• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনে নতুন রূপে ফিরছে করোনা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মে ২২, ২০২০, ১০:১৪ পিএম
চীনে নতুন রূপে ফিরছে করোনা

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রূপ বদলে চীনে ফিরে আসছে। আগে দু’সপ্তাহের মধ্যে শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলেও এখন লক্ষণ প্রকাশ পেতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।

অথচ আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যরা সংক্রামিত হচ্ছে। বুধবার চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জিলিন ও হেইলং জিয়াংয়ে নতুন করে দু’জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

উহানে করোনার যে উপসর্গ দেখা দিয়েছিল তা থেকে জিলিন ও হেইলং জিয়াংয়ের করোনার উপসর্গ আলাদা। নতুন করে ছড়িয়েপড়া এ করোনাভাইরাসের গঠনও ভিন্ন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এতে চীনা কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। খবর রয়টার্স ও ডেইলি মেইলের।

চীনের জটিল রোগ বিশেষজ্ঞ কিউ হাইবো বলেছেন, নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের দেহে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগছে দুই সপ্তাহের বেশি।

আগে এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখলেই বোঝা যেত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দু’সপ্তাহ পর কারও শরীরে করোনা নেগেটিভ এলেও পরে তার শরীরে করোনার লক্ষণ ফুটে উঠছে। হাইবো জানান, কারও দেহে করোনা সংক্রমণ হয়েছে বুঝতে দেরি হলে তার পরিবারের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

উহানে করোনা মহামারী মোকাবেলায় অংশগ্রহণকারী ও প্রথম সারির মহামারী বিশেষজ্ঞ হাইবো আরও বলেন, চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গুচ্ছাকারে সংক্রমিত রোগীদের বেশির ভাগ ফুসফুসই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে উহানের রোগীদের হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও অন্ত্রসহ একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া থেকে সংক্রমিত হয়ে আসা রোগীদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটা দেখা গেছে। জিনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ে উত্তর-পূর্বের রোগীদের সংক্রমণ এবং রাশিয়া ফেরত রোগীদের সংক্রমণে মিল পাওয়া গেছে।

চীনের উত্তরাঞ্চলে গুচ্ছাকারে নতুন বিস্তারে সংক্রমিত রোগীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের পৃথক আচরণ লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে উহানে এ ভাইরাস ছড়ানোর সময় যে ধরনের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল, জিলিন ও হেইলং জিয়াংয়ের উপসর্গের চেয়ে আলাদা।

চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, অজানা কোনো উপায়ে ভাইরাসটি পরিবর্তিত হচ্ছে। যা এটিকে দূর করার প্রচেষ্টা আরও জটিল করে তুলছে।

তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেরি হওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। সম্ভবত করোনাভাইরাসের গঠনে উল্লেখযোগ্য বদল ঘটেছে। নয়তো রোগীদের এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে অনেক আগে থেকে। তাই মনে হচ্ছে, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে দেরিতে।

গত মাসে চীনের হাংঝোতে ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি কমপক্ষে ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন জিনগত সংস্করণে রূপান্তরিত হয়েছে। ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে এসব রূপান্তরের বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সম্ভাব্য সমস্যাগুলো এড়াতে এসব বিবেচনা করা প্রয়োজন।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ স্কুলের পরিচালক ও ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক কেইজি ফুকুদা বলেন, তত্ত্ব অনুসারে, জিনগত কাঠামোর কিছু পরিবর্তন ভাইরাসের কাঠামোতে বা ভাইরাসের আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারে।

তবে অনেক মিউটেশন কোনো বিবেচনামূলক পরিবর্তন আনে না। চীনা মিউটেশনের ক্ষেত্রে পরিষ্কার প্রমাণ নেই। মার্কিন গবেষকরা করোনাভাইরাসের ১৪ ধরনের রূপান্তর খুঁজে পেয়েছেন। লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসব রূপান্তরের মধ্যে একটি ভাইরাসটিকে আরও সংক্রামক করে তুলতে পারে।

বন্যপ্রাণী খাওয়া নিষিদ্ধ করে উহানকে ‘অভয়াশ্রম’ ঘোষণা : উহান শহর বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মাংস খাওয়া আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পশুপাখি পালনকারীদের নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। বুধবার বলা হয়, ফার্মের মালিকদের প্রতি কেজি কোবরা ও র‌্যাটল স্নেকের জন্য ১২০ ইউয়ান ও প্রতি কেজি বাঁদুড়ের জন্য ৭৫ ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

উহান নগর কর্তৃপক্ষ মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শহরের সীমানার মধ্যে কোনো বন্যপ্রাণী শিকার ও বাণিজ্য, বেচাকেনা নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে।

গত বছরের ডিসেম্বরে উহান শহর থেকে বিশ্বের ২১৩টি দেশ এবং অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়েছিল করোনাভাইরাস।

করোনাভাইরাসে চীনের ৮২ হাজার ৯৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৪ জন। দেশটির জিলিন ও হেইলং জিয়াং প্রদেশে বুধবার নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।

এর আগে চীনে মঙ্গলবার পাঁচজনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!