• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

সিরিয়ায় এখনও খোঁজ নেই লাখো মানুষের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক মার্চ ২, ২০২১, ০১:৪৬ পিএম
সিরিয়ায় এখনও খোঁজ নেই লাখো মানুষের

ঢাকা : সিরিয়ায় ১০ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ চলাকালীন বন্দি হওয়ার পর লাখো বেসামরিক লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি হয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার সময়েই মারা গেছেন বলেও তারা জানিয়েছেন। দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন এক রিপোর্টে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দিদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার তো বহু মানুষ হয়েছেনই, বলৎকার হয়েছে ১১ বছর বয়সী বালকেরা, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ বয়সী কিশোরীদের সঙ্গে।

এসব ঘটনা ‘জাতীয় মানসিক আঘাত’ হয়ে আছে এবং এগুলোকে অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে বলে ওই প্রতিবেদনে বরাত ‍দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ সাক্ষ্যর উপর। এ ছাড়া আটকের পর একশটির বেশি ঘটনার ভিত্তি ধরে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। এতে দেখা যায় সিরিয়ায় সক্রিয় সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।

কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেইরো বলেন, সরকারি বাহিনী একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে যে এই সংঘাতের মূল উৎস। সশস্ত্র গ্রুপগুলো এবং জাতিসংঘ কর্তৃক চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো (হায়াৎ তাহরির আল শাম ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ) এরপর মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া ও একই ধরণের জঘন্য ঘটনা ঘটাতে শুরু করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক ছিলেন এমন বহু মানুষ মাসের পর মাস দিনের আলো দেখেনি। খেয়েছেন বাসি খাবার, নোংরা পানি পান করেছেন। থেকেছেনও তার মধ্যে। রণক্ষমতার অতিরিক্ত সেলে তাদের রাখা হয়েছিল। এসব সেলে টয়লেট সুবিধা যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না কোনো চিকিৎসা সুবিধা। সরকারি কারাগারগুলোতে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, যে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অন্তত ২০টি উপায়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো। হায়াৎ তাহরির আল শাম পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে যাদের আটক রাখা হয়েছিলো তাদেরকেও অত্যাচার করা হতো।

বিচার ছাড়াই বা কমিশনের মতে সামরিক আদালত বা বিকল্প আদালতে বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের নামে অনেক আটক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। আটক অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সরকারি হেফাজতেই। নিহতদের বিভিন্ন গণকবরে দাফন করা হয়েছে যার দুটি অন্তত দামেস্কের শহরতলীতেই। তবে সরকার ও হায়াৎ তাহরির আল শাম বন্দীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাওলো পিনহেইরো বলছেন, এটি একটি ‘ন্যাশনাল ট্রমা’ যার দিকে সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

জাতিসংঘের এই কমিশন সব দেশকে অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে এবং গত সপ্তাহে জার্মানির একটি আদালতের রায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যেখানে সিরিয়ার একজন সাবেক কর্মকর্তা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মার্চ মাসে সরকারবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সিরিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যায়। সেই  লড়াইয়ে অন্তত তিন লাখ ৮০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেক বাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হয়েছিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!