• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাশেম উৎসবে পদক পাচ্ছেন বরেণ্য দু’জন


সাহিত্য-সংস্কৃতি ডেস্ক জানুয়ারি ৬, ২০২২, ০২:৩৪ পিএম
হাশেম উৎসবে পদক পাচ্ছেন বরেণ্য দু’জন

ছবি : সংগৃহীত

নোয়াখালীর : আঞ্চলিক গানের জনক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের ৭৫তম জন্মজয়ন্তী এ বছরের ১০ জানুয়ারি। দিবসটি উদযাপনে নোয়াখালী জেলা শিল্পকলা একাডেমির বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে ‘হাশেম উৎসব’ আয়োজন করেছে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন।

শিল্পী মোহাম্মদ হাশেমের জন্মোৎসব এবার উন্মুক্ত পরিবেশে উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎসব ঘিরে বসবে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ গণমানুষের মিলনমেলা। দিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।

ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুস্তফা মনওয়ার সুজন জানান, উৎসবের বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক’ প্রদান। 

মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২২ পাচ্ছেন দেশ বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হাসান মতিউর রহমান এবং বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক ও ছায়ানটের শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র শীল। এছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ জনকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফাউন্ডেশনের জুরি বোর্ড মনোনীত ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

১০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে হাশেম উৎসব উদ্বোধন করবেন নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান। সকাল ১০টায় শুরু হবে মোহাম্মদ হাশেমের গানের প্রতিযোগিতা। দুপুর দেড়টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া শেষে দুপুর ২টায় শোভাযাত্রা। বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে ‘গণমানুষের শিল্পী মোহাম্মদ হাশেম’ শিরোনামে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানছুরুল হক খসরু।

বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া শেষে দেশ বরেণ্য দুই গুণীজনের হাতে তুলে দেওয়া হবে ‘মোহাম্মদ হাশেম পদক-২০২২। বিকেল ৫টায় একই মঞ্চে শুরু হবে সংগীতানুষ্ঠান। এতে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করবেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। রাত সাড়ে ৮টায় হাশেমের সৃষ্টি ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর সাজ্জাদ রাহমান ও সানজিদা সুলতানা নির্মিত আলাদা দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর পরপরই সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

হাশেম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পর্ষদের পরিচালক ওস্তাদ কামাল উদ্দিন জানান, হাশেম উৎসবে স্বনামধন্য লোকসংগীত শিল্পী সুজন রাজা, শাহনাজ হাশেম, রায়হান কায়সার শাওনসহ বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় শিল্পীদের গান গাওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠান পরিচালনা করবেন ফাউন্ডেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট এমদাদ হোসেন কৈশোর। এছাড়া উৎসব উপলক্ষে একটি স্মারক প্রকাশিত হবে।

নোয়াখালীর প্রধান সংগীত খ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়াল ডিস্ট্রিক ভাই/ হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’- সহ হাজারো গানের গীতিকার ও সুরকার মোহাম্মদ হাশেমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি। নোয়াখালী সদরের চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে তার বাড়ি। 

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মোহাম্মদ হাশেম ৪০ বছরের বেশি সময় নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান নিয়ে গবেষণা করছেন। লিখেছেন অন্তত দুই হাজার গান। নিজেই গেয়েছেন বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চে। নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাকে প্রথম সংগীতে রূপান্তর করে একে দিয়েছেন বিশ্ব পরিচিতি। শুধু নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানই নয়, তিনি পাঁচ শতাধিক পল্লীগীতিও লিখেছেন। লোকমুখে তিনি নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের সম্রাট, জনক, কিংবদন্তী। 

২০০৫ সলে একুশে বইমেলায় বের হয় এই সাধক পুরুষের গানের প্রথম সংকলন ‘নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। ২০১৫ সালে মোহাম্মদ হাশেমের রচিত বাছাই করা আড়াইশ গান নিয়ে উৎস প্রকাশন বের করে ‘নির্বাচিত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। 

মোহাম্মদ হাশেম ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মাইজদী শহরের বড় দিঘির উত্তর পাড়ে কোর্ট মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের হাজারো গান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন। শিল্পী ও শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ হাশেমের জীবনাদর্শ ও সৃজনকর্ম সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ ফাউন্ডেশনের মূখ্য উদ্দেশ্য। এই ফাউন্ডেশন শিল্পী হাশেমের গান সংরক্ষণ, চর্চা ও প্রসারে নিয়েছে বহুমুখী উদ্যোগ।

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!