• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি

রাস্তায় ভিক্ষা না হয় অনাহারে মৃত্যুর শঙ্কা


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১৪, ২০২২, ০২:৪০ পিএম
রাস্তায় ভিক্ষা না হয় অনাহারে মৃত্যুর শঙ্কা

ঢাকা: বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া-প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির অনলাইন সংস্করণ। রোববার (১৪ আগস্ট) প্রতিবেদনটিতে জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর জনগণের ওপর কী প্রভাব পড়ছে বা তাদের কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে মাত্র এক সপ্তাহ আগে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। সরকার এর দায় চাপিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর। এর প্রতিবাদে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। এই দৃশ্য বলে দিচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামের একজন ট্রাকচালক তার ট্রাকটি নিয়ে একটি পেট্রল পাম্পে অপেক্ষা করছিলেন। ট্রাকটি তিনি শাকসবজি পরিবহনের জন্য ব্যবহার করেন। বিবিসির প্রতিবেদক তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ভয় পাচ্ছেন যে, তাকে হয়তো শিগগিরই রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামতে হবে।

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। ফলে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। ডিজেল-কেরোসিনের দামও ৪২.৫ শতাংশ বেড়েছে।

নুরুল ইসলাম ৯ বছর ধরে একটি পরিবহন কোম্পানিতে কাজ করছেন। অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর দিনাজপুরে বসবাসকারী ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তার নিজ এলাকা থেকে তাজা পণ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসেন। তার দুটি ছোট সন্তান আছে। মা-বাবাকে তার দেখভাল করতে হয়। কিন্তু তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে তার মালিকেরা এখন তাকে পুরো বেতন দিতে পারেন না।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গেলে আমি আমার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না। জ্বালানির দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে, আমি আমার মা-বাবার দেখাশোনা করতে পারব না বা আমার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারব না’।

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি যদি আমার চাকরি হারাই, তাহলে আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করা শুরু করতে হতে পারে’।

বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে অগণিত মানুষ একই রকম দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা জানি, দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু বিদেশে জ্বালানির দাম বাড়লে আমরা কী করতে পারি?’

সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে নসরুল হামিদ বলেন, তার প্রশাসন অতীতে তেলের দাম কমিয়ে রাখতে ভর্তুকি দিয়েছে। কিন্তু এখন আর না বাড়িয়ে উপায় ছিল না।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী দাম কমলে ফের দাম কমানো হবে’।

গত সপ্তাহে জ্বালানির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর দেশজুড়ে পেট্রল স্টেশনগুলোতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। তারা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানান। এ দৃশ্য শ্রীলঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলেও তার দেশ শ্রীলঙ্কার পরিণতি এড়াবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছে দেশটি।

কিন্তু মোসাম্মৎ জাকিয়া সুলতানা নামের এক নারীর জন্য তা অর্থহীন। তিনি তার অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে কোনোমতে বাসভাড়া দিতে পারেন। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচের কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ায় তিনি কেবল প্রয়োজনীয় যাতায়াতটুকু করছেন।

হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাসে তিনি বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। পাশে ছিল তার কিশোরী মেয়ে। তিনি জানান, খাদ্যের বাড়তি দাম ইতিমধ্যে তাকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। জাকিয়া বলেন, ‘শুধু বাসের ভাড়াই বাড়েনি, বাজারে সবকিছুর দামই বেড়েছে। ফলে আমার সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বাসের ভাড়া নয়, রিকশা ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে’।

দিনাজপুরের আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গল্প একই রকম। শিউলি হাজদা নামের এক নারী ধান উৎপাদনকারী এলাকা ফুলবাড়ীর ধানখেতে কাজ করেন। শিউলি বলেন, তিনি যে খাদ্য ফলান, তা কেনার সামর্থ্য তার প্রায় নেই। হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে চাষাবাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে মজুরি পাই তা দিয়ে কোনোমতে চলতে পারি। সবকিছুর এত দাম যে, আমরা আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট খাবার কিনতে পারি না’।

বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় শিউলির মতো মানুষেরা বলছেন, তাদের উপার্জন মূল্যহীন হয়ে পড়ছে।

শিউলি বলেন, ‘সরকার যদি দ্রুত জ্বালানির দাম না কমায়, তাহলে আমরা না খেয়ে মরব’।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!