• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশে পদোন্নতি বঞ্চিতদের ক্ষোভ


সোনালীনিউজ ডেস্ক এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৯:৪২ এএম
পুলিশে পদোন্নতি বঞ্চিতদের ক্ষোভ

এমনকি অনেক জুনিয়রও (কনিষ্ঠ) আছেন এসব পদে। আমার দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তাই জুনিয়র। একজন ১৮তম ব্যাচের (অতিরিক্তি ডিআইজি), আরেকজন ১৭তম ব্যাচের (ডিআইজি)। আগে তারা আমাকে স্যার বলতেন, আমিও স্বাভাবিকভাবে ‘তুমি’ বলতাম। তারা এখন আমাকে স্যার বলেন না, আমিও ‘তুমি’ সম্বোধন করে ডাকি না। কৌশলে কোনো সম্বোধন ছাড়াই দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিই। ১০-১২ বছরের জুনিয়রদের অধীনে একরকম দমবদ্ধ অবস্থায় কাজ করে যাচ্ছি। অথচ এখনো আমি জানি না, কেনো আমার পদোন্নতি হয়নি। আমার বিরুদ্ধে নেই কোনো অভিযোগ বা কোনো ধরনের মামলা-মোকাদ্দমাও।’ নিজের চাপা ক্ষোভ ও হতাশার কথা এভাবেই তুলে ধরলেন পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ঢাকায় কর্মরত পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তা।

আরেক পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা হলেন বিসিএস ১৫তম ব্যাচের। হতাশার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, আমি এসপি হয়েছি ২০০৫ সালে। আমার ব্যাচমেটরা ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি। ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) পালন করছেন। আরও কেউ কেউ অতিরিক্ত আইজিপি হওয়ার অপেক্ষায়। অথচ আমি ১৬ বছর ধরে এসপি পদেই চাকরি করছি। ব্যাচের মেধা তালিকায় ছিলাম ৪০ এর মধ্যে। মেধায় যিনি ৬০ এর পরে ছিল তিনিও এখন ডিআইজি। আমার বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য নেই। তার পরও পদোন্নতি পাচ্ছি না।

শুধু উল্লিখিত দুই কর্মকর্তাই নন, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত অবস্থায় কর্মরত। আবার অনেকে বছরের পর বছর পদোন্নতিবঞ্চনার শিকার হয়ে চলে গেছেন অবসরে। অথচ তাদের সবারই পদোন্নতি পাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল-নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পদোন্নতিবঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেতিবাচক ভাবমূর্তি, সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করতে না পারা ও সিনিয়রদের ‘গুডবুকে’ না থাকার কারণেই যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কৌশলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্তও ন্যূনতম যাচাই-বাছাই করা হয় না।

এ ছাড়া স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতির জন্য কোনো স্থায়ী নীতিমালা বা বিধিমালা তৈরি হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। আর নীতিমালা না থাকায় বঞ্চিতদের লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। কারণ, নীতিমালা হলে পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকবে। ইচ্ছে করলেই যখন-তখন জ্যেষ্ঠদের ডিঙ্গিয়ে কনিষ্ঠদের পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বঞ্চিতদের সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এএসপি থেকে অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতি হয় ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে। ডিআইজি থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয় সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মাধ্যমে। আর ননক্যাডার কর্মকর্তাদের (কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক) পদোন্নতি হয় পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে। পদাধিকার বলে এসএসবির প্রধান থাকেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং ডিডিসির প্রধান হচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ডিপিসির প্রধান এবং এসএসবির সদস্য মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, পুলিশের পদোন্নতি বা পদায়নের জন্য পৃথক কোনো নীতিমালা নেই। নীতিমালার বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। সবাই যেন সুযোগ পায় সে চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অন্যান্য কাডার কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ফলো করা হয়, পুলিশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিষয় ফলো করে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা, সার্ভিস রেকর্ড, এসিআর ইত্যাদি বিবেচনায় এসএসবি এবং ডিপিসির সভায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনের নিরিখে একটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করা হয়।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমি মনে করি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুলিশে অবশ্যই একটি নীতিমালা বা বিধিমালা থাকা উচিত। পুলিশের মতো একটি প্রচীন প্রতিষ্ঠানে যদি পদোন্নতির জন্য পৃথক নীতিমালা না থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই দুঃখজনক।

সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব সিকিউকে মোস্তাক আহমদ বলেন, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন পুলিশের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি, যোগ্যতা, দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগত্যা, এসিআর ইত্যাদি মূল্যায়ন করে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি তালিকা আসত। বড় ধরনের কোনো ত্রুটি না থাকলে আমরা সেটিকেই অনুমোদন করতাম। তিনি বলেন, একেকটি ক্যাডারের চরিত্র একেক ধরনের। সে অনুযায়ী সব ক্যাডারেরই পৃথক নীতিমালা থাকা উচিত। পুলিশে আলাদা নীতিমালা না থাকায় সব ক্যাডারের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে যেসব নীতিমালা আছে সেটাকেই ফলো করতাম। এসএসবিতে সব ক্যাডারে প্রায় একই নীতিমালা ফলো করা হয়। তবে পুলিশ বাহিনীকে আরও দক্ষ ও চৌকশ এবং গতিশীল করতে আলাদা নীতিমালা তৈরি করা যাতে পারে।

সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশে কেবল পদোন্নতি নয়, পদায়নের ক্ষেত্রেও একটি নীতিমালা থাকা উচিত। কেউ এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে জেলার দায়িত্ব পেতে চান। কিন্তু নীতিমালা না থাকায় দেখা যাচ্ছে, একজনই ঘুরেফিরে কয়েকটি জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। আবার অনেকে একবারও সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া নিজস্ব নীতিমালার অভাবে পদোন্নতি ঘিরেও বাহিনীর ভেতর অসন্তোষ রয়েছে। অনেকেই নিজেদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন। নীতিমালা থাকলে এবং তা বাস্তবায়িত হলে এতটা বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকত না। আমি যতটুকু জানি, পুলিশের পদোন্নতি-পদায়নের নীতিমালা তৈরির চিন্তা-ভাবনা চলছে। এটা না হলে পুলিশে হতাশা বাড়বেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মুহূর্তে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরতদের জ্যেষ্ঠতম হলেন বিসিএস সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ব্যাচের কর্মকর্তারা পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৮৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এই ব্যাচের কর্মকর্তা। এ ছাড়া সপ্তম ব্যাচের আরও চার কর্মকর্তা এখনো কর্মরত। তারা হলেন অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান ও ড. মইনুর রহমান চৌধুরী এবং ডিআইজি মুহাম্মদ মাহবুব মুহসিন ও হেলাল উদ্দিন বদরী। এদের মধ্যে নাজিবুর রহমান গ্রেড-১ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ স্টাফ কলেজে রেক্টর হিসেবে এবং একই পদমর্যাদায় মইনুর রহমান চৌধুরী পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত। একই ব্যাচের অপর দুই কর্মকর্তা মাহবুব মুহসিন এবং হেলাল উদ্দিন বদরী ডিআইজি হিসাবে সিআইডিতে আছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা একই পদমর্যাদায় (ডিআইজি) পদে কর্মরত। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে অতিরিক্ত আইজিপি পদে বেশ কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাদের (মুহসিন-বদরী) জুনিয়র অন্তত ১৪ জন কর্মকর্তা এখন অতিরিক্ত আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তাও আছেন।

অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতির প্রসঙ্গ এলেই মুহসিন-বদরীর নাম আলোচনায় আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে তাদের নাম দেখা যায় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন বদরী বলেন, আমাকে কেন দীর্ঘদিনেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি তা বলতে পারব না। এটা পুলিশ সদর দপ্তর বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশে কর্মরতদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ব্যাচের কর্মকর্তারা ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি), সিআইডি প্রধান ও ডিএমপি কমিশনার-তারা সবাই অষ্টম ব্যাচের। তাদের পদমর্যাদা অতিরিক্ত আইজিপি। কিন্তু এই ব্যাচের কোনো কোনো কর্মকর্তা এখনো এসপি হিসাবে কর্মরত। এদের মধ্যে মতিউর রহমান সিআইডিতে এবং আনসার উদ্দিন খান পাঠান বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদায় কর্মরত। মতিউর রহমান এসপি হয়েছেন ২০ বছর আগে। আর আনসার উদ্দিন খান পাঠান এসপি হয়েছেন ১৯ বছর আগে। এখনো তারা একই দায়িত্ব পালন করছেন। মতিউর রহমান চলতি বছর এবং আনসার উদ্দিন খান পাঠান আগামী বছর অবসরে যাবেন। অথচ তাদের ব্যাচমেটদের কেউ কেউ ইতোপূর্বে অতিরিক্ত আইজিপি হিসাবে অবসর নিয়েছেন। এখনো তাদের ব্যাচমেটদের কেউ ডিআইজি, আবার কেউ অতিরিক্ত আইজি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে মতিউর রহমান বলেন, পদোন্নতির জ্যেষ্ঠতার তালিকায় সবসময় আমার নাম থাকে। অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ডিআইজি-এই দুই জ্যেষ্ঠতার তালিকাতেই আমার নাম আছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আমাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এখন অবসরের সময় হয়ে গেছে। এখন আর পদোন্নতি চাই না।

