• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ বাহিনী বদলে যাচ্ছে যেভাবে


সোনালীনিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২৮, ২০২০, ০৮:২৪ পিএম
পুলিশ বাহিনী বদলে যাচ্ছে যেভাবে

ঢাকা: পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরি পেতে ১০-১২ লাখ টাকা গুনতে হয়। কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে খরচ করতে হয় দুই-পাঁচ লাখ টাকা। ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার পর প্রথমেই ওই টাকা তুলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন পুলিশের ওই সদস্য। বিগত দিনের এমন বাজে অভিজ্ঞতা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে পুলিশ বাহিনী।

পুলিশে চাকরি করে মাদকের সঙ্গে জড়িয়েছেন—এমন সদস্যদের প্রথমে সতর্ক এবং পরে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এভাবে বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকেই সংস্কারের অংশ হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে—রাজধানীর থানাগুলোতে কোনো বাদী মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না, ঘুষ দিতে হচ্ছে কি না সেটা নজরে রাখা। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে আলাদা সেল খোলা হয়েছে। গত ১০ মাসে মামলা ও সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ৩৬ হাজার ৫৮৭ জন বাদীর সঙ্গে কথা বলেছে এ সেল। এ ছাড়া রাস্তায় পুলিশ যাতে কাউকে লাঠিপেটা ও বুট দিয়ে আঘাত না করে সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, পুলিশকে জনগণের সেবায় কাজে লাগাতে সংস্কারের কাজ চলছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পুলিশ রিফর্মের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে পুলিশ যাতে কাজ করে সে জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

করোনা সংকটে পুলিশের কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত হয়। তবে কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড ও সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যুবককে পিটিয়ে হত্যাসহ কয়েকটি ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এসব ঘটনায় আবারও সামনে আসে পুলিশে সংস্কারের বিষয়টি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন বাদী  যখন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান তাঁকে সম্মান দেখাতে তো আইনের প্রয়োজন হয় না। পুলিশকে অবশ্যই সৎ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ মানুষের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছে সেটা নজরদারি করা হচ্ছে। রাজধানীর যে কেউ আমাদের কাছে ফোন করতে পারেন। প্রতিটি থানার সামনে ডিসি-এডিসিদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। থানায় গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে ভয় না পেয়ে তাঁদের ফোন করুন। দেখুন সহযোগিতা পান কি না?’

পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী পুনর্গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি খসড়া তৈরি করা হয়। সেই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রগ্রাম কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে খসড়া প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ এস এম শাহজাহান। এই কমিটি ওই বছরের মে মাসে কাজ শুরু করে। পরে তারা একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সংস্কার প্রস্তাবটি আজও আলোর মুখ দেখেনি।

ওই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা-উত্তরকালে কয়েক যুগ ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতাবানরা অবৈধ প্রভাবের মাধ্যমে পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। পুলিশ বাহিনীর মুখ্য উদ্দেশ্য ‘জনগণের সেবা করা’ থেকে বাহিনী বিচ্যুত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিল পুলিশ পুনর্গঠন কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ থানায় মামলা দায়ের, তদন্ত ও নিষ্পত্তি পর্যন্ত যেন কোনো হস্তক্ষেপ না হয় সেই উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশে পদায়ন ও পদোন্নতিতে যেন বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, কোনো ঘুষ লেনদেন না হয়, সেদিকেও নজর দিচ্ছেন তিনি। যাঁরা যোগ্য, প্রশিক্ষিত, কর্মক্ষম ও সৎ তাঁরা যেন পদোন্নতি পান সেটাও তাঁর নজরে রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন থেকে বর্তমান আইজিপি বাহিনীকে দুর্নীতি, মাদক ও নির্যাতনের ঘটনামুক্ত সুশৃঙ্খল, কল্যাণকামী হিসেবে পরিচালনার চেষ্টা করছেন। তা ছাড়া বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করছেন তিনি।

ডিএমপি সেল যা করছে: জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ডিএমপি সদর দপ্তরে সেলটি খোলা হয়। প্রতিদিন রাজধানীর ৫০টি থানায় দায়ের হওয়া মামলার কপি চলে আসে সেখানে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জিডির কপিও আসে। সেল থেকে মামলা ও জিডির বাদীকে ফোন করে ১০টি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে থানা পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন কি না বা কোনো পুলিশ ঘুষ চাচ্ছে কি না, থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি না, অনেক সময় ধরে বসে থাকতে হয়েছে কি না, তদন্ত শুরু হয়েছে কি না, পুলিশ অভিযোগ অবহেলা করছে কি না ইত্যাদি।

রাজধানীর একটি থানার ওসি নাম প্রকাশ না করে বলেন, সেল থেকে খোঁজ-খবর নেওয়ার কারণে সবার মধ্যেই একটা আলাদা ভীতি কাজ করছে। এতে মামলার বাদী যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি যে পুলিশ সদস্য মামলাটি তদন্ত করছেন তিনিও আন্তরিকতার সঙ্গেই করছেন। ফলে তদন্তের মানও ভালো হচ্ছে।সূত্র:কালের কণ্ঠ

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!