• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ভূমিকা দেখে এমপি মনোনয়ন!


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১৯, ২০২১, ০১:১৯ এএম
করোনায় ভূমিকা দেখে এমপি মনোনয়ন!

ঢাকা : করোনার উচ্চ সংক্রমণের কারণে সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে করোনায় জনগণের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতার নির্দেশ রয়েছে সংসদ সদস্যসহ (এমপি) তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় করোনাকালে দলীয় সাংসদের কর্মকান্ডের হিসাবনিকাশ রাখা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে করোনাকালের হিসাবের খাতাও গণনা করা হবে। করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মন জয় করার ওপর জোর দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় কোন্দল মেটাতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী ও কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেছেন।

দলের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেছেন, গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় বয়সে অনেক সিনিয়র সদস্যরাও এলাকায় গেছেন এবং ত্রাণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ হওয়ায় এবং কয়েকজন সিনিয়র সাংসদ করোনায় মারা যাওয়ার পর এলাকায় যাওয়ার বিষয়ে ভাটা পড়ে। আবার সাংসদদের অনুপস্থিতি এবং স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দূরত্ব নিয়েও বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও করোনায় সাংসদদের কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। দলের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দলীয় সভাপতি কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের বলেছেন, করোনায় জনগণের পাশে না থাকলে মনোনয়নের সময় বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আসছে নির্বাচনের মনোনয়নে করোনায় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেড়ে যাওয়ায় অনেক এমপি ভয় পেয়েছেন। অনেকেই গত সাত মাসেও এলাকায় যাননি। আবার কেউ কেউ স্থানীয় নেতাদের এড়িয়ে চলেন। সব বিষয় খোঁজ নিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি অনেককে নিজে সতর্ক করেছেন।

তিনি তাদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘এই সংকটে কারা জনগণের পাশে আছে আর কারা নেই, তাদের হিসাব হবে।’ ওই নেতা জানান, শেখ হাসিনার এই হুঁশিয়ারির পর এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এমপিরা এখন সবাই সক্রিয় হয়ে উঠছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। করোনার কারণে যেহেতু অন্য কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নেই, এই সুযোগ কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবেও দেখছে ক্ষমতাসীনরা।

যদিও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই জনগণের পাশে আছে। শুরু থেকেই নেতাকর্মীরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী ও ধনীদের বলেছেন, নিজ উদ্যোগে জনগণকে সহযোগিতা করতে। আমরা সবাই মাঠে আছি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান গতকাল বলেন, ‘দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা শুরু থেকেই দল এবং জনপ্রতিনিধিদের সবাইকে করোনায় জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই জনগণের পাশে আছে। যারা বয়সের কারণে যেতে পারছেন না, তারা প্রত্যেকেই মোবাইলে এবং অনলাইনে এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত আছেন।’

তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকেও ত্রাণ কমিটি করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় প্রতিদিনই কেন্দ্র থেকে দলগুলো ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করছেন।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, করোনার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করছে। এর আগে এত সমন্বিত কাজ আর হয়েছে বলে মনে হয় না।

যারা এলাকায় যেতে পারেনি, তারা সার্বক্ষণিক মোবাইলে এবং অনলাইনের নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যুক্ত আছেন। আসলে মাঠে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে দেখা যায় না। আর কাজ করতে গেলে দু-একটা সমস্যা তো হতেই পারে। তিনি নিজেও এখন এলাকায় রয়েছেন বলে জানান।

গত বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের লকডাউনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

ওবায়দুল কাদের বুধবার সকালে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত করোনাভাইরাস সংক্রমিত সীমান্তবর্তী জেলাসহ মোট ৩০টি জেলা-উপজেলায় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান। তিনি সরকারি বাসভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

এদিকে গত বহস্পতিবার নির্বাচিত সব জনপ্রতিনিধিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদান করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী পাঁচ স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ। করোনা মহামারী মোকাবিলায় নিয়োজিত সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ৬৭ হাজারের অধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য জীবাণুনাশক স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণ, করোনা শনাক্তকরণের জন্য নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করাসহ সব পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া জনগণকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণসহ এ কাজে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে আসছেন।

কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধি এখনো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে করোনা মহামারী মোকাবিলায় নিয়োজিত সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান করা প্রয়োজন।

এ অবস্থায় করোনা মহামারী মোকাবিলায় নিয়োজিত সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সূত্র : দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!