• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রণালয়-বিভাগের বিচারাধীন সব মামলার তথ্য চেয়ে চিঠি


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২, ০৯:১০ পিএম
মন্ত্রণালয়-বিভাগের বিচারাধীন সব মামলার তথ্য চেয়ে চিঠি

ঢাকা: দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পৃথক আইন উইং চালু করতে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।একই সঙ্গে প্রস্তাবিত কোনো আইন ও নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের আগে নির্ধারিত কমিটির নেতৃত্বে বিদ্যমান ফিল্টারিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে।  

নির্ভুল আইন প্রণয়ন এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশনা বলে জানা গেছে।

এর ফলে আইনের অপব্যবহার করলে সরল বিশ্বাসে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ‘সরল বিশ্বাস’-এর বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত সুশাসন নিশ্চিত করাসহ আদালতে মামলার চাপ কমাতে এ ধরনের বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তার আওতাধীন সব আইন, বিধি, প্রবিধি ও সার্কুলার সম্পর্কে হালনাগাদ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ ও জানতে হবে। যেভাবে প্রয়োগ করার কথা, সেভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কিছুই যেন সংবিধান ও মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষ করে আপিল তামাদি হওয়ার বিষয়টি আর মানা হবে না। সময়মতো আপিল না করার কারণে যদি কোথাও সরকারি কোনো স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায় নিতে হবে।

প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা যাতে মন্ত্রিসভায় ত্রুটিমুক্তভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (আইন) নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে গঠিত এই কমিটিকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে। আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদানসংক্রান্ত এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ প্রধান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সিআর), লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্মসচিব (ড্রাফটিং), জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব (আইন প্রণয়ন), আর্থিক সংশ্লেষ থাকলে অর্থ বিভাগের উপসচিব (বাজেট), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসারকে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা আছে।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১১ মে। এর আগে অনেক সময় ত্রুটিপূর্ণভাবে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত আইন উপস্থাপন করা হতো। এজন্য ভালোভাবে যাচাই-বাছাই বা ফিল্টারিং করে আইন উপস্থাপনের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়। সূত্রমতে, বিদ্যমান কমিটিকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি নতুন নতুন আইন প্রণয়নে যথেষ্ট প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কমিটির ক্লিয়ারেন্স বা সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারবে না। এটি আরও একটি সেভগার্ড।

উচ্চ আদালতে চলমান বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি কমিটিও ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছে। কিন্তু এ উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক মামলায় সরকার হেরে যাচ্ছে। যার অন্যতম কারণ সময়মতো আপিল না করা। আপিল তামাদি হওয়ার কারণে সরকারের অনেক মূল্যবান সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আদালত অবমাননার মামলায় মাঠ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রায় সময় উচ্চ আদালতে উপস্থিত হতে হয়।

এজন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগের যত মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে তার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়/বিভাগ তথ্য পাঠানো শুরু করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রতিটি মামলা পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গাইডলাইন দিচ্ছে। সরকারের স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য একই সঙ্গে সলিসিটর দপ্তরকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কারও গাফিলতির কারণে যথাসময়ে আপিল করা না হলে তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর বর্তাবে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন প্রণয়নের সময় যদি সব দিক বিচারবিশ্লেষণ করে ত্রুটিমুক্তভাবে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন করা যায়, তাহলে তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে। অবশ্য বিধি প্রণয়নসহ এ সংক্রান্ত পরিপত্র কিংবা নির্দেশনা জারির ক্ষেত্রেও খুঁটিনাটি সব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। দেখা গেল অধিদপ্তরের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আইনের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহাত হচ্ছে। এ বিষয়গুলোও মন্ত্রণালয়কে মনিটরিং করতে হবে।

এছাড়া আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, সে বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর মনিটরিং না থাকলে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থে আইনের অপব্যবহার বেড়ে যাবে। এর ফলে সরকার ও জনস্বার্থ দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষ সঠিকভাবে আইনের প্রটেকশন না পেলে আদালতে যেতে বাধ্য হবে। তিনি মনে করেন, আদালতে মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ। সেজন্য এ ধরনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচেতনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তর/দপ্তর ফি দিয়ে সারা বছর আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বেশির ভাগ মামলার ক্ষেত্রে তারা প্রকারান্তরে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে। এজন্য মামলায় সরকারের পক্ষে যেভাবে যুক্তিতর্ক ও তথ্য উপাস্থপন করার কথা, তারা সেটি করেন না। সময়মতো আপিল করার বিষয়টিও ইচ্ছাকৃতভাব এড়িয়ে যান। গোপন এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আইন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকেও যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে যথেষ্ট ম্যারিট থাকা সত্ত্বেও সরকার অনেক মামলায় হেরে যায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়টিও আমলে নিয়েছে। কীভাবে এ চক্রকে প্রতিহত করা যায়, সেটি নিয়ে অনেক প্রস্তাব যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

সূত্র-যুগান্তর

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!