• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বছরে আয় ৪ লাখ টাকা

মাল্টা চাষে এখলাছের সাফল্য


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০২:০১ পিএম
মাল্টা চাষে এখলাছের সাফল্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হল মাল্টা। ফলটি মূলত পাহাড়ী অঞ্চলে চাষ হলে ও বর্তমানে সমতল ভূমিতে চাষ করছেন কৃষকরা। বাড়ি সংলঘ্ন জমিতে মাল্টা চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন কাজী এখলাছ । কৃষক এখলাছ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের মৃত: আব্দুল জব্বারের ছেলে। অন্যান্য ফল চাষে কম-বেশি ঝুঁকি থাকলেও, মাল্টা চাষ অনেকটাই সুবিধাজনক। এ কারণে মাল্টা চাষে অনেকেই ঝুঁকছেন। তাদের মধ্যে তিনি একজন । তাছাড়া লিচু,কাঁঠাল, পেয়ারা, পেপে, আনাড়সহ নানা প্রজাতির মৌসুমি ফলের বাগান ও তার রয়েছে । সারা বছর বিষমুক্ত ফলের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলেন তিনি। জাত নির্বাচন, চাষাবাদ ও পরিচর্যাসহ সার্বিক ভাবে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন বলে কাজী এখলাছ জানায়।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগী । ইতিমধ্যে চলছে মাল্টা বিক্রি। স্থানীয় বাজারে রয়েছে ভালো চাহিদা ও। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি তিনি। এ পযর্ন্ত তিনি ৭০ হাজার টাকার উপর মাল্টা বিক্রি করেছেন। তবে এ মৌসুমে মাল্টা চাষে খরচ বাদে ও আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে তার আয় হবে তার ১লাখ ৩০ হাজার টাকার উপর। তাছাড়া এসব মিশ্র ফল বাগান থেকে বছরে তার আয় হচ্ছে ৪ লাখ টাকার উপর।

কাজী এখলাছ বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত ৪ বছর আগে বাড়ি সংলগ্ন জায়গার মধ্যে ২শটি বারি-১ মাল্টা চারা রোপন করেন। তবে মাল্টার আবাদ নিয়ে প্রথমে কিছুটা হতাশা কাজ করলে ও ফলন আশানুরোপ ভাল হওয়ায় হতাশা কেটে যায়। সবুজ রঙের এ মাল্টা তুলনামূলক অন্য জাতের মাল্টার চেয়ে রসালো ও স্বাদে বেশ মিষ্টি। ফলে বাজারে এ মাল্টার চাহিদাও বেশি। প্রথম বছর তিনি ৫০ হাজার টাকা, পরের বছর ৮০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এবছর এখন পযর্ন্ত তিনি ৭০ হাজার টাকার উপর মাল্টা বিক্রি করেছেন বলে জানায়। তিনি আশা করছেন ১লাখ ৩০ হাজার টাকার উপর বিক্রি হবে।

সরেজমিনে চানপুর এলাকায় তার বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে অসংখ্য মাল্টা। এক একটি গাছে ৮০ থেকে ১শ উপরে মাল্টা এসেছে। প্রতিদিন দূরের ও কাছের অনেকে আসছেন তার এই মাল্টা বাগান দেখতে। এদের মধ্যে কেউ দর্শনার্থী, কেউ মাল্টা ব্যবসায়ী আবার কেউ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে আসেন পরামর্শ নিতে।

ইখলাছ মিয়া বলেন আজ থেকে ১৩ বছর পূর্বে তিনি বিদেশ যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তেমন ভাল করতে না পেরে অবশেষে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর বাড়ি সংলগ্ন পতিত জমিতে শুরু করেন লিচু, কাঁঠাল,পেপে, আনার, পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ। এতে তিনি ভাল ফলন পেয়ে তার উৎসাহ যেন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি ৩ বিঘা জমিতে মাল্টা বারি-১ জাতের ২০০টি গাছ রোপন করেন। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে ৯০-১২০টি মাল্টা ধরেছে। যা গত বছরের চাইতে অনেক বেশী এসেছে। গাছে ফল আসার পর বিভিন্ন ধরণের পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পেতে সপ্তাহে ১ বার স্প্রে করছেন বলে জানায়।

গাছে ফলের সাইজ ভালো হওয়ায় ৪-৫টি মাল্টা ১ কেজি হয় । প্রতি গাছ থেকে থেকে ১৫-২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। যা স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা ১৬০-১৭০ টাকা বিক্রি হয়। অর্থনীতির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানুষকে বিষমুক্ত নিরাপদ ফল খাওয়ানো ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে তিনি এ চাষ শুরু করেছেন বলে জানায়।

তিনি আরও বলেন লিচু, কাঁঠাল পেপে, আনার, পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে বছরে তার ২লাখ টাকার উপর আয় হয়। তার এই সফলতা দেখে অনেকেই ফল ও সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাল্টা বারি -১ একটি উচ্চ ফলনশীল একটি সুস্বাদু ফল। মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে, এবং এটি পরিপক্ক হয়ে কমলা রং ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। এরপর এটি বাজার জাত করা হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১০০ গাছ লাগানো যায়। এক ফুট বাই এক ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপণ করতে হয়। মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। বাগান দেখতে আসা পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার মো. কামরুল হাসান বলেন তিনি স্ত্রী ও মেয়ে নিয়ে মাল্টা বাগান দেখতে এসেছেন । তারা মাল্টা বাগান দেখে ও গাছ থেকে মাল্টা কিনে খেতে পেরে খুবই আনন্দিত। এছাড়া তারা মাল্টা বাগান ঘুরে-ছবি তুলতে পেরে খুবই খুশি। উপজেলার উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ভূইয়া স্বপন বলেন, আমাদের এলাকায় আগে মাল্টা চাষাবাদ তেমন বেশী পরিচিতি ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এলাকায় প্রতিটি মাল্টা বাগানে দৃষ্টি নন্দন মাল্টা ধরেছে। ফলন ভাল হওয়ায় মাল্টা আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। লিচু,কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। তবে এ বাগান করতে হলে কৃষককে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন এখানকার মাটি মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপকারী হওয়ায় ফলন ভাল করতে কৃষকদেরকে এ চাষে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি জানায় মাল্টার আবাদ আগামী দিনে অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!