• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউন বাড়ছে কিনা সিদ্ধান্ত সোমবার


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৮, ২০২১, ১০:৪২ এএম
লকডাউন বাড়ছে কিনা সিদ্ধান্ত সোমবার

ফাইল ছবি

ঢাকা : দেশে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। এরপরও সর্বাত্মক লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ ধরে রাখতে পারছে না সরকার। এদিকে সচিবদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতানৈক্য। বেশ কয়েকজন সচিব চান, লকডাউন কিছুটা ঢিলেঢালা রেখে মানুষকে জীবন-জীবিকার সুযোগ দিতে হবে। আবার কিছু মন্ত্রণালয়ের সচিব চান, কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে হবে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেও কাজ করছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা নানাভাবে সরকারে চাপ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ২২ এপ্রিল থেকে বাজার ও দোকান খোলার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে। 

অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে কঠোর লকডাউন নিয়ে নানামুখী চাপে পড়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, কঠোর ও ঢিলেঢালা লকডাউন নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও সব সচিবই লকডাউনের বিষয়ে একমত। তাই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে। কারণ, গত বছরের পর একপর্যায়ে করোনার সংক্রমণ কমেও গিয়েছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে করোনার সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। পরপর দু'দিন করোনায় সংক্রমিত হয়ে ১০১ জন করে মারা গেছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিকল্পনা হলো, চলমান লকডাউন আরও সাত দিন বাড়িয়ে এরপর আবার শর্তসাপেক্ষে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দিয়ে চলা। এভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত চলা। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শুরু হওয়া লকডাউন বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে সোমবার বৈঠক করা হবে। সেখানে পুনর্মূল্যায়নের পর সিদ্ধান্ত হবে। চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেখি, এখন কী অবস্থা হয়। সোমবার সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

একাধিক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলমান লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ সময়ে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, তা সুস্পষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ, এর সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও গরিব মানুষের আয়ের উৎস জড়িত।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে এসব নির্দেশনার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত চলাচল ও কাজে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এই বিধিনিষেধে ব্যবসায়ীদের চাপে ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর পর ১৪ এপ্রিল থেকে 'সর্বাত্মক লকডাউন' ঘোষণা করা হয়।

'সর্বাত্মক লকডাউনের' চতুর্থ দিন ছিল শনিবার। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড়। প্রায় সব সড়কেই ছিল রিকশা আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চলাচলও ছিল চোখে পড়ার মতো। বাস-ট্রেনের মতো গণপরিবহন না থাকলেও বাকি সবই যেন স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। ঢাকার অলিগলি আর পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের কার্যক্রম ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। দোকানপাট খোলা, জীবনযাত্রাও কার্যত স্বাভাবিক।

দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা : প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া দোকান মালিক সমিতির চিঠিতে বলা হয়েছে, গত বছর লকডাউনে ব্যবসায়ীদের ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার পুঁজি নষ্ট হয়েছে। এ বছরও ব্যবসায়ীরা রমজান ও ঈদে কিছুটা ব্যবসার আশায় ২০-২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করায় তারা গত বছরের মতো পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ অবস্থায় 'সীমিত পরিসরে' ব্যবসা করার সুযোগ না দিলে তারা পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।

মালিক সমিতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২২ এপ্রিল থেকে পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকান খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। তারা 'স্বাস্থ্যবিধি মেনে' সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ চেয়েছেন। এছাড়া দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি দোকানের ২ কোটি ১৪ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-বোনাসের অর্ধেকের সমপরিমাণ ৪৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ঈদের আগেই ঋণ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এরপরও মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করতে হবে। অনেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যায় কিনা সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সিদ্ধান্ত নেবে।

দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের দুর্বিষহ অবস্থা চলছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।

জানা যায়, কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থা চালু রাখতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চাপ দিচ্ছেন। তাদের চাপের কারণে, গত ১১ এপ্রিলের বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. জাফর উদ্দীন এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে লকডাউন কার্যকরের পরামর্শ দেন।

আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে হলে গরিব মানুষের ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে হবে। তবে এ বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় টানা দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ আছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ এপ্রিলের সভার পর কী হবে, তা পরিপত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ সবাইকে মানতে হবে। জনস্বাস্থ্যবিদদের পূর্বাভাসের বিষয়টি বিশ্নেষণ করে দেখা হচ্ছে। পূর্বাভাসের বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। সূত্র: সমকাল।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!