা বলল তুমি কোথায় ছিলে তপু? তপু বলল তুমি আমাকে যে ছেলেদের কথা বলেছিলে, আমি তাদের সাথে ছিলাম। আমি তাদের সাথে ক্রিকেট খেলেছি, গল্প করেছি, বিকেলে তাদের সাথে ঘুরতে জাব আমি। দাদা বলল, তুমি আমাদের বলে গেলেই হতো। তপুবলল, আমার মনে ছিলনা দাদা। তিনি বললেন ঠিকাছে যাও হাত্মুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নাও। আমরা খেয়ে নিয়েছি। তপু খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে গেল মাঠে। সেখানে সবাই অপেক্ষা করছিল তপুর জন্নে। প্রথমে তারা সবাই বাজারে গেলো। তপু সবাইকে আইস্ক্রিম কিনে দিল এবং আরো কিছু খাবার কিনে নিল। তপু বলল, চলো জঙ্গলে যাই এবং জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কি গিয়েছিলে কখনো জঙ্গলে? সাইফ বলল না। সবাই জঙ্গলে এগুতে থাকে। একসময় তারা বুঝতে পারে যে, তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। তারা যতই চেষ্টা করে ঘুরে ফিরে একই যায়গায় এসে পৌছায়। তপু খুব ভয় পায়। আরিফিন বলল, আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি আর হাঁটতে পারছিনা।

সূর্য ডুবে গেল, অন্ধকার হয়ে আসছে। খালেদ বলল এখন রাত হয়ে যাচ্ছে এখনতো আর হাটাও সম্ভবনা। তপু বললো চলো ওই গাছটার নিছে গিয়ে বসি। তপু বলল আমার খুব খিদে পেয়েছে। আরিফিন বলল আমরও খিদে পেয়েছে। এরপর সবাই চিপস, বিস্কিট খেলো। হঠাৎ গাছের পাতা নরে উঠল। সবাই ভয় পেয়ে গেল। তপু সাহস করে একটা লাঠি নিয়ে গাছের কাছে যেতেই একটা পেঁচা উরে গেল। তারা সবাই একটু শান্ত হল। এদিকে তপুর বাবা-মা খুব চিন্তা করছে। দাদা তপুর বাবাকে সান্তনা দিচ্ছে। আর তপুরা অন্ধকার জঙ্গলে বসে আছে। 

খালেদ বলল চল আমরা আগুন জ্বালাই। তপু বলল কিভাবে, আমদের কাছেতো দিয়াশলাই নেই। খালেদ বলল সমস্যা নেই আমরা পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাব। আরিফিন বলল, তুই কি জানিস কতো কষ্ট আর কতো সময় লাগবে? খালেদ বলল সমস্যা নেই, সবাই কাঠ আর পাথর জোগাড় করে আনলো। খালেদ আগুন জ্বালাল। তপুর দাদা তপুকে খুঁজতে হ্যারিকেন হাতে বেড়িয়ে গেল। দাদা নদীর পাড়, বাজার শব যায়গায় খুঁজে দেখলেন। কিন্তু কথাও না পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে গেলেন। তিনি তপুর বাবাকে বললেন, আমরা সকালে আবার খুঁজতে বের হবো। 

এদিকে তপুর খুব ঘুম আসছে, প্রায় ১১.৩০ বাজে। সবাই একজন আরেক জনের হাতের উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পরল। সকালে তপু ঘুম থেকে উঠে সবাইকে জাগায়। সবাই উঠেই কালরাতের বেচে থাকা কিছু খাবার খেয়ে নেয়। সবাই আবার হাঁটা শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে তারা একটি গুহার সামনে চলে আসে। সেখানে গিয়ে দেখে স্টেশনের সেই টুপি পরা লোকটি। তাকে কে যেন বেঁধে রেখেছে। লোকটি অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। সাইফ বলল তুমিকি তাকে চেন তপু? তপু বলল, হ্যাঁ তাকে আমি স্টেশনে দেখেছিলাম। সামসুল বলল, তাকে আমাদের সাহায্য করা উচিত। তপু বলল, হ্যাঁ কিন্তু যদি আমাদের কনো বিপদ হয়? আরিফিন বলল চলো কিছু হবে না। 

