• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
মাহমুদ শাওনের পাঁচটি কবিতা

আমাদের দুঃখগুলো একদিন ঘুড়ি হবে


মাহমুদ শাওন আগস্ট ৩, ২০২১, ০৬:৪৭ পিএম
আমাদের দুঃখগুলো একদিন ঘুড়ি হবে

ছবি (প্রতীকী)

একবার চেয়েছে যে

একবার চেয়েছে যে তোমারে
সে জানে ব্যথা; কেমন আঁধারে
একবার পায়নি যে তোমারে
ছুঁয়েছে সে মন; পারেনি শরীরে
কাঁদবে তুমি তবে কার তরে হে!
যে ডুবে প্রতিরাতে ঠোঁটের শরাবে;
তাকে কভু তুমি কি চেয়েছো আগ্রহে
ঠোঁট-মন-শরীর-গ্রীবা সে-ই ছোঁবে।
 

আমাদের পথগুলো একদিন নদী হবে
 
আমাদের পথগুলো একদিন নদী হবে,
কচুরিপানার মত ভেসে বেড়াবে বিপত্নীক কষ্টগুলো,
ক্ষুধার্ত চিলের মত উড়ে বেড়াবে;
না বলা কথার শব্দরা-
দূর থেকে আলোর হাতছানিতে ভবিষ্যত ডাকবে আমাদের
বেঁচে থাকার সম্বল নুড়ি পাথরের মত পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে।

আমাদের দুঃখগুলো একদিন ঘুড়ি হবে,
তোমার হাতে থাকবে নাটাই,
ভালোবাসার নোঙরে আটকে রবে আমাদের চেনা যত কথার লতা,
হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে আমাদের অনাগত সব বসন্ত,
শীতের ধোঁয়ায় জড়িয়ে রবে ঝাউ বনের মুক্ত জীবন।

একদিন চেনা নদীর পাড়ে আমাদের বাস হবে,
আনন্দের এক নিগূঢ় আশ্রমে চাষ হবে সুখের,
তোমার আমার, আমার তোমার, দু’জন দু’জনের;
নদী ভাঙনে সৃষ্টি হবে নতুন কোন চর,
ঘুঘুর গানে আমাদের রাত নামবে,
ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে দিন ফুরিয়ে যাবে,
থাকবে না কোন প্রতিক্রিয়াশীল উন্মাদ গ্রীষ্ম,
শিউলিফুলের ঘ্রাণে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়বে জোছনা,
জোনাকিরা তারার সাথে জলকেলি খেলবে,
অন্ধকার হলে আমি তোমাকে দেখবো;
তুমি আমাকে দেখবে,
সুতোহীন ধবল আলোর সাগর যুগলে পাড়ি দিবো সারারাত
আমাদের পথগুলো একদিন নদী হবে,
কচুরিপানার মত ভেসে বেড়াবে বিপত্নীক কষ্টগুলো
ক্ষুধার্ত চিলের মত উড়ে বেড়াবে;
না বলা কথার শব্দরা।
 

আমার সাথে বুড়ি হবি

দিন হাঁটে আলোর পায়ে, অসময়ে পুড়ছে খই
বুকের পাশে হাত রেখে দেখি, একি তুই কই
বর্ষা এবার নেবে বিদায়, থাকিস পাহারায়

ভিজবি না-কি, বললি কবে, ভুলে কি গেছিস
বৃষ্টি হবে দুপুরে; বসবো, কুশন পেতে দিস
একটু হবো প্রেমিক আমি, কিছু অসভ্যতায়

তোর গায়ের গন্ধে উড়ে, টাল ঘুড়ির মত করে
পশম জানায় শিহরণ, হামি খায় মন বেঘোরে
পেয়েছি আজ কাছে তোরে, আমাকে কে পায়

রোদের নিচে রেলগাড়ি, বৃষ্টি হবে ইলশেগুঁড়ি
বয়স কত আর! ষোল হলো পার, হবি কি বুড়ি
আমার সাথে, পাশে শুতে, এক বিছানায়


কতদূর

জমে থাকা বারুদের মত মেঘের
আওয়াজে ভেসে আসে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের নির্যাস,
পিচ ঢালা পথের ধুলোর সাথে উড়ে আসে
বেওয়ারিশ অনুভূতির জাহাজ,
যে জাহাজের নাবিক ছিলো আনাড়ি এক প্রেমিক-
অকস্মাৎ জাহাজ থেকে লুট হয়ে গেলো ভালোবাসার উপাখ্যান,
ভালোবাসার শাল দুধে বেড়ে উঠা শিশুর বুক তখন রক্তাক্ত
চারপাশে অপূর্ণ ইচ্ছেদের পাতা ঝরার গান,
কেউ রেখে গেলো হারমোনিকায় বিচ্ছেদের সুর
অভিমানের স্তব্ধ লিরিক
শূন্যে উড়ছে প্রকাশিত সকল পুরনো চিঠি,
মজ্জার মতন নিংড়ে বের হয় চোখের মনি,
বুকের অন্তঃস্থলে কারোর বাস ছিলো,
উপড়ে ফেলে দিলো কোন দ্বৈত সত্ত্বার গাছ,
কোন দূরে বসবাস তোমার,
নেটওয়ার্ক বিহীন,
চলাচলের রাস্তায় কেউ নেই,
আদৌ কি কেউ ছিলো সেখানে?
 

শূন্যে আমরা পূর্ণ

আমরা যখন পাশ ফিরে ঘুমিয়েছি
আমাদের মাঝের দূরত্ব ছিলো নবজাতক,
অভিমানের শালদুধ তার আহার;
দূরত্ব ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলো,
টের পাইনি কেউই।

কত পথের উপেক্ষা পেরিয়ে আমরা এক বৃন্তের ফুল হলাম, মনে নেই?
পাতা ঝরা সন্ধ্যায় রজনীগন্ধায় ম্লান হতো আমাদের দুঃখগুলো,
ভালোবাসতে শিখেছি দু’জন, কাছে এসেছি,
ছুঁয়ে দেখেছি মনের ধারা;
ভিজেছি-শুকিয়েছি-গড়িয়েছে জল, তোমার মোহনায়-
চেখে দেখেছি ঠোঁটের করিডোরে জমে থাকা প্রেমাবেগ,
বিষণ্ণতার আবরণে লুকিয়ে গেছে শেওলা,
হীরক চূর্ণ বিবাদের আশ্রয়ে আশ্রিত ছিলো আমাদের নদীপাড়ের প্রেম,
জলের গভীরতা মাপতে গিয়ে হয়ে গেছি ডুবুরী,
কাদাজলে মেখে গেছে জলরঙের যত আবেগ,
শূন্যতার ভারে নুয়ে পড়েছে বৈকালিক কফিন।
ফাগুনের প্রথম বরষায় আমাদের একসাথে ভেজার কথা ছিলো,
শীত আসে বসন্ত যায়,
ডিসেম্বরের শহরে উপচে পড়ে নভেম্বর রেইন,
দূরত্ব ততদিনে তরুণ,
বার্ধক্যের গণ্ডি পেরিয়ে কফিনে তার পা,
অচেনা হবার পরে দূরত্বের হয়েছে মৃত্যু।

আমরা যখন পাশ ফিরে ঘুমিয়েছি
আমাদের মাঝের দূরত্ব ছিলো নবজাতক,
অভিমানের শালদুধ তার আহার;
দূরত্ব ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলো,
টের পাইনি কেউই!

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!