• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ১৫, ২০২১, ১২:৩১ পিএম
এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল

ঢাকা : ২০১৮-এর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা গিয়েছিলাম কুয়াকাটা ট্রিপে। ২০১৯-এর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গেছি কাপ্তাই ট্রিপে। এবার করোনার প্রকোপের কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। ভেতর বলে ঘুরে আসি, বাহির বলে দরকার নেই-এরকম অবস্থা আর কি।

অবশেষে সবাই মিলে ঠিক করলাম-যাব, তবে সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করব। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই প্ল্যানিং শুরু হলো। ভেন্যু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে না। ভিড় কম থাকবে, সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও কমতি থাকবে না-এসব বিষয় মাথায় ছিল। সব মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলকেই বেছে নিলাম। বালিশিরা রিসোর্টে রুম বুক করলাম।

যেহেতু আমরা প্রায় ২০-২২ জনের মতো, তাই রিসোর্টের ১২টা রুমের মধ্যে ৭টা রুম বুক করা হলো। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আমরা ছাড়া আর খুব বেশি বাইরের গেস্ট থাকছে না। ঠিক হলো বাস বা ট্রেনের ভিড় এড়িয়ে আমরা মাইক্রো নিয়ে যাব। ৩টা মাইক্রো ভাড়া করা হলো। যাওয়ার পথে সকালের নাস্তার জন্য যেন কোনো হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে থামতে না হয়, সেজন্য একটা অনলাইন পেইজ থেকে হোমমেইড ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিয়ে রাখলাম।

ভোর ৬টায় খাবার ডেলিভারি দিতে হবে, শুনেই অনেক পেইজ রিজেক্ট করে দিচ্ছিল। অবশেষে সিমি আপু রাজি হলেন। আমাদের ট্রিপের আগের সারারাত জেগে খাবার বানিয়ে একদম ফ্রেশ খাবার ভোর ৬টায় আমাদের হাতে পৌঁছে দেবার জন্য আপুকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।

দেখতে দেখতে আমাদের শ্রীমঙ্গল ট্রিপের দিন চলে এলো। ভোর ৬টায় ৩টা মাইক্রোবাস ৩টা লোকেশন থেকে আমাদের পিক করে ৩০০ ফিটে সব গাড়ি একত্রিত হলো। সকালের নাশতা ভাগাভাগি করে গাড়ি ছুটল শ্রীমঙ্গলের পথে। যাত্রাপথে একবার গাড়ির ফুয়েল নেওয়ার জন্য আর একবার ওয়াশরুম ব্রেক ছাড়া আমাদের আর কোনো ব্রেকের প্রয়োজন হয়নি।
একবারে গিয়ে থামলাম ‘চা কন্যা ভাস্কর্য’-এর সামনে। এখানে মিনিট পনেরো কাটিয়ে দুই পাশের চা বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম ‘বালিশিরা রিসোর্ট’-এ। একটা টিলার পাদদেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টটা প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল। লাক্সারি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশেলে খুব যত্ন করে বানানো। নানারকম ফুল ফুটে আছে। পাশেই বয়ে যাওয়া ঝিরির কলকল পানির শব্দ আর সবুজের সমারোহ-সব মিলিয়ে মুগ্ধ হতেই হয়।

আমরা সবাই যার যার রুমে চেক-ইন করে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম ‘সাতকড়া রেস্টুরেন্ট’-এ দুপুরের খাবার খেতে। ঢাকায় থাকতেই এই রেস্টুরেন্টে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। তাই আমাদের জন্য আলাদা একটা জায়গা আগে থেকেই বরাদ্দ ছিল। খাবার মেন্যু ছিল-নানারকম ভরতা, চিকেন সাতকড়া কড়াই, মাটন কড়াই, ডাল আর ভাত। চিকেন সাতকড়া কড়াইটার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। খেয়েদেয়ে আমরা আবার রিসোর্টে ফিরে আসলাম। বিকালটা রিসোর্টের চারপাশ ঘুরেই কাটিয়ে দিলাম। আমাদের সাথে ১০টা বাচ্চা গিয়েছিল। ওরা খুব মজা করেছিল বিকালে। রাতে বার-বি-কিউ চিকেন, ব্যাম্বু চিকেন, ভেজিটেবল আর লুচি দিয়ে ডিনার সেরে রেফেল ড্র, গান-বাজনা, আড্ডা চলল অনেক রাত পর্যন্ত।