তপু আর সাইফ লোকটার দরি খুলে দিতে যায়। আর সামসুল আর খালেদ তারা দেখছিল কেও আসছে কিনা। তপু দরি হাত দিয়ে খুলতে পারছিল না। পাশেই একটি ছুরি ছিল। ছুরি দিয়ে তপু দরি ক্ষুলে ফেলল। পাশে পরে থাকা জগ এর পানি দিয়ে তপু লোকটির মুখে পানি ছিটিয়ে দিল। লোকটির জ্ঞান ফিরে এলো। খালেদ বলল, একটি লক আসছে। লোকটিকে নিয়ে পালানোর সময় একটা লক তাদেরকে দেখে ফেলে। লোকটা সবাইকে ডেকে আনে। তারা একটি জীপএ করে তপুদেরকে ধাওয়া করে। তপুরা দৌড়ে গিয়ে একটি গাছের আরালে লোকালো। তপু লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো। তারাআপনাকে বেঁধে রেখেছিল কেন? আর আপনার নাম কি? 
আমার নাম ফযলুল হক। আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। আমার কাজ কালো তথ্য সংগ্রহ করা। তাদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম বলে তারা আমকে বেঁধে রেখেছিল। তারা হল ডাকাত। তারা বাংলাদেশ এর নানা অঞ্চল এর বন-জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে বিভিন্ন দেশে অবইধভাবে বিক্রি করে। এখন আমি যাতে তাদের সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতে না পারি, তাই তারা আমকে বেঁধে রেখেছিল। তপু বলল, তাহলে আপনি এখন কি করবেন? আমি এখন ঢাকায় যেতে পারলে পুলিশ এর কাছে তাঁদের সব তথ্য দিতে পারব। আর পুলিশ এর কাছে আমি নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্নে অনুরধ করব। আমি এখন কনোমতে ট্রেন এ উঠতে পারলে ইহল। 

সেই লোকগুলো তপুদের আবার দেখে ফেলে। তপুরা দৌড় দিল। তাঁদের হাতে বন্দুকও ছিল। তপু লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি বন থেকে বের হয়ে যাবার পথজানেন? লোকটি বলল হ্যাঁ। সবাই লোকটার পিছনে দৌড়াতে থাকে। পিছন থেকে খারাপ লোকগুল গুলি ছুড়ল। সামনেই তারা একটি জীপ দেখল। 

খালেদ এর বাবা একজন মেকানিক। তার বাবার বাজারে একটি গ্যারেজ আছে।তাই খালেদ কম বেশি কিছু কাজজানে। খালেদ পকেট থেকে কি যেন একটা বের করে গাড়ি স্টার্ট দিল। তপুরা সবাই উঠে পরল। লোকটি জঙ্গাল থেকে বের হওয়ার রাস্তা ধরে গাড়ি চালানো শুরু করলো। পিছনে খারাপ লোকগুলো গুলি ছুরছিল। হঠাৎ করে একটি হাটিসামনে চলে আসে। তপুরা কনোমতে সাইড কেটে চলে যায়।পিছনে খারাপ লোকগুলো ও বেঁচে যায়। তারা গুলি ছুরতে ছুরতে পিছন থেকে ধাওয়া করতে করতে আসছে। 

তপুরা হাইওয়ে রোডে চলে আসে। গাড়ির স্পীড তখন ১৪০ বেগে চালাচ্ছিল। খারাপ লোকগুলোও গুলি ছুরা বন্ধ করে। সামনে পুলিশ এর চেক পোস্ট। লোকটা গাড়ির বেগ কমিয়ে ফেলে। পুলিশ লাইসেন্স চাচ্ছে, কিন্তু লাইসেন্স না থাকায় তপুদের কোনো কথাই শুনছিল না। পিছন থেকে খারাপ লোকগুলো আসছে। তখন খারাপ লোকগুলো পুলিশ এর পায়ে একটি গুলি ছুরে। তপুরা পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে আবার গাড়ি চালানো শুরু করে। পিছনে আবার পুলিশ এর গাড়ি ধাওয়া করতে লাগলো। পুলিশ এর গুলিতে তপুদের গাড়ির একটা টায়ার নষ্ট হয়ে যায়। গাড়িটা উলটো হয়ে ল্যান্ডপোস্টে বারি খায়। কিন্তু কেও তেমন কোনো আহত হয়না। খারাপ লোকগুলোকে পুলিশ গ্রেফতার করে ফেলে। পুলিশ তখন তপুদের কোনো কথা শুনতে একটুও রাজি ছিলনা। পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। তপুর মা-বাব, দাদা একথা জানতে পেয়ে দ্রুত থানায় যায়।  

সাংবাদিক লোকটি পলিশকে সবকিছু খুলে বলে এবং প্রমান দেখায়। তাই পুলিশ তাকে ও তপুদেরকে ছেড়ে দেয়। তপুর মা তপুকে দেখে জড়িয়ে ধরে তপুকে আদর করে। সাংবাদিক লোকটা ও তপুরা আদালত এ সঠিক প্রমান দেয়াতে তপুরা ও ফাজলুল হক খবর এর কাগজে আসে। বাবা অনেক রাগ হয়েছিলো। পুর এক মাস তার বাবা তার সাথে কথা বলেনা। মাও তপু মিলে বাবাকে মানিয়ে ফেলল। তপুরা দু’দিন পর ডাকায় চলে আসে। আসার আগে তপুর চার বন্ধু – আরিফিন, সাইফ, সামসুল, খালেদকে বিদায় দিয়ে আসলো।

Wordbridge School
Link copied!