১২তম ব্যাচের যারা অতিরিক্ত আইজিপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যে রয়েছে এসএম রুহুল আমিন, মল্লিক ফখরুল ইসলাম, মো. কামরুল আহসান, মাজহারুল ইসলাম এবং খন্দকার গোলাম ফারুক। এই ব্যাচের অনেকেই ডিআইজি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে কর্মরত। কিন্তু এখনো এসপি রয়ে গেছেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন দোলোয়ার হোসেন মিঞা, আব্দুর রহিম, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে আমাদের রীতিমতো বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন এটা করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। যেহেতু সরকারি চাকরি করি, তাই এ নিয়ে জোরালো প্রতিবাদও করতে পারছি না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৫তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে এএসপি পদে যোগদান করেন ৬৮ জন। এদের মধ্যে এখন কর্মরত আছেন ৬৬ জন। এই ব্যাচে কর্মরতদের মধ্যে একজন অতিরিক্তি আইজিপি (চলতি দায়িত্ব), ১৭ জন ডিআইজি এবং ১৮ জন অতিরিক্ত ডিআইজি। এখনো ৩০ জন এসপি রয়ে গেছেন। অথচ তাদের ডিঙ্গিয়ে ১৭তম ব্যাচের ২০ জনকে এবং ১৮তম ব্যাচের ৯ জনকে ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ দুই ব্যাচ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে অনেককে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ ডিসেম্বর ডিআইজি পদে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে ১১ জনের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদের মধ্যে দুজন ১৭তম ব্যাচের। বাকিরা ১৮তম ব্যাচের। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জ্যেষ্ঠতা তালিকার এক নম্বর সিরিয়ালে ছিলেন হাবিবুর রহমান। আর ৯৩ নম্বর সিরিয়ালে ছিলেন মহা. আশরাফুজ্জামান। জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী দুই নম্বর থেকে ৯২ নম্বর সিরিয়াল পর্যন্ত কাউকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এক এবং ৯৩ নম্বর ছাড়া অন্য যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের সিরিয়াল ছিল যথাক্রমে-১০০, ১০৫, ১০৭, ১১০, ১১১, ১১৩, ১১৫, ১১৭ এবং ১১৮ নম্বর। এ ছাড়া ১৫২ জনের জ্যেষ্ঠতা তালিকার মধ্য থেকে ১৩০ নম্বর এবং ১৪২ নম্বরের পুলিশ কর্মকর্তাকে ডিআইজি পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ জানুয়ারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৯ জনের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ১৮ ব্যাচের। বাকি সবাই ২০তম ব্যাচের। ১৮ ব্যাচের পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম শফিকুল ইসলাম। তার ব্যাচের অনেকেই ডিআইজি পদে কর্মরত। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে যোগ্যতা অর্জনকারীদের তালিকায় তার নাম ছিল ৫৫ নম্বরে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে করা ১৫৫ জনের তালিকার এক নম্বর থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত কাউকেই অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। শফিকুল ইসলাম ছাড়া যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের জ্যেষ্ঠতার তালিকার (পুলিশ সদর দপ্তরের তৈরি) ক্রম ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৮, ৭৯, ৮১, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৬, ৯৭, ১০১, ১০২ এবং ১০৩।

পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১৫তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত-এমন তথ্য জানিয়েছেন একাধিক অতিরিক্ত ডিআইজি এবং এসপি। একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ব্যাচে যারা অতিরিক্ত ডিআইজি রয়েছেন, তাদের ডিআইজি না বানিয়ে ১৭তম ব্যাচের ১৪ জনকে গত বছর ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৪টি ডিআইজির পর খালি হওয়ার পর উচিত ছিল ১৫ ব্যাচের যারা অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন তাদের পদোন্নতি দেওয়া। কিন্তু তা না করে ১৭ ব্যাচ থেকে সবকটি খালি পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো। একজন এসপি জানান, ১৫তম ব্যাচ থেকে যাদের ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের সিরিয়াল ছিল অনেক নিচে। সিনিয়রিটি মানা হলে তাদের ডিআইজি হওয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন. আমাদের ব্যাচে এসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার সময় পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু এসপি পদের উপরে পদোন্নতি যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী হয়নি। মেধা তালিকায় দুই নম্বর থেকেও আমাদের ব্যাচের মীর্জা আব্দুল্লাহহেল বাকি এখনো এসপি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর্জা আব্দুল্লাহহেল বাকি যুগান্তরকে বলেন, পদোন্নতিতে এখন কোনো নিয়ম মানা হয় না। সৎভাবে চাকরি করলে তার প্রমোশন হয় না। যারা অসৎ তাদেরই প্রমোশন হয়।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এমনকি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) গত ২৫ মার্চ আইনের একটি ধারা উল্লেখ করে লিখিতভাবে যুগান্তরকে জানান, ‘আপনার চাহিত তথ্য প্রদান করা সম্ভব হলো না।’
সূত্র: যুগান্তর

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!