• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ড্যচে ভেলে‍‍’র প্রতিবেদন

মৌসুম শেষের আতঙ্ক ডেঙ্গু


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ৩০, ২০২০, ১২:৫০ পিএম
মৌসুম শেষের আতঙ্ক ডেঙ্গু

ঢাকা : ডেঙ্গুর মৌসুম না হলেও অক্টোবরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। নভেম্বরে একই গতিতে এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গু নিয়ে দুর্ভাবনার কারণ আছে। আর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নিধনে নেয়নি কার্যকর ব্যবস্থা।

হাসপাতালগুলোতে এখন ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৮ জন, বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর ২৮ অক্টোবর ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ১০ জন৷ এরা সবাই ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ৪১টি হসপাতাল ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট দেয়।

আর ১ জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে মোট ৫৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে৷ এই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে৷ মোট চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহ করা হলেও  একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে পর্যালোচনায় নিশ্চিত হতে পেরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় জানুয়ারি মাসে  হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ছিলো ১৯৯ জন৷ কিন্তু গত বছর জানুয়ারি মাসে হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হননি।

এবছরের ফেব্রুয়ারি মার্চেও ডেঙ্গু রোগী গত বছরের চেয়ে বেশি ছিলো। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে ডেঙ্গু রোগী কমতে থাকে৷ এই অবস্থা চলতে থাকে জুলাই পর্যন্ত৷ আগষ্টে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যায়৷ ওই মাসে মোট রোগী ৬৮ জন। একজন মারা যায়। সেপ্টেম্বরে রোগী কিছুটা কমে। ওই মাসে মোট রোগী ৪৭ জন। কিন্তু অক্টোবরে রোগী বেশ বেড়ে যায়৷অক্টোকরের ২৮ দিনে মোট ১৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে৷ এরমধ্যে শেষ সাত দিনে ৫৫ জন।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এই সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে স্বচ্ছ পানি জমে৷ আর তাতে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার প্রজনন হয়৷ কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি৷ তাহলে হঠাৎ করে অক্টোবরে কেন ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেল?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এবার অক্টোবর মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে৷ সে কারণে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে গেছে৷ এটা হয়তো একটা কারণ৷ কিন্তু যে সময়ে ডেঙ্গু বেশি হয় সেই সময়ে করোনার কারণে লকডাউন ছিলো৷ ফলে রোগীরা হাসপাতালে যায়নি বা গেলেও ভর্তি হতে পারেনি৷ ফলে ভর্তি রোগী ওই সময়ে অনেক কম৷ কিন্তু এখন লকডাউন উঠে গেছে৷ হাসপাতালের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হচ্ছে৷ ফলে ভর্তি রোগী বাড়ছে।’ তার মতে, এবছর করেনার কারণে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি৷

গত বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল৷ মোট আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে  মারা গেছে ১৭৯৷ কবিরুল বাশার বলেন, ‘গত বছরের তুলনায়ও এবছর প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিলো৷ এপ্রিল থেকে করোনার কারণে পরবর্তী পরিস্থিতি আর বোঝা যায়নি৷’

চলতি অক্টোবরে এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে ঢাকার ছয়টি এলাকায় কাজ করেছেন কবিরুল বাশার৷ এলাকাগুলো হলো: উত্তরা, গুলশান, শাহবাগ, শাখারীবাজার, গোড়ান ও খিলগাঁও৷ তাতে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ওইসব এলাকায় তিনি এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছেন বলে জানান৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. আফসানা আলমগীর খান অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার জন্য অতিবৃষ্টিকেই দায়ী করেন৷ তবে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ঘরে বসে নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করছেন যা আতঙ্কের কারণ৷ কেউ ডেঙ্গুকে করোনা মনে করছেন৷ আবার কেউ করোনাকে ডেঙ্গু মনে করছেন৷ করোনার সময়ে নানা কারণেই ঘরে বসে চিকিৎসার প্রবণতা বাড়ছে।’

তিনি বলেন, এখন হাসপাতাল পরিস্থিতি ভালো৷ ডেঙ্গুর চিকিৎসারও সুব্যবস্থা আছে৷ তাই যাদেরই লক্ষণ দেখা যাবে তাদের হাসপাতালে যাওয়া উচিত৷ তার মতে নভেম্বর, ডিসেম্বরে বৃষ্টি সাধারণত বৃষ্টি হয়না৷ ডেঙ্গুও কমে যাবে৷

এদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ কিছু লোক দেখানো তৎপরতার মধ্যেই সীমিত আছে৷ উত্তরে এতদিন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাই ছিলো না৷ তারা পরিস্থিতি খারাপ দেখে বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!