• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিটফোর্ড হাসপাতালের দেড় কোটি টাকার ৩টি মেশিন উধাও


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ২০, ২০২১, ০৫:০৫ পিএম
মিটফোর্ড হাসপাতালের দেড় কোটি টাকার ৩টি মেশিন উধাও

ফাইল ছবি

ঢাকা : রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জন্য কেনা প্রায় দেড় কোটি টাকার তিনটি আলট্রাসাউন্ড মেশিন উধাও হয়ে গেছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে কেনা এসব অত্যাধুনিক মেশিন আসার পরই একটি চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০২৩ ও ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেশিনগুলোর মেয়াদ থাকলেও মাত্র তিন বছর ব্যবহার করার পর প্রথমে মেশিনগুলোকে দীর্ঘ সময় অলস ফেলে রাখা হয়। পরে সেগুলো গোডাউনে পাঠানো হয়। পরে গোডাউন থেকে সেগুলো উধাও হয়ে যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হাসপাতালের একটি চিহ্নিত চক্র মেশিনগুলো বিপুল অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালে শোরগোল শুরু হলে গোডাউনে তিনটি পুরোনো মেশিন রেখে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং ডিপার্টমেন্টের জন্য ২০১৩ সালে স্থানীয় ওয়ার্সী সার্জিক্যাল নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় একটি জি হেলথ কেয়ার ইউএস কোম্পানির আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন ক্রয় করা হয় (মডেল নম্বর লজিক পি৫)। এরপর ২০১৪ সালে একই কোম্পানির আরেকটি মেশিন ৪২ লাখ টাকায় ক্রয় করা হয়। এটি হাসপাতালের স্টক লেজার পৃষ্ঠা নম্বর ৪৭-তে লিপিবদ্ধ রয়েছে। একই বছর আরেকটি মেশিন জিটুজি পদ্ধতিতে চায়নার কাছ থেকে অনুদান হিসাবে আসে (মডেল নম্বর জন কেয়ার কিউ ৩ উহান, চায়না)। এটিও হাসপাতালের স্টক লেজারের ৬৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই মেশিনটির দামও ৪৫ লাখ টাকা বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত প্রতিটি মেশিনের লাইফটাইম ধরা হয় ১০ বছর। কিন্তু মেশিনগুলো ৩ বছর ব্যবহারের পরই সুপরিকল্পিতভাবে মেশিনগুলো কারণ ছাড়াই ফেলে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মেশিনগুলো গোডাউনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মেশিনগুলো প্রধান সহকারী আব্দুর রহিম ভুঁইয়া রিসিভ করেন। এরপর মেশিনগুলো রাতের আঁধারে উধাও হয়ে যায়।

সূত্র বলছে, নিয়মানুযায়ী কোনো মেশিন কন্ডেম বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ওয়ার্কশপের (নিমিউ) বিইআর অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে মেশিনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সারিয়ে তোলার অযোগ্য হলেই তা কন্ডেম করতে হয়। এছাড়া উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে কনডেম ঘোষণার বিধান রয়েছে। বর্ণিত মেশিন ৩টির ক্ষেত্রে কোনো কিছুই মানা হয়নি।

কথা হয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রাশেদ উন নবী বলেন, মেশিনগুলো ২০১৩ ও ১৪ সালে কেনা হয়েছে। এরপর ২০১৭ সালে অকেজো হওয়ার পর কন্ডেম ঘোষণা করার জন্য নিমিউতে চিঠি লেখা হয়েছে। নিমিউ তা কন্ডেম ঘোষণা করেনি। এরপর গত কয়েকদিন থেকে মেশিনগুলো পাওয়া যাচ্ছে না শুনে আমরা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পরে কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলছে, মেশিন আত্মসাতের ঘটনায় হাসপাতালেরই একটি চিহ্নিত চক্র জড়িত। এর মধ্যে প্রশাসনের লোক ছাড়াও কর্মচারী ইউনিয়নে কতিপয় নেতার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। জানা গেছে, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি মেশিন তিনটি মোটা অঙ্কের টাকায় বাইরে বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, হাসপাতালের ড্রাইভার ফরিদ আহাম্মেদ অ্যাম্বুলেন্সে করে গত ৩ নভেম্বর রাত নয়টা, ১১ নভেম্বর সকাল ৮টা ও ১৪ নভেম্বর সকাল ৬টায় হাসপাতালের ২ নম্বর ভবনের নিচে পরিত্যক্ত মালামালের গোডাউনে রেখে দেন। এ বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার বিল্লাল হোসেন বলেন, ওই গোডাউনটির চাবি আমি ছাড়াও আরও কয়েকজনের কাছে রয়েছে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় কোনো মেশিন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

সূত্র বলছে, মেশিনগুলো হাসপাতালে আসার পর থেকেই এগুলো আত্মসাতের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে একটি চক্র। চক্রটি সুকৌশলে অকেজো মালামালের সঙ্গে এগুলো রেখে দেওয়ার টার্গেট নিয়ে বারবার কন্ডেম ঘোষণা করার জন্য নিমিউ বরাবর চিঠি লেখে। নিমিউর প্রকৌলশীরা প্রতিবারই মেশিনগুলো পরীক্ষা করে মেশিনগুলো ভালো আছে এবং এগুলো ব্যবহার করার জন্য তাগিদ দেয়। কিন্তু চক্রটি তা কর্ণপাত না করে সুকৌশলে পরিত্যক্ত মালামালের গোডাউনে রেখে দেয়। আইন অনুযায়ী কন্ডেম ঘোষণার আগ পর্যন্ত পরিত্যক্ত কোনো মেশিন গোডাউনে রাখা অবৈধ। তারপরও রহস্যজনক কারণে ওই মূল্যবান মেশিনগুলো পরিত্যক্ত মালামালের সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়। একটি সূত্র বলছে, চক্রটি মেশিনগুলো ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।

ড্রাইভার ফরিদ আহাম্মেদ বলেন, আমি অফিসের চাকরি করি। অফিস যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে, ওইভাবে কাজ করেছি। আপনার কিছু জানার থাকলে অফিসে যোগাযোগ করেন বলে মন্তব্য করেন। প্রধান সহকারী আব্দুর রহীম ভুইয়া যুগান্তরকে বলেন, মেশিনগুলো যথাস্থানে রয়েছে। আপনি দেখতে চাইলে দেখাতে পারি। এ নিয়ে কোনো সংবাদ না প্রকাশ করার অনুরোধও জানান তিনি।

মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিবেকানন্দ হালদার এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে সরাসরি দেখা করার আমন্ত্রণ জানান তিনি। সূত্র : যুগান্তর।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!