• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মেঘের যোদ্ধা’ চাচাপোয়ার রহস্যময় শক্তি


ফিচার ডেস্ক জুলাই ২৬, ২০২১, ০১:০৩ এএম
‘মেঘের যোদ্ধা’ চাচাপোয়ার রহস্যময় শক্তি

ঢাকা : প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি যেন রহস্যের আঁধার। এর পরতে পরতে রয়েছে রহস্যময় অনেক কাহিনি। তেমনি একটি প্রাচীন সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী চাচাপোয়া। প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকায় ইনকাদের বৃহত্তম সাম্রাজ্য ও সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিল।

তারা তাদের সাম্রাজ্যের নাম রাখে ‘তাওয়ান্টিনসুই’, যার অর্থ ‘চারটি সংযুক্ত প্রদেশ’। পেরুর প্রাচীন ইনকা সভ্যতার লোকেরা ওই অঞ্চলের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করত। এসব জনগোষ্ঠীর অঞ্চল বিজয় করে বা শান্তিপূর্ণভাবে তারা নিজেদের অধীনে নিয়ে আসত। আধিপত্য বিস্তার করে অন্যান্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপিয়ে দিত নিজেদের সার্বভৌমত্ব।

এভাবেই দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার একটি বৃহৎ অংশকে তাদের ‘তাওয়ান্টিনসুই’ বা সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তারা সূর্যদেবতার উপাসনা করত। এদের শাসককে ‘সাপা ইনকা’ বলত যার অর্থ ‘সূর্য পুত্র’। তাদের বিশ্বাস ছিল শাসক সূর্যের পুত্র। সে পার্থিব রাজা হলেও তার স্বর্গীয় বিষয়ে অধিকার ছিল বলে বিশ্বাস করত চাচাপোয়ারা।

তারপরেও, এমন কিছু গোষ্ঠী ছিল, যারা অন্যদের তুলনায় বিশেষত ‘অজেয়’ ইনকাদের প্রতিরোধ করেছিল ও কোনো কোনো গোষ্ঠী তাদের কঠোর হূদয়েও কাঁপন ধরিয়েছিল। এমনই একটি গোষ্ঠী ছিল চাচপোয়া।

চাচপোয়াদের বিশ্বাস তারা নিজেদের ‘মেঘের যোদ্ধা’ শামান-জাদুকর ও মমিদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ইনকাদের প্রতিহত করতে পেরেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল মৃত মমিরা জীবিতদের মতো ক্ষমতাবান। আন্দিজ পার্বত্যাঞ্চলের একটি প্রাচীন জাতি চাচাপোয়া। আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢালে বর্তমান পেরুর আমাজন নদীসংলগ্ন আমাজোনাস অঞ্চলে তাদের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।

ধারণা করা হয়, ৭৫০-৮০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই অঞ্চলে চাচাপোয়া সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। ইনকাদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। বহু চেষ্টার পর ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইনকারা তাদের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়। আর তারাই ‘চাচাপোয়া’ নাম দিয়েছিল। কেচুয়া ভাষায় যার অর্থ ‘মেঘের যোদ্ধা’। চাচাপোয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা ‘মেঘের যোদ্ধা’ হিসেবেই খ্যাতি পেয়েছিল।

প্রাচীন উৎসগুলো থেকে জানা যায়, এই রহস্যময় নৃগোষ্ঠীর লোকেরা ইনকা অঞ্চলের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। তাদের চেহারাও ওই অঞ্চলের অন্য জনগোষ্ঠীর মিলত না।  চাচাপোয়ার ‘মেঘের যোদ্ধারা’ ছিল প্রধান শিকারি। তারা শত্রুদের মাথা নিজেদের বিজয় চিহ্ন হিসেবে রাখত। ‘সারকোফাগাস’ শব্দটি প্রথম গ্রিক ভাষায় ব্যবহূত হয়। যার অর্থ ‘মাংস খাওয়া’।

তবে চাচাপোয়ায় এর প্রয়োগ অনেকটা ভিন্ন অর্থে হয়েছিল। এর সঙ্গে সমাধিস্থ করার বিষয় যুক্ত হয়। তবে তাদের মৃতদেহ কেবল সরকোফগিতেই সমাধিস্থ করা হতো না, বরং বিশেষ অবকাঠামো তৈরি করে তার দেয়ালেও মৃতদেহ দাফন করা হতো। চাচাপোয়াস শহরের উত্তর-পূর্বে পেরুর কারাজিয়ায় একটি পাহাড়ে, দূর থেকে মানব মুখের একাধিক মূর্তির অবকাঠামো দেখা যায়। এগুলো মূলত মূর্তি নয়।

চাচাপোয়াদের নির্মিত এই অবয়বগুলো বাস্তবে সরকোফগি, যার মধ্যে মমিকৃত মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল। করাজিয়ার সরকোফগি ‘মেঘের যোদ্ধাদের’ সমাধি। খ্যাতিমান যোদ্ধাদের মমিগুলো সারকোফগির অভ্যন্তরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তাদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মধ্যে বিশাল দুর্গও আছে। সেখানে পাহাড়ের চূড়ার ওপর তৈরি দেওয়ালে ঘেরা প্রাচীন বসতির ধ্বংসস্তূপও পাওয়া গেছে। প্রতিরক্ষার জন্যই ‘মেঘের যোদ্ধা’ খ্যাত চাচাপোয়ারা এগুলো নির্মাণ করেছিল বলে গবেষকদের ধারণা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!