বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে নিহত ১১

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২, ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম
বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে নিহত ১১

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, রাঙামাটির দুই উপজেলায় তিনজন, কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুজন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় একজন ও সিলেটে একজন মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন—

রাঙামাটি :  পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুই উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সকালে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির স্বর্ণটিলা সিলেটিপাড়ার মো. নজির নামের এক ব্যক্তি মারা যান। একই সময়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপকারী ইউনিয়নের বড়াদম গ্রামে মুসলিম ব্লকের বাহাজান বেগম বজ্রপাতে নিহত হন। ওই গ্রামে বজ্রপাতে আরও সাতজন আহত হয়। এ ছাড়া সাজেক ইউনিয়নে লংতিয়ানপাড়ায় টনিবালা ত্রিপুরা নামের এক নারীও একই সময় বজ্রপাতে মারা যান।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শওকত আকবর বলেন, ‘সকালে শহরের সিলেটিপাড়া থেকে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন।’

অন্যদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে মোট দুজনের মৃত্যু হয়েছে আজ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থকে প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’ বজ্রপাতের সময় সবাইকে নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। 

কক্সবাজার : কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। ভোরে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কোদাইল্যাদিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার জমিরের ছেলে দিদারুল ইসলাম ও রাজাখালী ইউনিয়নের ছড়িপাড়া এলাকার জামালের ছেলে মো. আরমান।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মগনামার কোদাইল্যাদিয়ায় ভোরে দিদারুল ইসলাম লবণের মাঠ পরিচর্যা করতে গেলে হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, গতকাল রাতে প্রচুর বজ্রপাত হয়। ভোরেও বজ্রপাত অব্যাহত থাকে। রাতের বৃষ্টিতে লবণের মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষি আরমান তা পরিচর্যা করতে যান। ওই সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ঝোড়ো বাতাসে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

ইয়াছিন আরাফাত বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপাড়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

জানা যায়, সকালে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে বাড়ির উঠানের পাশেই কাঁচা আম কুড়াতে যায় দুই ভাই। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়। 

বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাতের মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’ 

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, ‘সকালের দিকে বজ্রাঘাতে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যু বড়ই মর্মান্তিক। তাদের পরিবারকে প্রশাসনিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সিলেট : সিলেটের কানাইঘাটে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক বর্গাচাষি কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘীরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের শফিক হাওরে এ ঘটনা ঘটে।  

বজ্রপাতে নিহত বর্গাচাষি দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে বাবুল আহমদ। বজ্রপাতে ঝলসে গুরুতর আহতরা হলেন- নিহত বাবুলের ভাতিজা ফাহিম আহমদ ও মানিকপুর গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস।

স্থানীয়রা জানায়, দুপুরে স্থানীয় শফিকের হাওরে বর্গা জমিতে বোরো ধান কাটতে যান বাবুল। সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা ফাহিম ও প্রদীপ। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হন তারা। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বাবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত ফাহিম ও প্রদীপকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকরা সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। মরদেহ কানাইঘাট থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কুমিল্লা: কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে জেলার চান্দিনা, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও দেবিদ্বার উপজেলায় মোট চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে দুজন কৃষক বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও নিহতদের স্বজনদের মাধ্যমে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সোনালী নিউজ। 

মৃতরা হলেন- চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের কিছমত-শ্রীমন্তপুর এলাকার সুন্দর আলীর ছেলে কৃষক দৌলতুর রহমান (৪৭), বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচোড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে কৃষক আলম হোসেন, দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ও  সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম।  

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এমএস

Link copied!