• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেলে বসে অস্ত্রের কারবারে ‘আকবর দ্য গ্রেট’


নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২৫, ২০২২, ০৯:৪১ এএম
জেলে বসে অস্ত্রের কারবারে ‘আকবর দ্য গ্রেট’

আলী আকবর প্রকাশ

ঢাকা : 'আকবর দ্য গ্রেট'। অবৈধ অস্ত্রের কারবারে কৌশলী কার্যক্রমে পারদর্শী হওয়ায় গ্রুপের লোকজন এ নামেই ডেকে থাকে আলী আকবর প্রকাশকে। গত বছর নভেম্বরে ঢাকাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ চার সহযোগীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় সে। এর পর থেকেই বন্দি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। কিন্তু সেখানে বসেও সে নিয়ন্ত্রণ করছে অবৈধ অস্ত্রের সাম্রাজ্য। কারাগারের চার দেয়ালের বাইরে সহযোগীদের নানা নির্দেশ ও পরামর্শ দিচ্ছে মোবাইল ফোনে ভেতরে বসেই। অবৈধ অস্ত্রের এ কারবারে এখন তার স্ত্রী শাহিদা বেগমও যুক্ত হয়ে পড়েছে।

আলী আকবর প্রকাশ বন্দি রয়েছে কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ এর যমুনা-১ নম্বর ভবনে। সেখান থেকেই সে স্ত্রী ও তার সহযোগীদের অস্ত্রের কারবার বিষয়ে নানা নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। তবে গোয়েন্দারা তার এ কার্যক্রমে নজর রেখেছেন, যাতে সুবিধাজনক সময়ে জালে আটকানো যায় সবাইকে।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত রোববার সকাল ১১টার দিকে কারাগার থেকে একটি গ্রামীণফোন নম্বর ব্যবহার করে আকবর কথা বলে তার স্ত্রীর সঙ্গে। এর আগে গত শনিবার এবং শুক্রবার সে আরও ভিন্ন দুটি সিম থেকে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। এই মোবাইল ফোন নম্বরগুলো গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, কারাবন্দি অবস্থায় বৈধভাবে বাইরে স্বজনদের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। নাম শনাক্তকরণ অ্যাপস ট্রু-কলারে যাচাই করে দেখা গেছে, ওই তিনটি মোবাইল নম্বরের মধ্যে একটিতে 'কাশিমপুর জেল' লেখা ভেসে ওঠে। ওই নম্বরটি সত্যিই কারাগারের কিনা, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অপর দুটি মোবাইল ফোন নম্বর কারও নামেই সেভ করা নয়। গত রোববার ও সোমবার বিকেলে ওই তিনটি নম্বরে ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। ওই সিম তিনটি কার নামে নিবন্ধন করা; গোয়েন্দারা সে তদন্ত শুরু করেছেন।

আকবরের স্ত্রী শাহিদা বেগম কারাবন্দি স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার কথা স্বীকার করেছে। তবে সে সমকালের কাছে দাবি করে, তার স্বামী তাকে ফোন দিয়ে পারিবারিক খোঁজখবর নিয়েছে। এর বাইরে অন্য কথা হয়নি। কেন তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে- উল্টো সে প্রশ্নও করে সে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কারাবন্দি আকবর গত কয়েক দিনে স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে বলেছে, "পানির ট্যাঙ্কের নিচে একটা 'ছোট মাল' আছে। সেটা মুরাদপুরের বাছাকে দেবা। তোমাকে সে তিন লাখ টাকা দেবে।" ওই নম্বরগুলো ব্যবহার করে আরও অন্তত দুইজনের সঙ্গে কথা বলেছে আকবর। তাদের একজন মঞ্জুর, অপরজনকে মিতা বলে সম্বোধন করে সে। ধারণা করা হচ্ছে, অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির নামও আকবর।

পুলিশ জানায়, গত বছর নভেম্বরের শুরুর দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমের সদস্যরা আলী আকবরসহ চার অস্ত্র কারবারিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এসব গুলির মধ্যে ১০ রাউন্ড ছিল একে-৪৭ রাইফেলের। ওই সময় আকবরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় মো. হোসেন, লালতন পাংখুয়া ও আদিলুর রহমান সুজন। তারা চারজনই কারাগারে।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, এই চক্রের মূল হোতা চট্টগ্রামের মো. হোসেন। চট্টগ্রামে তার 'মফিজুর রহমান আর্মস কোং' নামে বৈধ অস্ত্র বিক্রির দোকান রয়েছে। কিন্তু সে গত চার বছরেও কোনো বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেনি। বৈধতার সাইনবোর্ডে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রিই তার আসল কাজ। গ্রুপটির অন্যতম সদস্য আলী আকবর। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। দীর্ঘ বছর ধরে এই আকবর অবৈধ অস্ত্রের কারবার করছে। তবে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র একবার; ২০১৮ সালে। ঢাকায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে অবৈধ অস্ত্রের কারবার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিল।

সিটিটিসির অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, আলী আকবরের গ্রুপটি মিজোরাম থেকে অবৈধ অস্ত্র আনে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে চোরাকারবারের সময় তারা আগ্নেয়াস্ত্রকে 'গাছ' আর গুলিকে 'কাঠ' বলে থাকে। এদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান তারা। পরে কারাগারে বসেই এক সদস্যের অস্ত্রের কারবারের তথ্য পান তারা। এ গ্রুপটিকে গত পাঁচ বছর ধরে গোয়েন্দারা নজরদারি করে আসছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চল, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গ্রুপ, কুমিল্লা ও ঢাকা পর্যন্ত এ গ্রুপটির নেটওয়ার্ক রয়েছে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার, পার্ট-২ এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, 'কারাগারের বৈধ মোবাইল ফোনে কথা বললেও বেআইনি কিছু বলার সুযোগ থাকে না। এর পরও অপরাধীরা নানাভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আহমেদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ অস্ত্র কারবারে জড়িত আকবর ও হোসেনের চক্রের বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক। এ চক্রটি পারিবারিকভাবেই অবৈধ অস্ত্রের কারবার করে আসছে। এরা কার সঙ্গে, কোথায়, কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে, তা জানতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র : সমকাল।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!