• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্কর্মা দপ্তরের পেছনে বছরে ব্যয় ৫ কোটি টাকা


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ০৪:৩৯ পিএম
নিষ্কর্মা দপ্তরের পেছনে বছরে ব্যয় ৫ কোটি টাকা

ঢাকা: দীর্ঘ সাড়ে ৯ বছর ধরে তেমন কাজ নেই এই দপ্তরের। একরকম অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বেতন-ভাতা, পরিবহন ও দাপ্তরিক ব্যয়, আপ্যায়ন ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে বছরে এই দপ্তরের পেছনে রাষ্ট্রের খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা।

দেশের সব রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি বিদ্যালয় দেখভাল, নানা জরিপ কাজ পরিচালনা এবং শিশুদের স্কুলমুখী করতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’। কিন্তু ২০১৩ সালে রেজিস্টার্ড সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ হলে কর্মহীন হয়ে পড়ে এ দপ্তর।

সাড়ে ৯ বছর ধরে তেমন কাজ নেই এই ইউনিটের। একরকম অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বেতন-ভাতা, পরিবহন ও দাপ্তরিক ব্যয়, আপ্যায়ন ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে বছরে এই দপ্তরের পেছনে রাষ্ট্রের খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পক্ষ চায়, দপ্তরটি বিলুপ্ত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (ডিপিই) ন্যস্ত করতে। আরেক পক্ষের মত দপ্তরটিকে দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার। এ নিয়ে দোটানায় রয়েছে সরকার।

এই ইউনিটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কামাল হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সালে সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হওয়ার কারণে স্কুলে ভবন নির্মাণ, শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের বেতন-ভাতা প্রদানসহ প্রায় সব কাজই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে চলে গেছে। আমাদের কাজ নেই বললেই চলে। তবে আমরা এখন বিভিন্ন কারণে জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া স্কুল ও শিক্ষকদের করা মামলাগুলো মোকাবিলা করছি।’

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি, তারা মামলা করেছেন। এ রকম ৮০-৯০টি মামলা পরিচালনা আর সরকারি বিভিন্ন দিবস উদ্‌যাপন ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই এই দপ্তরের। সারা বছর শুধু হাজিরা দিয়ে একরকম অলস সময় পার করেন কর্মকর্তারা। তবে মাঝেমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা যায়, ১৯৯০ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন’। এই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের জন্য প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ওই বছরের ২১ আগস্ট বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯২ সালের ৩১ নভেম্বর এর নামকরণ করা হয় ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’। এই আইনের অধীনে ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়।

এই ইউনিটের মূল কাজ ছিল বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, দেখভাল করা এবং এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) প্রদান করা। এ ছাড়া ৬-১০ বছরের সব শিশুকে স্কুলমুখী করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত স্থানীয়দের নিয়ে করা হতো সচেতনতামূলক কমিটি। শিশুশিক্ষার অবস্থা জানতে দুই বছর পরপর করা হতো ‘চাইল্ড সার্ভে’ বা ‘শিশু জরিপ’।

বর্তমানে রাজধানীর আবদুল গণি রোডে শিক্ষা ভবনের পঞ্চম তলাজুড়ে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের কার্যালয়। ছয়তলা ভবনের বাকি পাঁচটি ফ্লোরেই রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কার্যালয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এই ইউনিটকে সরে যেতে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে মাউশি।

সাংগঠনিক কাঠামো অনুসারে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের প্রধান হলেন মহাপরিচালক। এ ছাড়া পরিচালকের তিনটি পদ, উপপরিচালকের সাতটি ও সহকারী পরিচালকের দুটিসহ মোট ৫৫টি পদের বিপরীতে ৫২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। 

ইউনিটটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, এখন কোনো কাজ নেই সত্য। সরকার কাজ দিলে কাজ হবে, বিলুপ্ত করতে চাইলে বিলুপ্ত করে দেবে।

নাম প্রকাশে দপ্তরটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেই লক্ষ্য পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। তাই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইউনিটের আর প্রয়োজন নেই। ফলে দপ্তরটি ‘নিষ্কর্মা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, এ দপ্তরের আপাতত তেমন কাজ নেই, এ কথা সত্য। তাই দপ্তরটি নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে। আশা করছি, শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইউনিটটি বিলুপ্ত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে একাধিক চিন্তা রয়েছে।’

সূত্র-আজকের পত্রিকা

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!