• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৮০০ বছরের পুরনো দ্বীপে ‘ঘুমায়’ সম্ভাবনা


ভোলা প্রতিনিধি   জানুয়ারি ২৫, ২০২১, ০৬:১৮ পিএম
৮০০ বছরের পুরনো দ্বীপে ‘ঘুমায়’ সম্ভাবনা

ভোলা : ধান, সুপারি, ইলিশের জেলা হিসেবে ভোলার খ্যাতি দেশজুড়ে। হিমালয় থেকে নেমে আসা তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দিয়ে মোহনার বুকে জেগে উঠেছে দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলার সৃষ্টির ইতিহাস যেমন আর্কষণীয় ঠিক তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রয়েছে বৈচিত্রের ছোঁয়া। 

বিশেষ করে এখানকার চরাঞ্চলের অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, নদীর বুকে সারি সারি জেলে নৌকা, দল বেধে বুনো মহিষের বিচরণ, একরের পর একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, আকাশ ছোয়া কেওড়া বাগান আর সাগর মোহনার সৈকত সব কিছুই কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও মন ছুয়ে যায়।

ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপাসাগরের কোল ঘেষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অবস্থান। প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের পলি জমে এ দ্বীপটির জন্ম। সাগরের কোল ঘেষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা সাগর কন্যা হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা আর বিকেলের পশ্চিম আকাশের সিড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে মেঘের বুকে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। আবার রাতের নতুন শাড়িতে ঘোমটা জড়ানো বধুর মত নিস্তব্দতায় ছেয়ে যায় পুরো দ্বীপ।

প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো মনপুরা উপজেলা বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশজুড়ে পরিচিত একটি নাম। এখানকার ইতিহাস বেশ প্রচীন। ৭’শ বছর আগে এখানে পূর্তগীজ জলদস্যূদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মিলে মনপুরায় আজও  সে সময়ের লোমস কুকুরে বিচরণ।

প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যরে অপরুপ লীলাভুমি মনপুরায় রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনা। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে  ম্যানগ্রেফ বনাঞ্চল। 

এছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতা। আরো রয়েছে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা বৈচিত্রময় প্রাণী। এর গহীন জঙ্গলে ভয়াঙ্কর কিছু প্রাণী রয়েছে বলেও জনশ্রতি রয়েছে।

মনপুরার রয়েছে ৮/১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো হচ্ছে- চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। আর চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশরীর গলায় মুক্তর মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজের বিল্পব। চোখ ধাধানো রূপ নিয়েই যেন এসব চরগুলোর জন্ম। চরগুলোতে রয়েছে মানুষের বসতি। যাদের জীবন যাত্রার মানও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। 

জেলে, চাষী, দিন মজুর, কৃষক ও খেয়া পার করে জীবকা নির্বাহ করেন এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ। তাই সবুজের সমারহ আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন সাগর কন্যা মনপুরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বের দাবীদার।

স্থানীয়দের দাবি, ভ্রমণ পিয়াষু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেয়ার আলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে সাগর কন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র ভিন্ন ধরনের। সুদূর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ করে। 

পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, শীত মৌসুমে বাংলাদেশে  যেসব প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন সাগর কন্যার মনপুরার চরে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

দেশের অন্য সব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল বৃক্ষের সবুজ সমাহার যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুন হাতে ছোয়া। যেখানে নানান প্রজাতির গাছের সংখ্যা রয়েছে পাঁচ কোটিরও বেশী। রয়েছে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন। সেখান থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউ এর দৃশ্য উপভোগ করা যায় । দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। 

এছাড়া সম্প্রতি মনপুরার সাগর মোহনায় জেগে ওঠা প্রায় এক কিলোমিটার বালির বিচকে ঘিরে তৈরী হয়েছে দক্ষিণা হাওয়া সী-বিচ। এই বিচকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সাগর কন্যা আজও  অবহেলিত হয়ে পরে আছে।

মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার চৌধুরী জানান, নিঃসন্দহে এ অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠতে পারে। মনপুরার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভাল মানের হোটেল, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে মনপুরায়। 

তবে সরকারি, বেসরকারি কিংবা এনজিও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা যদি গুরুত্বের সাথে অবহেলিত এ জনপদের উপর দৃষ্টি রাখে তাহলে খুব শীঘ্রই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।

যোগাযোগ ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে সকাল ৬ টায় পৌছা যায় মনপুরায়। এছাড়াও ভোলা ইলিশা থেকে রাতে লঞ্চে ও সি-ট্রাকে তজুমদ্দিন অথবা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার করে যাতায়াত করা যায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!