• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদির আজওয়া খেজুর চাষে বগুড়ায় নতুন সম্ভাবনা


 বগুড়া প্রতিনিধি জুন ১৭, ২০২২, ০৪:২৫ পিএম
সৌদির আজওয়া খেজুর চাষে বগুড়ায় নতুন সম্ভাবনা

বগুড়া : জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় সৌদি আরবের বিখ্যাত আজওয়া জাতের খেজুর চাষ করে সফলতা পেতে শুরু করেছেন মো. আবু হানিফা নামে এক চাষি। সৌদি খেজুর চাষের এই সফলতাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় নয় শতক জায়গার ওপর লাগানো ১৬টি আজওয়া খেজুর গাছের মধ্যে বেঁচে আছে ১৩টি। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে শেরপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালুতে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে খেজুর গাছ লাগিয়েছেন।
 
সম্প্রতি আবু হানিফা নামের চাষি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এই খেজুরের স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণ ঠিক থাকলে এ এলাকার জন্য এটি এক নতুন দৃষ্টান্ত হবে। সৌদি খেজুর চাষের এই উদ্যোগকে সামনের এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
 
নন্দীগ্রাম উপজেলার কড়িরহাট এলাকার আমড়া গোহাইল এলাকায় মো. আবু হানিফার গ্রামের বাড়ি। তিনি পেশায় একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ছিলেন। বগুড়া শহরের চকলোকমান মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদরাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন তিনি সাত ছেলেমেয়ের (৩ মেয়ে এবং ৪ ছেলে) বাবা। স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকছেন পাশাপাশি বাড়ির আশে-পাশে গড়ে তুলেছেন খেজুরসহ বিভিন্ন ফলমূলের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি।

জানা যায়, আবু হানিফা ২০১৮ সালে হজ করে আসার সময় সৌদি থেকে আজওয়া খেজুর এনে সেগুলোর বীজ সংরক্ষণ করেন এবং টবে চারা তৈরি করেন। ২০২০ সালে ৯ শতক জায়গার ওপর ১৬টি চারাসহ মাল্টা, আপেলকুল, বারোমাসি আম, বারি ফোর, কিউজাই, মিষ্টি তেঁতুল, কামরাঙ্গা, আলুবোখারার গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়াও ১ বিঘা জমিতে লিচু, বিভিন্ন জাতের আম, পেঁপে, সফেদা, গোলাপজাম, দারুচিনি, জামরুল লাগিয়েছেন। এ যেন এক মন-মাতানো দৃশ্য, সবুজের বুকে অন্য রকম সবুজ। এক জমিতে বিভিন্ন জাতের ফল চাষ করায় ব্যাপক সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন এ চাষি।

আবু হানিফা জানান, শখের বসে চারা করেছিলেন আজওয়া খেজুরের। মাত্র ৯ শতক জায়গার ওপর ১৬টি আজওয়া খেজুরগাছ লাগিয়েছিলেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বেঁচে আছে ১৩টি গাছ। সেই গাছগুলোর মধ্যে একটিতে প্রায় ২৭-২৮ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম খেজুর বের হয়। চার মাসে বড় হয়ে থোকায় থোকায় খেজুর ধরেছে ও রং পরিবর্তন হয়ে সবুজ থেকে পাকতে শুরু করে লালচে রং ধারন করেছে। আর কিছু দিনের মধ্যে পুরোপুরি খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে। এখন গাছে যে দুটি থোকায় খেজুর ধরেছে তাতে আনুমানিক ৬-৭ কেজি খেজুর পাওয়া যেতে পারে। পরের বছর এর চেয়ে তিন গুণ বেশি খেজুর পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, খেজুর গাছে অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে তার সামনেই বেড়ে উঠেছে এবং ফল ধরছে। এসব তিনি কাছ থেকে দেখছেন। যেদিন প্রথম খেজুর গাছে বাদা বের হয় সেসময় আনন্দের সীমা ছিল না তার। তিনি খেজুরগুলো সব সময় নেট দিয়ে রাখছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় খেজুর বাগান করার চিন্তা রয়েছে তার। পরে ওই চাষ পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু জানান, এ উপজেলায় প্রথম মো. আবু হানিফা সৌদির আজওয়া খেজুর চাষ করছেন। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রহিম জানান, খেজুর মরুভূমির ফসল। এই ফসল চাষের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয়। আর এই চাষের জন্য টিস্যু কালচার পদ্ধতি জরুরি। কেননা এই পদ্ধতির মাধ্যমে গাছগুলোর বেশিরভাগ মেয়ে গাছ হবে। চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যদিও এটা অনেক ব্যয়বহুল ও সব জায়গায় এই ব্যবস্থা নেই। তবে বগুড়ার হর্টিকালচার সেন্টারে টিস্যু কালচার পদ্ধতি চালু করার প্রায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!