• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০২১-’র লক্ষ্য নির্ধারণে, মনে রাখবেন যে ৪টি বিষয়


অরণ্য সৌরভ ডিসেম্বর ৩১, ২০২০, ০৭:২৭ পিএম
২০২১-’র লক্ষ্য নির্ধারণে, মনে রাখবেন যে ৪টি বিষয়

ছবি : ইন্টারনেট

ঢাকা : কখনও কি সার্চ ইঞ্জিনে সুখের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছেন? সুখের অনুসন্ধান করে থাকুন আর নাই-বা করে থাকুন; চলুন এই সম্পর্কে অক্সফোর্ডের কী বক্তব্য রয়েছে তা জেনে নিই। অক্সফোর্ডের মতে, সুখ মনের একটি তৃপ্তি। সুতরাং আপনি যদি কোনো কাজে সন্তুষ্ট হন তবে আপনি খুশি হবেন বা তৃপ্ত অনুভব করবেন। আর সেই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আপনার প্রয়োজন লক্ষ্য এবং অধ্যবসায়।

পুরাতন বছর শেষে নতুনের আগমনে আমাদের লক্ষ্যগুলোও নতুনরুপে ধরা দেয়। সব সময় নতুন বছরের আগে আমরা নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য স্থির করে থাকি। কিন্তু বছরটি যতই সামনের দিকে যায়, সেই লক্ষ্যগুলোর বেশিরভাগই অপূরণীয় থেকে যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তবে কেন এমন হয়? কারণ বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের মনে থাকা নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি, আর তাতেই আমাদের লক্ষ্য স্থিরে নেতিবাচকতার প্রভাব পড়ে।

মুম্বাইয়ের ওকারহার্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাহুল খেমানির মতে, ‘আমাদের বুঝতে হবে যে আমাদের লক্ষ্য এবং সুখ একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ’ যখন আমরা এই বিষয়টি বুঝতে পারবো তখনই সফল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। ডাঃ খেমানির মতে আমাদের দুই ধরণের লক্ষ্য রয়েছে। ১. অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য এবং ২. বাহ্যিক লক্ষ্য।

অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য: এই লক্ষ্যগুলো আমাদের মনের সাথে যুক্ত। এটিতে কোনও বাহ্যিক শক্তি আমাদের সহায়তা করতে পারে না। অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যগুলো নিজের মন ও মননের সাথে সম্পর্কিত। যেমন: স্বাস্থ্য, দেহের বৃদ্ধি, অন্যদের সাথে সম্পর্ক তৈরিকরণ ইত্যাদি। ডাঃ খেমানির মতে, ‘স্ব-গ্রহণযোগ্যতা অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য অর্জনের ম‚ল চাবিকাঠি।’ যখন আপনার কৃতিত্বের কথা আসে তখন আপনি কী ভাবেন, অনুভব করেন, আপনি কেমন বা কী আচরণ করেন? সেগুলোই মূলত অভ্যন্তরীণ লক্ষ্য।

বাহ্যিক লক্ষ্য: এই লক্ষ্যগুলো বাইরের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ, যশ-খ্যাতি বা অন্য যে কোনও কিছু; যা অন্যের কাছ থেকে যাচাইকরণের প্রয়োজন হয়। ডাঃ খেমানি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, কোনও বাহ্যিক লক্ষ্য আমাদের জীবনে সুখ এনেছে। এগুলো শুধুমাত্র সুখের একটি মাধ্যম হতে পারে। তবে, সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হ'ল এগুলোর চাহিদা কখনই শেষ হয় না। তাই এগুলো থেকে সুখ খোঁজার বিষয়টি বোকামি ছাড়া কিছ্ইু নয়।’

সুখের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, নিজেকে যে প্রশ্নগুলো করবেন। যেমন:

* আমার চিন্তা কেমন, ইতিবাচক, নেতিবাচক?
* আমি কী অর্জন করতে চাই?
* আমি কে? আমার উদ্দেশ্য কী?
* আমার সুখের পথ কোনটি?