পরদিন ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে দেখি চারপাশ কুয়াশায় মুড়ে আছে। গ্রুপের অতি উৎসাহী আরো ২/৩ জন বের হয়েছে ভোরের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে । শিশির ভেজা ঘাসের উপর শিউলি ফুল পড়ার দৃশ্য দেখলাম বহুদিন পর। ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরির পর রুমে এসে ফ্রেশ হতে হতে বাকিরা ঘুম থেকে উঠে গেছে। সবাই মিলে সকালের নাস্তা সেরে চা খেতে খেতে ঝিরিটার পাশে বসে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ।

সকাল সাড়ে দশটায় রিসোর্ট থেকে চেক-আউট করে আমরা রওনা হলাম নূরজাহান টি এস্টেটের উদ্দেশে। শ্রীমঙ্গলের অন্যতম সুন্দর চা বাগান এটা। থরে থরে সাজানো টিলার ওপর চা বাগানগুলো যেন ছবির মতো সুন্দর। বেশ কিছুক্ষণ এখানকার বিভিন্ন ভিউ পয়েন্ট ঘুরে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চললো মাধবপুর লেকের দিকে। দুই ধারের চা বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আধা ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম লেকের ধারে। ভিতরে ঢুকে টিলে বেয়ে উপরে উঠে সেখান থেকে লেকের ভিউটা দেখতে বেশ লাগছিল।         

লেক থেকে বের হতে হতেই দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছিল। দুপুরের খাবারের জন্য ঢাকায় থাকতেই হারমিটেজ রিসোর্টে বলে রেখেছিলাম। রিসোর্টটি পরিচালনা করেন একজন ষাটোর্ধ্ব অ্যাডভোকেট ভদ্রমহিলা। তার ডাইনিংটা চমৎকার আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ডাইনিং-এর আসবাবপত্র, ঝাড়বাতি সবকিছুর মধ্যে একটা আভিজাত্যের ছোঁয়া। আশপাশে শেলফগুলোতে নানারকম বই সাজানো।

দুপুরের মেন্যু ছিল-ভাত, আলু ভরতা, লালশাক, সবজি, মুরগি ভুনা আর পুডিং। খাবার খেয়ে মনে হয়েছে যেন ঘরের খাবার খাচ্ছি। লাঞ্চ শেষে নানারকম মসলার মিশেলে যে রংচা টা দেয়ওা হয়েছিল, সেটা খেতে অদ্ভুত মজার ছিল। ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিল মিটিয়ে আমরা রওনা হলাম আমাদের শেষ গন্তব্য টিপরাছড়া গলফ কোর্সের উদ্দেশে।

এটা হরিণছড়া গলফ কোর্স নামেও পরিচিত। যাওয়ার পথে টানা ২০ কিলোমিটারের মতো ফিনলে টি এস্টেট পার হয়ে যেতে হয়। যেদিকে তাকিয়েছি, শুধুই চা বাগান। টিপরাছড়া গলফ কোর্সের সবুজ মাঠ, রাবার বাগান, চা বাগান, লেক, সূর্যাস্ত-সব মিলিয়ে খুব সুন্দর একটা বিকাল কাটিয়েছিলাম আমরা। গ্রুপের একজন তো বলেই ফেলল, ‘ভাই এ তো পুরাই সুইজারল্যান্ডের ভ্যালিগুলোর মতো দেখতে।’

এবার ফেরার পালা। ফিরতি পথে শ্রীমঙ্গল শহরের গুপ্ত টি স্টল থেকে চা পাতা কিনলাম সবাই। এরপর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। মনে রাখার দুটা দিন কাটিয়ে যখন বাসায় ঢুকলাম তখন ঘড়ির কাটা রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।  

পরিশেষে পরিবেশের প্রতি খেয়াল রাখুন, ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে ফেলুন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!