• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত


সোনালীনিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ১৩, ২০২২, ১২:০০ পিএম
অবশেষে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত

ঢাকা: এক বছর চাকরি না করেও অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন আটকে রাখার পর অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত সমন্বিত নির্দেশনা জারি করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কেও অনুরোধ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর চাকরি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে ২ বছর বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সব সরকারি চাকরিজীবীর অবসরের বয়সসীমাও ৫৯ বছর করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য না থাকায় সরকার ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করে। অবসরের বয়স ৫৯ থেকে ৬০ করার আগে যারা অবসরে চলে গেছেন তাদেরও একই সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় আদালত। এ নির্দেশনা দেখিয়ে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এক বছরের বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থেকেও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী একই সুবিধা চেয়ে আসছেন। ২২৭ জন কর্মকর্তার আবেদন এখন পাইপলাইনে রয়েছে। আরও বহুসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী আবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি দপ্তর-অধিদপ্তর কাজ না করা সময়ের অর্থাৎ এক বছরের অতিরিক্ত সুবিধাদি দেওয়া শুরু করে। কিন্তু বেশিরভাগ দপ্তর থেকে জনপ্রশাসনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বিষয়টি সুরাহার তাগিদ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় বিপাকে পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার বেগমকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটিতে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সদস্য করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিনও এ কমিটির সদস্য। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৯ বছর চাকরি করে যারা অবসরে গেছেন তাদের একটা অংশ ৬০ বছর চাকরির সুবিধা পাননি। তারা অনেকেই সুবিধা চেয়ে আবেদন করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

২০১৩ সালে  হঠাৎ করে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের অবসরের সময়সীমা এক বছর বাড়িয়ে  ৬০ বছর নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। সেই ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণ করার আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে যারা ৫৯ বছর অবসর সুবিধা পেয়েছেন, তারাই কেবল এক বছরের বর্ধিত বেতনভাতা দাবি করছেন। ২০১০ সালে ৫৯ বছর অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণের আগে যারা অবসরে গেছেন, তারা এই সুবিধা পাবেন না।

বিষয়টি নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন খাদ্য বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন শিকদার। তিনি গতকাল বলেন, ‘আমরা চাকরি না করে এক বছরের অতিরিক্ত সময়ের অবসর সুবিধা চাইনি। আমরা আদালতের নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে গিয়েছিলাম। কাজে যোগদানের সময় এবং সুযোগ থাকলেও আমাদের যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। সরকারের সচিবসহ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সিনিয়রিটির সমস্যা দেখা দেওয়ায় তারা আমাদের কাজে যোগ দিতে দেননি।’ তিনি বলেন, ‘এটা কারও করুণার বিষয় নয়। বরং মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা, যা আদালতের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির গর্বিত সন্তান। তাদের জন্য ভিন্ন কিছু করা বা বাড়তি সুবিধা প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। এটা তাদের প্রতি সম্মান দেখানো মাত্র। সে ক্ষেত্রে উভয়ের অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা আর অ-মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির মেয়াদকাল এক হলে বিষয়টি অসুন্দর দেখায়।’

২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর নির্ধারণ করার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করা হলে উচ্চ আদালত থেকে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। উচ্চ আদালত থেকে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা কত হবে তা মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি প্রশাসনিক। বিষয়টি বারবার আদালতে না এনে প্রশাসনিকভাবে মীমাংসা করাই শ্রেয়। মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ফের মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু মন্ত্রিসভা বিষয়টি অনুমোদন করেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা কে জানান, বিষয়টির সঙ্গে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। ইতিমধ্যে মামলার বাদীদের অনেকেই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। কিন্তু বিরাট একটা অংশ ৬০ বছর চাকরির সুবিধা পাননি। তারা সবাই এখন বর্ধিত এক বছরের বেতন-ভাতা দাবি করে আবেদন করছেন। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এ কমিটি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিষয়টি অর্থ বিভাগকে জানানো হয়েছে। কী পরিমাণ অর্থ এ খাতে খরচ হতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সময়ে কত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি থেকে অবসরে গেছেন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সূত্র:দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!