• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিন্ন পথে জাতীয় পার্টি, গোয়েন্দা তথ্যে নজরদারি


নিউজ ডেস্ক মে ১৬, ২০২২, ০৩:০৯ পিএম
ভিন্ন পথে জাতীয় পার্টি, গোয়েন্দা তথ্যে নজরদারি

ঢাকা: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি আবার ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে এমন একটি আভাস পাওয়া গেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের গত কয়েক মাস ধরে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি এমন কথাও বলছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করবে এমন তথ্যও রয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা বলছেন, জিএম কাদেরের কর্মকান্ড যেমন নজরদারিতে আনা হয়েছে; তেমনি তার অনুসারীদেরও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া এরশাদের স্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং তার অনুসারীদের আবার চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে।

এরই মধ্যে গত ১১ এপ্রিল বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহকে।

এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এখনো আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠনের চেষ্টা করছেন। গোলাম মসীহ দলছুট নেতাদের আবারও দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাধিক নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। তা ছাড়া তরুণদেরও দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিদিশাকেও দলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এদিকে মিন্টো রোডে বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন সংস্কারের কাজ চলছে। জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে রওশন এরশাদ দেশে ফিরলে সেখানে উঠবেন। তার বাসভবন ঘিরে জাতীয় পার্টির কর্মকান্ড চলবে।

এবিষয়ে গোলাম মসীহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি অনেক পুরনো একটি দল। রওশান এরশাদের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করা হবে। অতীতে যারা দল ছেড়ে চলে গেছেন তাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। পাশাপাশি তরুণদেরও দলে আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের টার্গেট আগামী সংসদ নির্বাচন।’

দলের চেয়ারম্যানের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোলাম মসীহ বলেন, ‘জিএম কাদের সাহেব যেভাবে কথা বলছেন আমরা তার সঙ্গে একমত নই। তিনি কী নিয়ে কাজ করছেন তাও আমরা জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা দেশে ফিরে এলে সবকিছুই চূড়ান্ত করা হবে। মিন্টো রোডের বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনটি আমরা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে সেখানে উঠতে পারব। একসময় বাসভবনটিতে রাজনৈতিক নেতাদের আসা-যাওয়া ছিল। আবারও সেইদিকে আমরা যাচ্ছি। রওশান এরশাদ চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে আসার কথা রয়েছে।’

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এক পর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দল থেকে বের হয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করেন। তারপর থেকেই জাতীয় পার্টি ভাঙছে। দ্বিতীয় দফায় ফাটল ধরান নাজিউর রহমান মঞ্জু। তিনি আরেকটি জাপা গঠন করেন। সংক্ষেপে নাম দেন বিজেপি। বর্তমান দলটির প্রেসিডেন্ট আন্দালিভ রহমান পার্থ। তৃতীয় দফায় ফাটল ধরান এম এ মতিন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ বেরিয়ে গিয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। তার মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেছেন জামাল হায়দার।

এদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে টানাপোড়েন ছিল। সেটা একসময় কেটেও যায়। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে দলটির নেতৃত্ব জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপার শীর্ষ নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং বিএনপিও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। এ নির্বাচনে মূলত দুটি রাজনৈতিক জোট থাকবে। এর একটি হবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, আরেকটি হবে বিরোধীদের। এই মেরুকরণে জাপা কোন দিকে যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জাতীয় পার্টির এ ছাড়া দলের যে ২৬ জন সাংসদ আছেন, তাদের অনেকে দলের চেয়ে সরকারের সঙ্গেই বেশি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব আঁচ করতে পারছেন যে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলের বর্তমান ভূমিকা সরকারের উচ্চ মহলের পছন্দ নয়। জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সরকারের ‘একনায়ক’ হয়ে ওঠা নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেন জি এম কাদের, যা সরকারি দলের বিরক্তির কারণ হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা বলেছেন, জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের সরকারের নানা সমালোচনা করে আসছেন। সর্বশেষ গত ৩ মে তিনি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনে জোট গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, জাতীয় পার্টি অন্য কোনো জোটে যেতে পারে এমন তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। সেজন্য ভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে। মিন্টো রোডের বাসভবনটি রওশন এরশাদ ব্যবহার করবেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত বছরের নভেম্বরের দিকে অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডে যান রওশন এরশাদ। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে তিনি এখন প্রায় সুস্থ। চলতি মাসের শেষের দিকে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট পার্কে এখন বিদিশা এরশাদ বসবাস করছেন। যার ফলে তিনি আপাতত গুলশানের ৬৭ নম্বর রোডের বাসায় থাকছেন। 

এবিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিরোধী দল। সরকারের সমালোচনা করবএটাই স্বাভাবিক। আমি কোনো মহলকে খুশি করতে কথা বলি না। আমরা সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করি। পাশাপাশি ভালো কাজ করলে তারও প্রশংসা করছি।’ তিনি বলেন, ‘মসীহ সাহেব রওশন ম্যাডামের রাজনৈতিক সচিব হয়েছেন এতে ভয়ের কিছু নেই। তিনি একসময় জাতীয় পার্টি করতেন। আমার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি অনেক অনেক শক্তিশালী।’

গত শনিবার বিকেলে মিন্টো রোডে বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ হওয়া ২৯ নম্বর বাড়িতে দেখা গেছে, সংস্কারের জন্য ইট-বালি ও পাথর আনা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এক দিনের জন্যও বাড়িটিতে ওঠেননি।

নাম প্রকাশ না করে ভবনের দুজন কর্মচারী বলেন, আগামী সপ্তাহে হয়তো কাজ শুরু হবে। তারা শুনেছেন রওশন এরশাদ এখানে বসবাস করতে পারেন। তিনজন পাহারাদার দিয়ে বাড়িটি দেখাশোনা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় বাসার আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। গণপূর্তের কিছু কর্মকর্তা মাঝেমধ্যে এখানে আসেন।

সূত্র-দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!