• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডেইরী ফার্ম গড়ে স্বপ্ন বুনছেন আনোয়ারা


এম. এস. রুকন, গাজীপুর  নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০৩:৩৪ পিএম
ডেইরী ফার্ম গড়ে স্বপ্ন বুনছেন আনোয়ারা

গাজীপুর: গত ২০ বছরের আগেও দেশে প্রচলিত ছিল নারীদের দায়িত্ব হচ্ছে গৃহস্থালি সকল কাজ সম্পাদনা করা এবং পর্দার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা। অপর দিকে সংসারের প্রধান কর্তা পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে অর্থ উপার্জন করে সংসারের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা।

তবে আশার কথা হচ্ছে, গত কয়েক বছর যাবত গতানুগতিক সেই চিন্তা-ধারণা থেকে বেরিয়ে  এসেছে দেশের নারী সমাজ। নারীরা এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমা আইন আদালতসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায়ও সম্মান জনক পোস্ট, পজিশনে দাপিয়ে কাজ করে চলছে। 

এর পাশাপাশি আবার অনেক নারীরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র সামাজিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং কৃষি ভিওিক পারিবারিক খামার গড়ে তুলে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন।

এবার আনোয়ারা আক্তার নামে এমোনি এক তরুণ উদীয়মান নারী উদ্যাক্তার সন্ধ্যান পেয়েছে সোনালীনিউজ।

জানা যায়, আনোয়ারা আক্তার এর বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়াল বাথান গ্রামে। তিনি সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষে ২০১৪ সালে অনেক ধারদেনা করে ৩ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে মাত্র ১ টি দুগ্ধ গাভী এবং দুইটি গর্ভবতী দুগ্ধ গরু কিনে তার বাড়ির পাশেই স্বল্প জায়গা নিয়ে একটি পারিবারিক মিনি ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলেন।

এ সময়ে এলাকার অনেক লোকজন তার এই উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু এ সময়ে পরের কথা গায়ে না মেখে তিনি তার সংগ্রামী পথচলা বেগবান করতে থাকেন।

এর পর হাঁটি হাঁটি পা-পা করে  দুই বছর পার না হতেই এর মধ্যেই তার সেই স্বপ্নের মিনি ডেইরি ফার্মে সফলতার মুখ দেখতে থাকেন আনোয়ারা আক্তার। এবার তার সফলতা মুখ দেখে তার স্বামী তাকে উৎসাহিত করেন।

খামারের পরিধি বাড়ানোর জন্য। এ লক্ষে তিনি বিভিন্ন উপায়ে ২০১৯ সালে আনোয়ারাকে আরও ৩ টি দুগ্ধ গাভী কিনে দেন। এর পর থেকেই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই নারী উদ্যোগক্তাকে।

ধারাবাহিক সফলতার মুখ দেখে এবার চলতি অর্থবছরে ২০২২ সালে স্বামী স্ত্রী দুই জনে মিলে ডেইরী ফার্মকে পূর্ণ রুপ দিতে একটি এনজিও থেকে ১৩ লাখ টাকা লোন নিয়ে আরও ৫টি গরু ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টিতে। দৈনিক তার ফার্মে দুধ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৫০ কেজি। এই দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে একদিকে লোনের টাকা পরিশোধ করছেন। অপর দিকে সংসারের দুধের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দৈনিক ব্যয় বহন করছেন।

তবে আনোয়ারা এবার স্বপ্ন বুনছেন তার এই পারিবারিক খামারটিকে বাণিজ্যিক খামারে  রুপান্তরিত করবেন। যেনো সমাজের বেকার দুই একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।

অনেকে গরুর খামার গড়ে তুলার আগে গোখাদ্য নিয়ে দু;চিন্তায় পড়ে যান। তবে এই খামারে এসে জানা গেছে, স্বামীর পরামর্শে এই উদ্যাগক্তা বাজারের প্রচলিত দানাদার খাবার এবং খড় গরুর খাবার হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে গরুর স্বাস্থ্য সঠিক থাকছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে।

শুধু গরুর খাদ্য খাদ্য নয় বিভিন্ন পরামর্শ এবং অর্থনৈতিক সকল সহযোগিতা প্রদান করে সব সময় সাহায্য করে চলছে আনোয়ারার স্বামী রাশেদুল ইসলাম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি সোনালীনিউজকে জানান, দেশের প্রত্যেক স্বামীদের উচিত তার স্ত্রীর যে কোন সামাজিক ও মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। তিনি বলেন, তার স্ত্রী অনেক সাহস এবং স্বপ্ন নিয়ে একটি মিনি ডেইরী ফার্ম গড়ে তুলার উদ্যোগ নিয়ে ছিল। স্বামী হিসেবে তাকে সব সময় সকল ধরনের সহযোগিতা ও প্রদান করে উৎসাহ প্রদান করেছেন তিনি।

নারী খামারী আনোয়ার আক্তারের মতে, দেশের নারীরা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে সহযোগিতা পেলে যে কোন পেশায় কাজ করতে সক্ষম তার জলন্ত প্রমাণ এই ডেইরী ফার্ম।


তিনি সোনালীনিউজকে আরও জানান, সরকারি ভাবে নারী খামারীদের জন্য বিশেষ লোন ব্যবস্থা করা গেলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষিত নারীরা কৃষি ভিওিক প্রজেক্টের উদ্যোগক্তা হবেন। এতে করে নিজের পরিবার এবং সমাজের অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়বে।

গাজীপুর জেলার পশু-পাখি খামারের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সরকার যদি নারী খামাররীদের জন্য বিশেষ ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করেন। তাহলে আনোয়ারার মত শত-শত আনোয়ারা দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে তৈরি হবে। অপর দিকে এর সুফলে দেশে নারী জাগরণে যেমন উন্নতি হবে এর পাশাপাশি  দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ ও  শক্তিশালী হবে।

সোনালীনিউজ/এম
 

Wordbridge School
Link copied!