ম‍ূলত, এই প্রশ্নগুলো এবং উত্তরগুলো অভ্যন্তরীণ। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অভ্যাসগুলো আমাদেরকে সুখ ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিজের ঘর পরিষ্কার করা, রান্না করা, বাগান করা, বই পড়া, সিনেমা দেখা, পরিবারকে সময় দেওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ইত্যাদির মতো একটি সাধারণ বিষয়ও আপনাকে আনন্দ দিতে পারে, উল্লাস-খুশিতে ভরিয়ে তুলতে পারে; আর এনে দিতে পারে সুখ। আর সুখের জন্য, আনন্দ ও খুশির জন্য, সন্তুষ্টি বোধের জন্য হলেও এগুলো দৈনন্দিন লক্ষ্য বা অভ্যাস হিসাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
 
২০২১ এর লক্ষ্য নির্ধারণের আগে অবশ্যই চারটি জিনিস মনে রাখা চাই। যেমন-

যে লক্ষ্যগুলো আপনি পরিমাপ করতে পারবেন না সেগুলো আপনার লক্ষ্য নয়, জাস্ট আকুতি-মিনতি। এগুলো পূরণ করা খুবই কঠিন, কারণ আপনার অভ্যন্তরীণ মন এগুলোতে সায় দেয় না। আর লক্ষ্য স্থির করুন অল্প অল্প করে, যাতে স্বল্প সময়ে পূরণ করা যায়। আপনার লক্ষ্যগুলো স্বল্পকালীন রাখা এজন্য উচিত, যাতে আপনি লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রেরণা খুঁজে পান।

লক্ষ্য সেট করেই কাজে মনোনিবেশ : যখনই আপনি নিজের লক্ষ্যটি সেট করবেন, ঠিক তখন থেকেই কাজে লেগে যান। যে কাজটি আপনার খুব ভালো জানাশোনা আছে সেটি দিয়েই শুরু করুন। কাজের শুরু থেকে শেষাব্দি আনন্দ নিয়ে কাজটি করুন। কখনোই একটি কাজ শেষ না করে, অন্য আরেকটি কাজে হাত দিবেন না। তাহলে দু’নৌকায় পা রাখার মতো অবস্থা সৃষ্টি হবে। আর তখন লক্ষ্য অর্জনে বাঁধা আসতে পারে, লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। সেজন্য একটি কাজ শেষ করে নতুন আরেকটি কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করুন। তাহলে খুব অল্প সময়ে জীবনে সফলতা আসবে।

নিজের জন্য সময় : ডাঃ রাহুল বলেন, সব কাজের পরেও নিজের জন্য সময় রাখুন। এতে নিজেকে আনন্দিত রাখা যায়, প্রশান্তি এনে দেওয়া যায়। আপনি যদি এড়িয়ে চলার পরিবর্তে কোনও কাজ করায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তাহলে আরও বেশি ভাল।

রোডম্যাপ তৈরি করুন : ডাঃ খেমানির পরামর্শ অনুযায়ী, আপনি কী করতে চান, সেটির জন্য পরিকল্পনা করুন, একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করুন। যাতে আপনি জানতে পারবেন যে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, কতটুকু করছেন। এছাড়াও, আপনি লক্ষ্য অর্জনে সঠিক বা ভুল করছেন কিনা তা বারবার পরীক্ষা করুন।

অর্জনগুলো উদযাপন করুন : প্রতিটি কাজেরই কিছু অর্জন রয়েছে। কিছু অর্জন বাহ্যিক, কিছু অভ্যন্তরীণ। নিজের কাজের লক্ষ্য পূরণের অগ্রগতিতে নিজেকে পুরষ্কৃত করুন। যা আপনার লক্ষ্যগুলো অর্জনের যাত্রাকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে। তবে মনে রাখবেন, বস্তুবাদী পুরষ্কার দেওয়ার পরিবর্তে নিজেকে অভিজ্ঞতা পুরষ্কার দিন; কারণ এটি আপনার সাথে জনমভর থেকে যাবে। এটি চিরকালের জন্য আপনার স্মৃতির অংশ হয়ে উঠবে এবং আপনাকে আরও পরিশ্রম করতে সহায়তা করবে।

আপনি লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিরাম চেষ্টা অব্যহত রাখুন। লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন নিজেকে কাজে মনোনিবেশ করুন। যখন আপনি লক্ষ্য পূরণের কাজে প্রতিদিন সময়, শ্রম দিয়ে সন্তুষ্ট অনুভব করবেন তখনি সুখ ধরা দিবে। আর প্রতি রাতে পাবেন আরামদায়ক ঘুম।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ 

Wordbridge School
Link copied!