• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ংকর তালেবান স্নাইপার এখন বিনয়ী সরকারি কর্মকর্তা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক আগস্ট ১০, ২০২২, ০৩:১০ পিএম
ভয়ংকর তালেবান স্নাইপার এখন বিনয়ী সরকারি কর্মকর্তা

তালেবান সৈনিক আইনুদিন। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা: দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে আতঙ্কের নাম ছিল তালেবান। সরকারি বাহিনী, পশ্চিমা সেনা কিংবা জনগণ কেউই রক্ষা পায়নি তাদের হাত থেকে। কখনো সম্মুখ যুদ্ধ, কখনো আড়ালে থেকে তীক্ষ্ণভাবে শত্রু পক্ষের শরীরে গুলি বিঁধিয়ে দিত তালেবান সৈনিকরা।

তবে গত বছর আগস্টে তালেবান যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতা নেয়, তখন অনেক বাসিন্দার জীবন বদলে যায়। একদিকে দেশ ছেড়েছেন হাজার হাজার আফগান। বন্ধ হয়েছে মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া। বেড়েছে দারিদ্র্য।

অপরদিকে খাদের কিনারে থাকা দেশকে টেনে ওপরে তুলতে রাইফেল ছেড়ে চেয়ার টেবিলে বসে বিনয়ের সাথে জন সেবায় কাজ করছেন তালেবান যোদ্ধারা। ফলে দুই দফায় চার দশকের বেশি সময় পরে দেশটি প্রথমবারের মতো সহিংসতায় নিমজ্জিত নয়। এমনকি হ্রাস পেয়েছে ব্যাপক দুর্নীতিও। যুদ্ধের ময়দানের মতো দায়িত্ব নিয়ে সেখানে কাজ করছেন সাবেক যোদ্ধারা। 

এমনই একজন আইনুদিন। তালেবানের তরুণ এক যোদ্ধা। একদম কিশোর বয়সেই তিনি শিখেছিলেন স্নাইপার চালানো। এক বছর আগেও যিনি কাঁধে রাইফেল আর জীবন ‘হাতে’ নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন আফগানিস্তানের বনেবাদাড়ে, খানাখন্দকে। কুখ্যাতি আছে, এই যোদ্ধা বিনা দ্বিধায় গুলি করে হত্যা করেছেন বহু সাধারণ মানুষকে।

এক সময়ে যিনি রাইফেল হাতে যুদ্ধ করেছেন তিনিই এখন বলখ প্রদেশের ভূমি ও নগর উন্নয়নের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের আগে আইনুদিনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল বিবিসি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, আমরা বেসামরিক লোকদের ক্ষতি না করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু লড়াইয়ে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়।

তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সহিংসতা কোনোভাবে ন্যায্যতা পায় কি না। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এখানে আফগানিস্তানে ইসলামি ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করব না। সেজন্যে কিছু ছাড় দিতে হতে পারে।

ওই সময় আইনুদিন বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তিনি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। এমনকি অন্তত ১০ বার তিনি নানাভাবে আহতও হয়েছিলেন।

গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আইনুদিন লখ প্রদেশের ভূমি ও নগর উন্নয়নের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ইসলামিক আমিরাতের বিশাল সাদা এবং কালো পতাকা নিয়ে কাঠের টেবিলের পিছনে বসে নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি আবারো তার সাথে কথা বলেছে বিবিসি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি এতদিন যে জিহাদ করেছিলেন তা মিস করেছেন কিনা?

আইনুদিনের জবাব, হ্যাঁ। 

তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্দুক দিয়ে আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলাম। আল্লাহকে ধন্যবাদ আমরা তাদের পরাজিত করেছি। এখন আমরা আমাদের কলম দিয়ে আমাদের জনগণের সেবা করার চেষ্টা করছি।

আইনুদিন বলেন, আমি লড়াই করার সময় খুশি ছিলাম। এখনো খুশি।

যদিও আইনুদিনের তত্ত্বাবধানে থাকা বেশিরভাগ কর্মীই বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। ফলে তালেবান যোদ্ধাদের সাথে তাদের কিছুটা দূরত্ব এখনো রয়ে গেছে।

আইনুদিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সে এই পদের জন্য যোগ্য কিনা। এর জবাবে তিনি বলেন, যদিও আমরা একটি সামরিক পটভূমি থেকে এসেছি, এখন এই ক্ষেত্রে কাজ করছি। তবে আপনি আগের সরকারের সাথে ফলাফলের তুলনা করতে পারেন এবং দেখতে পারেন কে ভালো ফলাফল দিয়েছে।

তিনি বলেন, গেরিলা যুদ্ধের কষ্টের তুলনায় শাসন করা কঠিন। যুদ্ধ সহজ ছিল, কারণ সেখানে দায়িত্ব কম ছিল।

যদিও অনেক তালেবান যোদ্ধাই অফিস-ভিত্তিক ভূমিকায় মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পোহাচ্ছেন বলে জানান।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!