• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খরচ বাড়ায় আমনেও লোকসানের শঙ্কা


অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, ফুলবাড়ী আগস্ট ১৫, ২০২২, ০৪:৩৯ পিএম
খরচ বাড়ায় আমনেও লোকসানের শঙ্কা

ফুলবাড়ী: ‘আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল, তবে খায় বহু শাইল’। পনের শ্রাবণে পুরো, ধান লাগাও যত পারো’- খনা তাঁর এ বচনে আষাঢ় মাসে জমির আইল বেঁধে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে শ্রাবণ মাসে ধান লাগানোর কথা বলেছেন। কিন্তু এবার আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি হয়নি। তাই সেচ দিয়ে জমি তৈরি করায় বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সার-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। এ অবস্থায় আমন আবাদে লোকসানের আশঙ্কা করছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কৃষক।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় আমনের চারা রোপনের জমি তৈরিতেই হেক্টরে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ইউরিয়া সারে ৬ টাকা ও প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। 

এদিকে আগের দৈনিক হাজিরার ৩৫০ টাকার দিনমজুর এখন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এর সঙ্গে কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচও বেড়েছে। এতে বাড়তি ব্যয়ে এক মণ আমন ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হবে ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত প্রতি মণ ধানের বতর্মান ক্রয়মূল্য ১০৮০ টাকা। বাড়তি ব্যয়ে আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হতে পারে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন চাষ মৌসুমে উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা পুরোদমে আমন ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্ধারিত আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উপজেলায় চলতি আমন চাষ মৌসুমে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৩ হাজার ৫৪৭ মেট্রিক টন। এর সঙ্গে টিএসপি সারের চাহিদা ৯১০ মেট্রিক টন। এমওপি সারের চাহিদা ১ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন। ডিএপি সারের চাহিদা ৯১০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সারের বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি ২২ টাকা। টিএসপি ২২ টাকা এবং এমওপি ১৫ টাকা কেজি। আমন মৌসুম শুরুর আগে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ছিল ১৬ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ২২ টাকায়। একইভাবে টিএসটি এবং এমওপি সার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বাড়তি ৩ থেকে ৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। 

ইউরিয়া সারের মূল্য যাওয়ায় কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী চলতি আমন মৌসুমে কৃষকের শুধুমাত্রা ইউরিয়া সারেই বাড়তি ব্যয় হবে ২ কোটি ১২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এছাড়া ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার হবে ৪৫টি এবং বৈদ্যুতিক সেচ যন্ত্র ১৫টি। তবে গভীর নলকূপ এখনও চালু করা হয়নি। 

উপজেলার চকচকা গ্রামের কৃষক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সার-ডিজেলসহ কৃষিপণ্যের দাম বাড়ায় সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আমন ধান উৎপাদনে খরচ হবে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। তবে জমিভেদে খরচের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, রবিবার পর্যন্ত রোপণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে ১২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৭০ ভাগ। তবে চলতি শ্রাবণ মাসেই পুরো উপজেলার আমন চাষাবাদ শেষ হবে।

উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সার-ডিজেলসহ কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত মৌসুমের তুলনায় এবার ধান উৎপাদন খরচ বাড়বে। এ কারণে কৃষকরা যাতে আমন মৌসুম থেকে বাড়তি দামে ধান বিক্রি করতে পারেন, সেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!