• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাকরিটা সরকারি হবে সেই আশাতেই জীবন পার রহিমের


নিউজ ডেস্ক জুন ১২, ২০২২, ০৯:৫১ পিএম
চাকরিটা সরকারি হবে সেই আশাতেই জীবন পার রহিমের

ডোম আবদুর রহিম।সংগৃহীত ছবি:

ফেনী: লোকটার কাজ মৃত মানুষ কাটা-কুটি। বুক বরাবর ছুরি চালিয়ে দু’ভাগ করে দিতে তার হাতটা একটুও কাঁপে না।কখনো তার ছুরি চলে হৃদপিণ্ডে কখনো শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে। অন্ধকার লাশ ঘরেই কাটে তার দিন-রাত। প্রথমাবস্থায় এ কাজ ভাল না লাগলেও দীর্ঘ দিনে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন। এখন আর ভয় আর শঙ্কা কাজ করে না। লাশ কাটাকুটির কাজটা খুব সহজ হয়ে গেছে তার কাছে।

কাজে ভয় শঙ্কা কাটলেও বুকের ক্ষতটা কাটেনি আবদুর রহিমের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই আকালে মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে এই কঠিন কাজটি করছে মানুষটি। কোনো রকমে হাসপাতালের একটি খুপড়ি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস। আক্ষেপ তার- আশায় আশায় ৩০টি বছর কেটে গেলো চাকরিটা আর সরকারি হলো না। এই আশাতেই জীবনটা পার হয়ে যায়। 

রোববার (১২ জুন) একটি সংবাদ মাধ্যমকের কাছে কষ্টের কথাগুলো প্রকাশ করেছেন ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডোম আবদুর রহিম।

রহিম জানাচ্ছিলেন, এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই তিনি ডোমের কাজ করছেন। চাকরির বয়স ত্রিশ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে হাসপাতালে কত ডাক্তার এলো গেলো, কত নার্স এলো গেলো। কত জনের ভাগ্য বদল হলো, শুধু তার কপালের চিত্রটাই পাল্টালো না। চাকরি করছেন মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে।

রহিম তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চোখের পানিও ঝরিয়েছেন। টানা ৮ বছর কোন বেতন ছাড়াই তিনি লাশ ঘরে চাকরি করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকাই তাকে দিতো না। মৃতদেহের আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে যা দিতো তা দিয়ে কোনো রকমে তার সংসার চলতো। এরপর বেতন ধরা হলো ২ হাজার টাকা। পাঁচ বছর এ দুই হাজার টাকা দিয়েই চলে। ৩ হাজার টাকা বেতন পায় ৭ বছর, ৩২’শ টাকা বেতন মিলে চার বছর। গেল বছর অন্য সহকর্মীদের সাথে আন্দোলনের কারণে বেতন হয় ৬ হাজার টাকা। 

রহিম জানান, হাসপাতালে ডোমের ২টি শূণ্যপদ থাকলেও তার চাকরি সরকারীকরণ হয়নি ৩০ বছরেও। বেসরকারিভাবে আউটসোর্সিং হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এখানেও চরম নির্যাতনের শিকার তিনি। কাগজে কলমে বেতন ২১ হাজার ৩’শ টাকা হলেও দেওয়া হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা যায় ঠিকাদারের পকেটে।

রহিম জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলম ব্রাদার্স তাদের বেতন পরিশোধ করে। ঠিকাদার জানে আলম বেতন দেওয়ার সময় ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে সই করিয়ে বেতন তুলে ৬ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকাটা তিনি নিয়ে যান। রহিম বলেন, এ কাজটা শুধু তার একার সাথে করা হয় না হাসপাতালের কর্মরত আরও ৫৩ জন কর্মচারীর সঙ্গেও করা হয়।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী ঠিকাদার জানে আলমের সঙ্গে ফোনে কথা বললে ঠিকাদার জানে আলম বেতন কম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সব নিয়ম মেনেই বেতন দিচ্ছেন। তার সব ডকুমেন্টসও আছে। সরকারের কাছে থেকে চলতি বছর টাকা এখনও না পেলেও তিনি নিজের কাছ থেকে কর্মচারীদের বেতন চালিয়ে আসছেন।

দীর্ঘ জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষতে কষতে লাশ কাটা আবদুল রহিম বলছিলেন, যে ঘরটিতে থাকি জেল খানাও এর চাইতে ভালো আছে। সন্তানদের এখানেই মানুষ করেছি। অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের খুব বেশি শিক্ষিত করতে পারিনি। কোন রকমে পেটে-ভাতে বড় করেছি। আশায় ছিলাম শেষ জীবনে হলেও চাকরিটা সরকারি হবে। ত্রিশ বছর চাকরি করেও একটা ছেলে এবং একটা মেয়েকে মানুষ করতে পারিনি, এই কষ্ট কোথায় রাখব!

চোখের এক কোনে পানি টলমল করছিলো, আকাশের দিকে তাকিয়ে রহিম বলছিলেন, সমাজের মানুষ ভালো চোখে দেখে না এই কাজকে, অনেকে ঘৃণা করে, সামাজিক কোনো মর্যাদাও নেই তবুও স্ত্রী সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে পেটের দায়ে করে যাচ্ছি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কারণে এ পদে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই ডোমের কাজ করছেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

সূত্র-বাংলানিউজ২৪

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!