• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা


অরণ্য সৌরভ অক্টোবর ৫, ২০২১, ০১:২৬ পিএম
চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা

ঢাকা : মহামারিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা চাকরি হারানোর কারণে অনেকের বন্ধ হয়ে যায় আয়-রোজগারের পথ। কেউ কেউ বেকারত্বকে গ্রহণ করে ঝরে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নতুন পথের সন্ধান করেছেন। হয়েছেন সফল। ঘুরে দাঁড়িয়ে অনেকে হয়েছেন উদ্যোক্তা। নিজেদের পাশাপাশি আয়-রোজগারের পথ দেখিয়েছেন অন্যদেরও।

চাকরি বা আয়-রোজগারের পথ হারিয়ে উদ্যোক্তা হওয়া দুজনকে নিয়ে লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ

ভেজালমুক্ত খাবারের বন্ধু মুবিন : নারায়ণগঞ্জ শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাকারিয়া মুবিনের। মহামারি করোনায় চাকরি হারায়। এ ছাড়া চাকরির বাজারের দুরবস্থা উপলব্ধি করে নিজ উদ্যোগে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। যে ভাবনা সে কাজ। আয়ুর্বেদিক হিসেবে পড়াশোনার কারণে সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে বেশ জানাশোনা ছিল। তাই ভেজাল ও কেমিক্যালমুক্ত, অরগ্যানিক খাদ্যপণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তরতাজা ফুডস’।

উদ্যোক্তা শুরুর প্রথম দিকটা কঠিন হলেও স্ত্রী ও বন্ধুবান্ধবদের সমর্থনে অতটা কঠিন মনে করেননি তিনি। তবু ভেজাল ও কেমিক্যালমুক্ত খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও সংগ্রহ করার প্রক্রিয়ায় পদে পদে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন।

২০২০ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে ডোমেইন কেনার মাধ্যমে জাকারিয়া তরতাজা ফুডসের পথচলা শুরু করেন। প্রথমে অনলাইনভিত্তিক (ফেসবুক পেজ) কাজ করলেও, অক্টোবরের দিকে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলিতে শোরুম কাম আউটলেটের মাধ্যমে অফলাইনে বিক্রি শুরু করেন।

১০ হাজার টাকার হাতে ভাজা মুড়ি, গরুর ঘানিভাঙা সরিষার তেল ও মেশিনে ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল নিয়ে জাকারিয়ার পথচলা শুরু হলেও এখন শোরুম, ফার্নিচার, প্রোডাক্ট স্টকসহ সবকিছু মিলিয়ে তিন লক্ষাধিক টাকার মতো পুঁজি নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

তিনি মূলত হাতে ভাজা মুড়ি, গরুর ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, মেশিনে ভাঙা সরিষার তেল, পাবনার খাঁটি ঘি, সরিষাবাড়ীর প্যারা সন্দেশ, ময়মনসিংহের চ্যাপা শুঁটকি, কক্সবাজারের লইট্যা শুঁটকি, নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়া, ঢেঁকিছাঁটা মাষকলাই ডালের গুঁড়া, ঢেঁকিছাঁটা আতপ চালের গুঁড়া, সুন্দরবনের কয়েক প্রকারের চাকের মধু, দেশি গাভির খাঁটি দুধ, ইলিশের ডিম, পিংক সল্ট, কালিজিরার তেল, হাতে বানানো অরগ্যানিক নারিকেল তেল, পাটালি গুড়, ঝোলা গুড়, আখের গুড়, গরম মসলা, মিক্সড ড্রাই ফ্রুটস ইত্যাদি পণ্যের সেবা দিয়ে থাকেন।

এসব পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু করার বিষয়ে জাকারিয়া মুবিন বলেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন ভেজাল ও কেমিক্যালমুক্ত খাবার। মূলত মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উদ্দেশ্য থেকেই তরতাজা ফুডসের যাত্রা।

গ্রাহকরা তার পণ্য দুভাবে পেতে পারেন। ফেসবুক পেজ তরতাজা ফুডস ও সরাসরি আউটলেট : এ-১৩০, নতুন আইলপাড়া, পাঠানটুলি, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে।

জামদানি কন্যা ফারহানা : ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফারহানা ইসলামের। সমবয়সি ছেলেমেয়েদের সাথে দুরন্তপনায় কেটেছে শৈশব। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী ও হ্যান্ডবল খুব ভালো খেলতেন বলে স্কুলের সকলের ছিল পরিচিত ও প্রিয়মুখ।

বাবা ব্যবসায়ী হওয়ায় ছোট থেকেই শ্রমিকদের দিয়ে কাজ পরিচালনা দেখতেন। এ ছাড়া মাকে দেখতেন সেলাই মেশিনে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর জামা বানিয়ে পরাতে। তাদের জামা দেখে অন্যরাও জামার কাপড় নিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে জামা বানিয়ে নিতেন।

বাবা ও মায়ের কাজ দেখেই সিদ্ধান্ত বা স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন এমন কাজ করবেন। যদিও সে সময় উদ্যোক্তা শব্দের সাথে তিনি পরিচিত নন।

২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। স্কুল, টিউশনি, কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের সাথেই তার দিন কেটে যেত। কিন্তু সেই সুখকর দিনচলায় বাদ সাধে মহামারি করোনা। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার সাথে সাথে চাকরি হারিয়ে উপার্জন বন্ধেরও যেন ঘোষণা আসে তার পথচলায়। কর্মজীবী হয়ে পড়েন কর্মহীন একজন নারী। সেই কঠিন সময়েই উদ্যোক্তা হওয়ার জুইসই সময় মনে করেছেন তিনি।

তারপর ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদের নির্দেশনা বিষয়ক পরামর্শ পড়তে থাকেন তিনি। সেই পরামর্শ বা নির্দেশনাই যেন এ পথে তার শক্তিকে বাড়িয়ে দিল কয়েকগুণ। তারপর নিজ জেলার দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য জামদানির মাধ্যমে ২০২০ সাথে জুলাইয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন উইমেন’স জোন। এখন তার পুঁজি কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তার কাস্টমাইজ জামদানি দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে।

শুরুটা কিছু জামদানি শাড়ি কিনে এনে সেল করার মাধ্যমে হলেও বর্তমানে তিনি কাস্টমাইজ জামদানি শাড়ি, টু পিস বেবি ড্রেসও করে থাকেন। পাশাপাশি সম্প্রতি উদ্যোগে যোগ করেছেন নিজের ডিজাইনের জামদানি শাল।

নিজ বাসার একটি রুমই তার আউটলেট কিংবা প্রতিষ্ঠান। ফেসবুক পেজ উইমেন’স জোন-এর মাধ্যমে ফারহানা ইসলামের পণ্য গ্রাহকরা পেতে পারেন। র্সূত্র : বাংলাদেশের খবর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!