• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

‘থ্যালাসেমিয়া’ দেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০২১, ০৮:৫৬ এএম
‘থ্যালাসেমিয়া’ দেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে

ঢাকা: সচেতনতার অভাবে জিনগত রক্তরোগ ‘থ্যালাসেমিয়া’ দেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ এ রোগের বাহক। এখনো এ রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা কম। শুধু অসচেতনতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বাড়িয়ে প্রতিরোধই এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। জিনগত ক্রটির কারণে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে লোহিত রক্তকণিকা ঠিকমতো তৈরি হয় না। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য।

থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতেই প্রতিবছর ৮ মে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্তস্বল্পতার রোগ। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য-‘বিশ্বব্যাপী থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মধ্যে স্বাস্থ্য বৈষম্য মোকাবিলা।’ শিশু জন্মের কয়েক মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

যেমন—ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড দুর্বলতা, বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, জন্ডিস, ঘন ঘন সংক্রামক ব্যাধি হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু থ্যালাসেমিয়ার বাহকরা শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। বাহকদের কোনো চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবা-মা দুই জনেই যদি রোগী হয় তা হলে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার যদি মা-বাবার একজন রোগী হয় অন্যজন সুস্থ হয় তাহলে কিছু সন্তান বাহক হবে, কিন্তু সুস্থ হবে। তার মানে, রোগটি মা-বাবার থেকেই বাচ্চার মধ্যে সঞ্চালিত হয়। তাই যদি বিবাহ করার পূর্বে রক্তের পরীক্ষা করে নেওয়া যায় যে পাত্র বা পাত্রী কেউই বাহক বা রোগী নয় তা হলে রোগটি সঞ্চালিত হতে পারবে না। এটা বাচ্চা মায়ের পেটে আসার পরেও নির্ণয় করা যায়, যা ব্যয় সাপেক্ষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বাংলাদেশে প্রায় ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। বিশ্বে প্রতি বছর ১ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। স্বনামধন্য অরফানেট জার্নাল অব রেয়্যার ডিজিজেস-এ প্রকাশিত ‘থ্যালাসেমিয়া ইন সাউথ এশিয়া : ক্লিনিক্যাল লেসনস ল্যার্ন্ট ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১০-১২ ভাগ মানুষ এ রোগের বাহক।

অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষ তাদের অজান্তে এ রোগের বাহক। দেশে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। শুধু অসচেতনতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত ও বংশগত রক্তরোগ। রোগটি প্রতিরোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা করে নিলে তাদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কি-না তা জানা যাবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সুচিকিত্সা নিশ্চিতে সরকারি উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য আয়রণ চিলেশন থেরাপি চালু রয়েছে। ভবিষ্যতে জিন থেরাপি ও স্টেম সেল থেরাপি চালু করা হবে।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী ডা. এ কে এম একরামুল হোসেন বলেন, এই রোগীদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে নিরাপদ রক্ত। এই রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন হচ্ছে। অন্য সময় আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে ৩০ ভাগ রক্ত সংগ্রহ করতে পারতাম। বাকিটা তাদের অভিভাবকরা কোয়ান্টাম, ব্লাডব্যাংক থেকে সংগ্রহ করত। কোভিডের কারণে সেটা অনেক কষ্ট হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা আসতে পারছে না।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!