• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও তার উপসর্গ


নিউজ ডেস্ক মে ২৫, ২০২১, ১২:২১ পিএম
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও তার উপসর্গ

ঢাকা : করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠার পর ভুগতে হচ্ছে নানা জটিলতায়। শরীরে ঘটছে এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘মিউকরমাইকোসিস’। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে।

মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হলো এক ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ, যা বিরল, কিন্তু বিপজ্জনক। নাক, চোখ ও অনেক সময় মস্তিষ্কেও এ সংক্রমণ দেখা যায়। মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশংকা ৫০%। বাঁচার জন্য অনেককে চোখও ফেলে দিতে হয়। মূলত দুর্বল শরীরেই বাসা বাঁধে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ফলে করোনা রোগীর শরীরে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখনই শরীরে আক্রমণ করে এই ফাঙ্গাল সংক্রমণ।

চিকিৎসকদের ধারণা, স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। কোভিডে গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। স্টেরয়েড কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। করোনাভাইরাসের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন।

কিন্তু এই স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি ডায়াবেটিস নেই এমন কোভিড আক্রান্তদের শরীরের রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে যে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটছে।

মিউকরমাইকোসিস কি : মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, বিষ্ঠা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসব্জিতে।

ভারতের মুম্বাইয়ের চক্ষু চিকিৎসক ড. অক্ষয় নায়ার বলেন, এই ছত্রাক মাটি ও বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। এটি বাতাসের চেয়ে মাটিতে এবং শীত ও বসন্তকালের চেয়ে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন এই আণুবীক্ষণিক ছত্রাকের স্পোরের সংস্পর্শে আসে। সুতরাং এই মিউকরমাইসিটিসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব।

এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, অথবা যারা অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছে কিংবা কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ডা. নায়ার বলেন, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেটা আরো কমে যায়। এর ওপর কোভিড-১৯এর চিকিৎসার জন্য যখন স্টেরয়েড দেয়া হয়, তখন সেটা আগুনে ইন্ধন যোগানোর মতো হয়ে দাঁড়ায়।

ছোঁয়াচে নয় : এই রোগ ছোঁয়াচে নয়। ফলে এটি সরাসরি একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে যেতে পারে না। একমাত্র এই ধরণের ছত্রাকের ছোঁয়ার এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। ক্ষতি করতে পারে ফুসফুস বা সাইনাস, ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে চোখের সমস্যা, সবটাই ঘটতে পারে।

এই রোগের উপসর্গ কি : যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তা পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

চোখ প্রভাবিত করে এই ফাঙ্গাস : বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ফাঙ্গাল সংক্রমণ চোখকেও প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে চোখে ফোলাভাব এবং দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া চোখের লালভাবও এই ছত্রাকের সংক্রমণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

চিকিৎসা : যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) গাইডলাইন বলছে, অ্যান্টি ফাঙ্গাল মেডিসিন ব্যবহার করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসা করা হয়। এসব ওষুধের বেশিরভাগই শিরা পথে দেয়া হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসায় সবচেয়ে প্রচলিত ওষুধের মধ্যে আছে অ্যাম্ফোটেরিসিন বি। এই ওষুধটি সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেরে উঠতে রোগীকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ওষুধ দিতে হতে পারে। তবে, কত তাড়াতাড়ি রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা আরম্ভ করা হয়েছে তার ওপরও এটা নির্ভর করে।

ভারতে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২০০ জনের শরীরে মিউকরমাইকোসিস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির তামিলনাড়ু, গুজরাট, ওডিশা, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা- এই পাঁচ রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

আর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন এমন অন্তত দুজনের শরীরে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!