• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘তাঁর প্রতিভার চাইতেও বড় ছিলেন মানুষ আকবর আলী খান’


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২, ০৮:৫৮ পিএম
‘তাঁর প্রতিভার চাইতেও বড় ছিলেন মানুষ আকবর আলী খান’

ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, গবেষক ও শিক্ষক ড. আকবর আলি খান গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার পর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে তার মৃত্যুতে নোবেল বিজয়ী ডাঃ মুহাম্মদ ইউনূস তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন স্টাট্যাস দিয়েছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

ডঃ আকবর আলী খান একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ  ছিলেন এটা নির্দ্বিধায় সবাই স্বীকার করেন। আমার কাছে তাঁর প্রতিভার চাইতেও বড় ছিলেন মানুষ আকবর আলী খান। তাঁর এই মাত্রার মধ্যে কোন খাদ ছিল না। আদিষ্ট হয়ে নানা ভূমিকায় তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে বাধ্য হলেও মানুষ আকবর আলী খান কখনো নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি। শক্তিধর সরকারী কর্মচারী হিসেবে তিনি আজীবন দায়িত্ব পালন করে গেছেন, অথচ একই সঙ্গে তিনি সাধারণ মানুষের অকুন্ঠ ভালবাসা পেয়ে গেছেন। তাত্বিক এবং প্রায়োগিক দিক থেকে যাঁদের সঙ্গে তাঁর মতের অমিল হয়েছে তাঁরা কেউ দাবী করেননি যে তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে যুক্তিটি নিজের দিকে নিয়ে গেলেন। 

তিনি সরকারী কর্মকর্তার একটি আদর্শ রূপ নিজের ভূমিকার মাধ্যমে প্রতিফলিত করতে পেরেছিলেন। তিনি মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন, একই সঙ্গে তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হতে পেরেছিলেন। সরকারী কর্মকর্তার একটি আদর্শ রূপ তিনি নিজের ভূমিকার মাধ্যমে প্রতিফলিত করতে পেরেছিলেন।

নানা কারণে আকবর আলী খানের সঙ্গে আমার পরিচয় তাঁর ছাত্র জীবন থেকে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করার সুযোগ হলো যখন তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলেন। তখন তিনি একই সঙ্গে সরকারের অর্থসচিবও। ১৯৯১ সালের শেষ দিক থেকে ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এর আগে কোন চেয়ারম্যান এত দীর্ঘ সময় ধরে এই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাননি। তিনি দ্রুত গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ডকে নিজের প্রিয় কর্মকাণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। 

তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদেরকে উদ্ভুদ্ধ করলো, আমাদের চিন্তাভাবনা তাঁকে আকৃষ্ট করলো। ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে উদ্দীপনা আসলো। কখনো তাঁর উৎসাহে, কখনো তাঁর সমর্থনে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকে নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নিতে পেরেছিলাম। সেগুলি পরবর্তীতে স্থায়ী রূপ নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল।

প্রত্যেকটা বোর্ড মিটিং আমাদের জন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতো। আকবর আলী খান দেশের মানুষকে কত গভীরভাবে ভালোবাসতেন সেটা পরিচয় পেতাম যখন তিনি গ্রামের গরীব মহিলাদের দৈনন্দিন খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দিতেন, এবং তাঁদের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য নানা চিন্তার অবতারণা করতেন। 

আকবর আলী খানের বিদায়ে আমরা সর্ববিষয়ে জাতির মঙ্গলকামী এমন একজন মানুষকে শুধু নয় বরং কর্ম ও চিন্তার সর্ব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন একজন নিবেদিতপ্রাণ প্রখরবুদ্ধি সম্পন্ন সৎ ব্যক্তিকে হারালাম। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। নতুন প্রজন্ম যেন তাঁর পদচিহ্ন এবং চেতনাচিহ্ন অনুসরন করতে উদ্দীপ্ত হয় এই কামনা করছি।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!