সচিবালয়ের এও-পিওদের ক্ষোভ বাড়ছে

ঢাকা: সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের (এও-পিও) জন্য সহকারী সচিব পদের এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের নিয়ম আছে। তবে এই নীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পদ আনুপাতিক হারে সংরক্ষণের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

গত ২৫ এপ্রিল সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) পদ সংরক্ষণের বিষয়ে মত দিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটি গঠনের এক মাস পর আজ সোমবার সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের কক্ষে এ-সংক্রান্ত বৈঠক বসছে।

জানা যায়, বৈঠকে সচিবালয়ের ক্যাডারবহির্ভূত কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর প্রতিবেদন জমা দেবে ওই কমিটি। কমিটির সভাপতি হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আনিছুর রহমান মিঞা। সদস্য সচিব জনপ্রশাসনের উপসচিব (উনি-৩ শাখা) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। পদ সংরক্ষণের দাবি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রায় দুইশ এও এবং পিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে সচিবালয় সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) কল্যাণ ফোরামের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একাধিকবার জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়। এ পটভূমিতে গত ২৫ এপ্রিল ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, নতুন করে পদ সৃজন ও ক্যাডার একীভূতসহ নন-ক্যাডার কর্মকর্তার বিভিন্ন যুক্তি আমলে নিয়ে তা সমাধানের কাজ চলছে। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া, তাই আরও সময় লাগবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি প্রতিবেদন দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, ১৯৯২ সালের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সচিবালয়) ক্যাডার একীভূত আদেশে সচিবালয়ের ভিত্তিপদ সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিবের মোট পদের এক-তৃতীয়াংশ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা আছে। বিসিএস (সচিবালয়) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার একীভূত করার সময় গঠিত এসএম আকরাম কমিটির সুপারিশে বলা হয়, ভবিষ্যতে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ সৃষ্টি হলে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য আনুপাতিক হারে পদ বাড়াতে হবে।

প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা এসব নন ক্যাডার পদের ফিডার হিসেবে পদোন্নতিযোগ্য হবেন। ২০১৮ সালে ইকোনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় সহকারী প্রধানের ২৫০টি এবং সিনিয়র সহকারী প্রধানের ১৫৪টি পদ যুক্ত হয়। এতে এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১৩৫টি পদ নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা। আদতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য একটি পদও সংরক্ষণ করা হয়নি।

এ ছাড়া ২০১৮ সালের ২২ মে ১১১টি পদ সংরক্ষণ করে তা থেকে ৩৯টি পদ বাদ দেওয়া হয়। আবার ২০১৮ সালের পর সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ৩০টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। এর এক-তৃতীয়াংশ হিসেবে ১০টি পদ সংরক্ষণযোগ্য। ফলে সহকারী সচিবের (নন-ক্যাডার) বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত আরও ১৮৪টি পদ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচিবালয়ের এও-পিওরা। এছাড়া প্রশাসন ও সচিবালয় ক্যাডার একীভূতের সময় ১৯৯২ সালে এসএম আকরাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উপসচিবের ২৬টি পদ সংরক্ষণের কথা থাকলেও করা হয় মাত্র ৯টি।

পরবর্তী সময়ে উপসচিবের অনুমোদিত পদ বেড়ে যাওয়ায় আনুপাতিক হারে পদ সংরক্ষণের কোটা বেড়ে হয়েছে ৬২টি। একই সুপারিশ অনুযায়ী সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের সংরক্ষিত পদ বাড়িয়ে সংরক্ষণ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে হাত পড়েনি উপসচিব পদে। উপসচিব পদ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সচিবালয় সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) কল্যাণ ফোরাম একাধিকবার আবেদন করেছে। প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাঁরা সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবের ১৮৪টি এবং উপসচিবের ৬২টি পদ বাড়ানোর দাবি করেছেন।

বাংলাদেশ সচিবালয় সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব (ক্যাডারবহির্ভূত) কল্যাণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এফএম তৌহিদুল আলম বলেন, 'প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদ সংরক্ষণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। জনপ্রশাসন সচিব ও প্রতিমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে ফাইল ফেলে রেখেছেন। এতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।'

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন এও-পিও কর্মরত রয়েছেন। এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য ক্যাডারবহির্ভূত মাত্র ২৬৭টি সহকারী সচিব, ৭২টি সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ৯টি উপসচিব পদ রয়েছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে কম। ফলে অধিকাংশ দশম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থেকে অবসরে যাচ্ছেন। এতে তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ৭২ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের জন্য উপসচিবের মাত্র ৯টি পদ রয়েছে। ফলে ৩০ থেকে ৩২ জন কর্মকর্তা উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। যুগান্তর

সোনালীনিউজ/এন