• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা যাবেন বিদেশ সফরে!


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২, ০৭:১৯ পিএম
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা যাবেন বিদেশ সফরে!

ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইউরোপ ও এশিয়ার ৯টি দেশে সফরে যেতে চান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সংসদ সদস্যদের এই সফরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কয়েকটি দূতাবাস এরই মধ্যে জোরেশোরে সফরের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আর সফরের তাগিদ জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি থেকে কমিটির সদস্যদের জন্য এসেছে বলে এ আয়োজনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, জানিয়েছেন ইউরোপে অবস্থিত বাংলাদেশের দুটি দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা।

গত ১০ আগস্ট কমিটির ২৯তম বৈঠকে এই তাগিদ দেওয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে দূতাবাসগুলোর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রবাসী অধ্যুষিত সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান ও তুরস্ক সফর করার জন্য অনুরোধ জানান কমিটির এক সদস্য। এ ছাড়া, বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে শ্রমিক ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে বলে কমিটির পক্ষ থেকে বেলজিয়াম, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফর করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয় বৈঠকে।

কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব দেশ সফরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সফর বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির ৩০তম বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, ওই দেশগুলোতে কমিটির সদস্যদের সফর আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাগতিক সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উভয় পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে প্রস্তাবিত সফর আয়োজনের জন্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করছে।

এ ধরনের সফরের ব্যয় সাধারণত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদের জন্য দেওয়া বরাদ্দ থেকে নির্বাহ করা হয়ে থাকে এবং এর সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সংশ্লেষ থাকে বলে সরকারি কর্মকর্তা জানান। তাই করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাষ্ট্রের খরচে ‘কর্মকর্তাদের’ বিদেশ সফর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ঠিক এই সময় এমন সফর আদৌ প্রয়োজন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, সফরের জন্য যে কারণের কথা বলা হয়েছে, তা সরকারের করার কথা। কাজেই এ ধরনের সফর সংসদীয় কমিটির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে এই সফর হলে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু যখন বৈশ্বিক সংকটের কথা বলা হচ্ছে, কৃচ্ছ্রের কথা বলা হচ্ছে এবং বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করে সর্বোচ্চ পর্যায় (প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা) থেকে নির্দেশনা আছে, তখন তারা

নেতার সিদ্ধান্তের অবমাননা করতে পারেন কি না, এটাও দেখতে হবে?’

ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্য— এর বাইরে, সফর কি জনগণের স্বার্থে, না যারা যাবেন, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং সফরের উদ্দেশ্য কতটা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে—এগুলোও পরিষ্কার নয়।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে গত ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাষ্ট্রের খরচে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের কথা বলেছে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে। এই আদেশ পরিচালন বাজেট ও উন্নয়ন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ মে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, বিদেশ সফর আর নয়। যদি বিশেষ কারণে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে যেতে হয়, তাহলেই যাবেন, অন্যথায় নয়।’ পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা শাখার আরেক পরিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মে মাসেই এক পরিপত্রে বলেছে, প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, স্টাডি ট্যুরে অংশগ্রহণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশ সফর পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত  বন্ধ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক সংকট দীর্ঘ হওয়া এবং সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি দেশের মানুষকে আগে থেকে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ করেছেন।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা পরিপত্রের ফাঁকফোকর খুঁজে, ভ্রমণের ধরন পরিবর্তন করে ‘প্রশিক্ষণ’ ও ‘স্বাস্থ্যগত’ কারণ দেখিয়ে অনেকে বিদেশে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিদেশি ‘আমন্ত্রণকারী’ প্রতিষ্ঠানের খরচেও অনেকে বিদেশে যাচ্ছেন।

সূত্র-আজকের পত্রিকা

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!