• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
রম্যগল্প

একটি তৈলাক্ত তেগল্প


মাহবুব নাহিদ  সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০১:০৩ পিএম
একটি তৈলাক্ত তেগল্প

ছবি (প্রতীকী)

ঢাকা : তেলোন্ডি তন্ডন তেল বাজে তনতন, এক দুই তিন
তেল তেল তেলানি তেলের কত দাম!
নানান নামের তেল আছে নানান তার গন্ধ,
তেলের দাম বেড়ে গেলে রান্না, গাড়ি বন্ধ!
বিকল্প বানাতে এসেছে গ্যাস! 
এই থাকে এই থাকে না, রান্নায় লাগে বাঁশ।

তেল হাতে হয় না করমর্দন কিন্তু তেলের আছে বিরাট এক মর্দন।

তেলের ইংরেজি Oil এর ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করা যায় ১১৭৬ সালে যা পুরাতন ফরাসি শব্দ oile থেকে আসে। oile এসেছে লাতিন oleum থেকে। অলিয়াম এসেছে গ্রীক  (এলায়ন) থেকে যার অর্থ জলপাই তেল আর এলাইয়া অর্থ জলপাই গাছ বা ফল।

হইছে ভাই থাম, এইডা দিয়ে ওইডা আইছে ওইডা দিয়ে এইডা আইছে! আর কত?

বিজ্ঞানীদের মতে, তেল এমন কোন বস্তু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এটি পানির সাথে মেশে না; অথচ জৈব দ্রাবকের সাথে মিশে যায়। তেলে উচ্চমাত্রার কার্বন এবং হাইড্রোজেন রয়েছে।

এইটা কোনো কথা? পানির সাথে মেশে না মানে? তরকারিতে রান্নার পরে পানি আর তেল আলাদা করার ক্ষমতা কারো আছে?
ভুয়া কথা, মানি না মানব না!

তেলকে সাধারণত বিশেষজ্ঞরা তিন ভাগে ভাগ করেন, খনিজ তেল, জৈব তেল, সিনথেটিক তেল। এই কথাও আমি মানি না, কেন মানি না সেই বিশ্লেষণে পরে আসি।

আগে জানি বিজ্ঞানীরা তেলের ব্যবহার হিসেবে কী কী বলেছেন!
• মাথার চুলের যত্ন নিতে
• জ্বালানি হিসেবে
• বিদ্যুত উৎপাদন খাতে
• পিচ্ছিলকারক (তৈলাক্তকরণ)
• চিত্রকর্ম অঙ্কনে
• প্রোটোকেমিক্যাল
• ভোজ্য তেল
এটা আমার লেখা না, বিজ্ঞানীরা লিখছে এগুলো সব মাথার উপর দিয়ে গেছে। 

আমি একটু আমার মতো তেলের প্রকারভেদ আর কাজবাজ নিয়ে বলি।
তেল যেখান থেকেই আসুক যেখানেই যাক তেল বেকার নয়, তেল উচ্চমার্গীয় ছয় ডিজিটের বেতনধারী কর্মকর্তা!

এক তেল আমরা খাই, কেউ কাঁচা খাই, কেউ পাকা খাই! তেল আবার পাকায় কীভাবে? এটা বিশাল প্রশ্ন! পাকানো হয় মূলত রান্নার মাধ্যমে। রান্নার জন্য সাদা, কালো, লাল, নীল মোটামুটি বেনিয়াসহকলা রঙের তেলই আছে! সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখী, মেথি কোনো কিছুকেই ছাড়া হবে। সবার একদম তেল বের করে ছাড়বে এবার! 

গ্রাম দেশে একটা ধাঁধা আছে, আমি মাছ কাটি, মাছের নাম কী? কী তেল দিয়ে রান্না করব? আমার বাচ্চা কোলে নাই কেন?
উত্তর-রয়না!

তেল একটা ফ্যাট নাকি ফ্যাট একটা তেল সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে সকল তেলই ফ্যাট কিন্তু সকল ফ্যাট তেল নয়। যদিও এখন নো ফ্যাট তেলও বের করা হয়েছে!

কথায় বলে তোর একদম তেল বের করে ছেড়ে দিব! অনেকে অবশ্য ঘামই তেল! কিছু তেল আবার অদৃশ্য! বের হয় কিন্তু দেখা যায় না!

তেল আবার বিভিন্ন জিনিস থেকে বের হয়, অনেক কিছু রান্না করলে তেল বের হয়! অনেক মাছ আছে যেই মাছ ভেজে সেই মাছের তেল দিয়ে আবার মাছ রান্না করা যায়!

সিনথেটিক এক ধরণের তেল আছে যা যেকোনো কিছুকে নরম করতে সাহায্য করে! যেমন মেশিনের তেল! মেশিনের কার্যক্রম মসৃণ রাখার জন্য তেল ব্যবহার করা হয়।

গাড়ি ঘোড়া বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি চালাতেও তেল ব্যবহার করা হয়, এখন অবশ্য বিকল্প হিসেবে গ্যাস এসেছে। এর বিকল্প হিসেবে আছে চোখ! অবাক না? হ্যাঁ। মোটরসাইকেলের তেল ফুরালে চোখ বাটন চেপেও কিছুদূর যাওয়া যায়! একদম কাজ না হলে ফুঁ দিয়েও চালানো যায়! নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রমাণিত।

এইবার আসি খনির প্রশ্নে! একজনকে চিনতাম তিনি দুধ বেঁচে মদ খেতো! মধ্যপ্রাচ্যের হর্তাকর্তারা তেল বেঁচে মেশিন কেনে! কানে শোনার মেশিন না! অস্ত্র! কী ভয়ানক! তেল বিনিময় চুক্তি হয়! তেলের বদলে অস্ত্র, তেলের বদলে দ্বীপ, তেলের বদলে ক্ষমতা, তেলের বদলে স্টেডিয়াম! কাতার তো এবার তেলের ক্ষমতায় নিজের দেশে বিশ্বকাপই নিয়ে নিলো! ম্যান সিটি, পিএসজি এইসব ক্লাবের দিকে তাকালে বোঝা যায় তেলের কী দাপট!

জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা! এই কথা খালি আগে শুনতাম! গ্রাম দেশে মুরব্বিরা দেখলেই বলতো আহারে চুলুগুলো হুগাইয়া গ্যাছে! আয় একটু সরিষার ত্যাল দিয়া দি! এই একটু যে আমাদের সীমিত আকারের লকডাউনের মতো নয় তা আমরা সবাই জানি! মাথার ঘাম যেমন পায়ের পড়ে তেমনি মাথার তেল চুয়ে চুয়ে পায়ে পড়ে! কিন্তু আদতে সরিষার তেলে নাকি মাথার কোনো লাভই হয়না। এখন তাই সবাই নারিকেল তেল, মেথির তেল, জবার তেলসহ নানান তেল দেয়। কিছু তেল আছে সেগুলোর মধ্যে সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হয়, যাকে বলা যায় ককটেল! এখন আবার সবই হাতে, বাড়িতে নির্মিত! একদম জৈব!

তেল আবার বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয় ঘিয়ের মতো, যেমন খিচুরিতে আচাড়ের তেল।

আমি একবার খিচুরি খেতে দিছে সাথে আচার, আমি তো আচাড়ের বৈয়ম থেকে বড়ো একটা আম বের করে, আরেকটা বৈয়ম থেকে বড়ো একটা জলপাই, আরেকটা বৈয়ম থেকে এক টুকরা চালতা, আরেকটা বৈয়ম থেকে একটা আস্ত তেতুল, আরেকটা বৈয়ম থেকে কয়েকটা বড়ই বের করলাম। যে খেতে দিছে সে দেখে, হায় হায় এ কি সর্বনাশ! আচাড় তো সব খেয়ে নিলো!
আমি বললাম, দিছেন যখন খাব না?

নাহ! আচাড় খাওয়া যায় না, খেতে হয় আচাড়ের তেল!

যাক! এদিকে আবার গোসলের আগে গ্রাম দেশে সরিষার তেল দেওয়া হয় সারা গায়ে! আর শীতকালে তো পূর্বে ও পরে দুইবারই দেওয়া হয়! শীতকালে গোসলের আগে সরিষার তেল দিলে নাকি ঠাণ্ডা কম লাগে। পানি নাকি পিছলে পড়ে যায়! গায়ে বেশি একটা লাগে না, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা থেকে শীত দিয়ে শীত তোলা থেলে সরিষা দিয়ে শীত তোলা!

মেয়েদের তো যেদিন স্যাম্পুর ডেট থাকে সেদিন গোছলের আধা ঘণ্টা আগে তেল দিতে হয়! মাথায় একদম খুঁচে খুঁচে চুলের গোড়ায় দিতে হয় তেল। কারা যেন গোড়ায় পৌঁছানোর সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এক ধরণের চিরুনির মতো কি যেন বের করছে। গ্রাম দেশে তেল দিতে রেলগাড়ি বানায় মহিলারা। প্রথমে একজন থাকে তার সামনে কেউ থাকে না, সে থাকে বেকার, তার পিছনে একজন, তার পিছনে আরেকজন, তার পিছনে আরেকজন, তার পিছনে আরেকজন এভাবে বিশাল রেলগাড়ি!

কেউ বেশি পাকনা বা দুষ্টু হয়ে গেলে তাকে বলা হয়, বেশি তেল হয়ে গেছে, তেল একদম বের করে ছাড়ব!
কেউ একটু অলস হলে তাকেও বলা শরীরে তেল হয়ে গেছে না? কাজই করতে চাও না!
কারো পেট মোটা হয়ে গেলে তাকে বলা হয়, খেয়ে খেয়ে পেটটা তো একদম তেলের ড্রাম বানাইছো!

তেল দিয়ে আবার ছবিও আঁকা যায়, যাকে বলে তৈলচিত্র!

গ্রামে বলে, বেশি করে মাথায় তেল দিলে বুদ্ধি বাড়ে।

এবার আসি বাংলার ঘরে ঘরে মাঠে ঘাটে প্রান্তরে অফিসে আদালতে রাজনীতিতে সর্বক্ষণে, সর্বজনে ব্যবহৃত এক অদৃশ্য তেলের গল্পে!
আগে আসুন আগে পাবেন ভিত্তিতে, আগে তেল আগে কাজ! যত তেল তত লাভ! এই বিশেষ যে দেয় যাকে দেয় কোথায় দেয় কীভাবে দেয় কেউ জানে না! অদৃশ্য বায়বীয় ক্ষমতাসম্পন্ন একটা তেল! ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে সড়তে তেল! এক কাজ বের বের করতে যত তেল পরের কাজে দ্বিগুন তেল! এই তেল কথা, টাকা, বাজার, মিষ্টি, গহনার মাধ্যমে দেওয়া যায়! অনেকে করমর্দন করেই তৈলমর্দন করে ফেলে, হাতের ভিতর খামের মধ্যে তেল ভরে দেওয়া হয়!

যার গোডাউনে যত তেল তার সফলতা তত, তার প্রমোশন তত বেশি, তার বেতন তত বেশি বাড়ে!
তবে এই তেলের কর্মে ধরা খেলে বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যায়!

তেলভুততেলাকার!

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!