• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসিআরে ভালো নম্বর সত্ত্বেও পদোন্নতি না হওয়ার কারণ


নিউজ ডেস্ক নভেম্বর ৩০, ২০২২, ০২:৪৪ পিএম
এসিআরে ভালো নম্বর সত্ত্বেও পদোন্নতি না হওয়ার কারণ

ঢাকা: বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) নম্বর দিয়েছেন সর্বোচ্চ, অথচ একই কর্মকর্তা টেলিফোনে মতামত দিয়েছেন নেতিবাচক। যেসব কর্মকর্তা এ রকম স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েছেন, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এ কারণে এসিআরে ভালো নম্বর থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ পদোন্নতি পাননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে, এ ধরনের সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো তারা খতিয়ে দেখছে। এছাড়া ভবিষ্যতে পদোন্নতির সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিষয়টি আরও সতর্কভাবে দেখা হবে। একই সঙ্গে সম্প্রতি উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের আবেদন এসএসবির বৈঠকে রিভিউ করা হতে পারে। এক ধরনের যাচাই-বাছাইয়ের পরীক্ষা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, পদোন্নতি পাওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও কোনো কোনো কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য পারসেপশন থাকার কারণে। আবার কারও বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের চিঠিপত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে সামনে এনে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া বরাবরের মতো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট নেতিবাচক মন্তব্য বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। যে কারণে মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিতদের কেউ কেউ পদোন্নতি পাননি। সম্প্রতি উপসচিব পদে ২৮তম ব্যাচ এবং যুগ্মসচিব পদে ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার পর থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে পদোন্নতি বঞ্চিত ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষের শেষ নেই। কেননা কেউ কেউ পদোন্নতি পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, চাকরিজীবনে কোনো অভিযোগ নেই। বিভাগীয় মামলা তো দূরের কথা, কোনোদিন একটি শোকজও করা হয়নি। পেশাদারির সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে নাম না থাকায় তারা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কয়েকদিন অফিসও করতে পারেননি। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিব্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব কারণে রীতিমতো একধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে তারা দিন পার করছেন।

সূত্র জানায়, পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের বিষয়ে তাদের এসিআর প্রদানকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টেলিফোনে মৌখিক মতামত কিংবা গোপনীয় প্রতিবেদন নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে কারও কারও বিষয়ে নেতিবাচক মতামত থাকায় সবকিছু যথাযথ থাকলেও শেষ পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হননি।

এ বিষয়ে পদোন্নতিবঞ্চিত কয়েকজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরাও এমনটি শুনেছি। স্যাররা বলেছেন, তোমাদের সমস্যা আছে। কিন্তু কী সমস্যা, তা বলেননি। শুধু বলেছেন, তোমাদের বিষয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট আছে। কিন্তু এটা কোনো জাস্টিজ হতে পারে? তাহলে পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে কী লাভ হলো। পদোন্নতি বিধিমালার সব শর্ত যদি ঠিক থাকে, তাহলে পদোন্নতি হবে না কেন। বিশেষ করে কোনো স্যার যদি এসিআরে ৯৫ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বর দিয়ে থাকেন, তাহলে এখন কেন তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করবেন। সংগত কারণে ওনার কাছে জানতে চাওয়া হোক-কেন তিনি এসিআরে এত বেশি নম্বর দিয়েছিলেন।

উপসচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এলাকায় ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। একেবারে রিমোর্ট এরিয়া। কত কষ্ট করে সেখানে সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি, তার সাক্ষী এলাকার মানুষ। এছাড়া যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এলাকায় ইউএনও ছিলাম, তিনিও আমাকে অনেক ভালো জানতেন। কিন্তু পদোন্নতি না হওয়ায় বিস্মিত হয়েছি।’ এই কর্মকর্তা সাহসের সঙ্গে দাবি করেন, ‘কোনো অন্যায় করিনি। অযোগ্যতা হিসাবেও কেউ কিছু দেখাতে পারবে না। অথচ শুধু আমাকে নয়, আমার স্বামীকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।’

অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মেধা তালিকায় ২৮তম বিসিএস-এ যোগাদান করি। বুনিয়াদি এবং আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণে ফলাফলের দিক থেকে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলাম। এসি ল্যান্ড ও ইউএনও হিসাবে সততা, সফলতা ও জনসন্তুষ্টির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিও নিয়েছি। এছাড়া একজন প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকায় ইউএনও থাকাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করি। তিনি আমার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। অথচ আমাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।’ তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আর কেউ যদি কোনো অভিযোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি তদন্ত ও প্রমাণের দাবি তো করতেই পারি।’

আরও একজন নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি কর্মজীবনে সততা ও সাহসের সঙ্গে সব জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি। আমার শ্বশুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী। অথচ আমি পদোন্নতি পাইনি। তবে শেষদিকে রাজধানীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালনের সময় অনেক প্রভাবশালীর রোষানলে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সরকারি স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আইনবিরুদ্ধ কোনো নথি অনুমোদন করিনি। এ কারণে একপর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে আমাকে বদলিও করা হয়। হতে পারে, সেটি আমার অযোগ্যতা। এ কারণে হয়তো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু যদি আমার ধারণা সত্যি হয়, তাহলে তো তদন্ত করে আমার অপরাধ প্রমাণ করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, তার প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। তিনি ন্যায়বিচার পাননি।

প্রায় এক যুগ চাকরি শেষে ২৮তম ব্যাচের উপসচিব পদে পদোন্নতি হয় গত ১ নভেম্বর। এই ব্যাচ থেকে ১৬২ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে ১৮ জন বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা হলেন আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন, সুবর্ণা সরকার, দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মো. মশিউর রহমান খান, তাসলিমা আহমেদ পলি, রাহেলা রহমত উল্ল্যাহ, দাউদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

এদিকে একইভাবে ২ নভেম্বর দেওয়া ২১তম ব্যাচের যুগ্মসচিব পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকজন যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন। যাদের মধ্যে বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তারা হলেন অভিজিৎ রায়, নেওয়াজ আহমেদ চৌধুরী, মো. রাজা মিয়া, এসএম মোস্তফা কামাল, মাছুমা নাছরিন শান্তা প্রমুখ। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বিষয়ে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে তথ্যবহুল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তবে এর মধ্যে মাছুমা নাছরিনের বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবদুল হক। তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এবং স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) ছিলেন।

সূত্র-যুগান্তর

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!