• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নজয়ী নারী উদ্যোক্তা নুসরাত


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৯:০০ পিএম
স্বপ্নজয়ী নারী উদ্যোক্তা নুসরাত

ঢাকা : সাম্যবাদী কবি নারী ও পুরুষকে সমান চোখে দেখেছেন। বর্তমানে নারীরা পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে সব পেশায় সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই নারীরা। কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিল না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরো বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে৷ গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ মনিটরের হিসেবে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের ৫% এর তুলনায় ১৪% হারে নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। কুসংস্কার ও প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বরিশালের নুসরাত জাহান। তিনি কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন; তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্র নিষ্ঠায় নিজ পরিচয়ে নুসরাত অন্যতম একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। সফল নারী উদ্যোক্তা নুসরাত বলেন, এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও সুখ-দুখের অনেক কাব্য।

ছোটবেলা থেকেই শিক্ষকতা করার ইচ্ছা থাকলেও সংসার ও সন্তানদের সময় দিতে গিয়ে আর হয়ে উঠেনি। তবে থেমে থাকেননি তিনি। মনের ভেতর জেদ চেপে বসেছিল কিছু একটা করার। নিজের একটা পরিচয়ে সমাজের কাছে পরিচিত হওয়ার। ছোট থেকেই রান্না ছিল পছন্দের কাজ। অনেকেই তার রান্নার প্রশংসা করত। সেই থেকেই মাথায় আসে রান্না নিয়ে কিছু করার। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। করে নিলেন রান্না বিষয়ক কোর্স। প্রথমে নিজের আত্মীয়স্বজন ও অফলাইনে বিভিন্ন জায়গায় রান্না করতেন। আর সফলতার ঝুড়িতে জমা হতো প্রশংসা। ভালোবাসা। এভাবেই কেটে যায় তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন। হুট করেই সাম্প্রতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইনে রান্না নিয়ে সরব হন তিনি। মেয়ের পরামর্শে অনলাইনে পেজ খুলেন ছেলে। তারপর নতুনরূপে ব্যবসায় মনোযোগী হন তিনি। গতবছরের এপ্রিলে উইয়ের সাথে যুক্ত হয়ে প্রথমে অনলাইন আড্ডা, তারপর বিজনেসের উপর মাস্টারক্লাস সম্পূর্ণ করেন। এছাড়া বেকিং এর উপর কোর্স, টমি মিয়ার ওয়ার্কশপ, ফটোগ্রাফি ট্রেনিংসহ অনেকগুলো কোর্স সম্পন্ন করেন। তাছাড়া তিনি ডিজিটাল ওর্য়াল্ড মেলাতেও অংশগ্রহন করেছেন। দুই বছর যাবৎ ফুডপান্ডা, কুকআপ, উই প্লার্টফরমে কাজ করছেন তিনি। রান্না নিয়ে এতোক্ষণ যার গল্প শুনালাম তিনি হলেন নুসরাত জাহান।

বরিশালে জন্মগ্রহণ করলেও বাবা ভোলায় টিএন্ডটি’তে চাকরীর সুবাধে বেড়ে উঠেছেন ভোলায়। তিনি ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বিয়ের পর এইচএসসি, বিএ ও বিএড পাস করেন। স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নুসরাতের সংসার।

আট বছর আগে ‘নুসরাত কবির’স কিচেন’ নামে বিভিন্ন খাবার ডেলিভারী দেওয়ার ব্যবসার যাত্রা শুরু করলেও দুই বছর ধরে সক্রিয় আছেন অনলাইনে। কিচেনের মাধ্যমে তিনি হোমমেইড ফুড ভেলিভারি দিয়ে থাকেন। বিরিয়ানি, আচার, ফ্রোজেন ফুড, ডের্জাড, চাইনিজ, মোগলাই, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। তিনি একসাথে ৪ থেকে ১০০ লোকের খাবার হোম ডেলিভারি দেন। সর্বদা ফ্রেস খাবার ডেলিভারি দিয়ে থাকেন বলে অন্ততপক্ষে একদিন আগে অর্ডার নিয়ে থাকেন। পাঁচ হাজার টাকায় ‘নুসরাত কবির’স কিচেন’র যাত্রা শুরু করলেও এখন বাৎসরিক আয় প্রায় লাখ টাকা।

‘নিজেকে আমি অনেকটাই সফল মনে করছি। কারণ সংসারের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি কয়েকজন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের সফলতাকে তিনি এভাবেই আখ্যায়িত করেন।

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিবদ্ধকতা বিষয়ে নুসরাত বলেন, এখনো আমাদের সমাজ নেতিবাচক মানসিকতায় জর্জরিত। সেজন্য নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতেই হচ্ছে। পরিবার আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলেই আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। তবে আমিসহ সব নারী উদ্যোক্তারা উইয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি।

সফল উদ্যোক্তা হিসেবে অনুপ্রেরণার মুকুটটি মাথায় দিতে চান পরিবারের সদস্যদের। এছাড়া তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি ছিল বলেই আজ সফল নারী উদ্যোক্তার পৃষ্টায় নাম লেখাতে পেরেছেন বলেই তিনি মনে করেন।

‘অবশ্যই চাই নারীরা উদ্যোক্তা হোক, উদ্যোক্তায় আসুক। কারণ আমাদের সমাজে নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া খুবই জরুরী। উদ্যোক্তা হতে হলে প্রথমেই ঝুঁকি নিতে হবে, পরিশ্রমি হতে হবে। নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা থাকতে হবে। ধৈর্য, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্যোক্তা হিসেবে রান্নাকে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে নুসরাত জাহান বলেন, বাঙালি নারীদের জীবনে রান্নাবান্না একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। রন্ধনে বেশ ঝোঁক ও ভালোবাসা থাকায় এটিকে ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছি।

রান্নার ব্যবসার পাশাপাশি তার রয়েছে বুটিক হাউজও। তার বুটিক হাউজ দেশের বাহিরে। দেশে প্রডাক্টগুলো প্রডাকশন করে দেশের বাহিরে পাঠান তিনি। প্রথমে অল্প পুঁজি নিয়ে আরম্ভ করলেও ধীরে ধীরে বড় পরিসরে এসে থেমেছে। করোনা এবং লকডাউনের কারণে বর্তমানে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে তিনি জানান।

লেডিস টি-শার্ট, ম্যানস্ টি-শার্ট, টেনটপ, লেডিস শর্ট, ম্যানস শর্ট, প্যান্ট লেডিস, ম্যানস জিন্স শার্ট ও প্যান্ট নুসরাত জাহানের বুটিক হাউজ সার্ভিস দিয়ে থাকে। বর্তমানে কিচেন ও বুটিক হাউজ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় করেন। দেশে তার কোন শো রুম না থাকলেও, দেশের বাহিরে রয়েছে বুটিক হাউজের শো রুম। বর্তমানে সম্পূর্ণ ব্যবসা তিনি অনলাইনে পরিচালনা করছেন।

নারীরা শুধু সংসার ও সন্তান লালন-পালন করবে এটাই আমাদের সমাজে প্রচলিত। নারীদের কাজের সুযোগ, নিরাপত্তা নেই বলে আমাদের সমাজের নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

কয়েকটি উপায়ে গ্রাহকরা নুসরাতের পণ্য পেতে পারেন। তার মধ্যে রয়েছে- অনলাইন পেজ ‘নুসরাত কবির’স কিচেন’ ফুডপান্ডা, কুকআপ ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি কুকআপ, ফুডপান্ডা, উইসহ আরো বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে থাকেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!