আলোচিত সেই শের আলী এখন হাসপাতালে

  • সোনালীনিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম
আলোচিত সেই শের আলী এখন হাসপাতালে

শের আলী। তিনি পুলিশের একজন কনস্টেবল। প্রায় দুই মাস ধরে তিনি অসুস্থ, পুরোপুরি হাঁটতে পারছেন না। বর্তমানে ভর্তি আছেন রাজধানীর কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। বর্তমানে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে আছেন তিনি।

শের আলী চাকরি করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। শের আলী চট্টগ্রামে থাকেন, আর স্ত্রী দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে রামুতে থাকেন। মানুষের বিপদ দেখলে বসে থাকতে পারেন না শের আলী। 

নিজের সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা করেন তিনি। আর সে কারণেই ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে শের আলী পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদক।

শের আলী জানালেন, ২০১৬ সালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে অন্যদের সঙ্গে একটি শিশুও গুরুতর আহত হয়। সেদিন শের আলী ছুটিতে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে উদ্ধার করেন তিনি। এরপর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রক্তাক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করার পর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দৌড়ানো শুরু করেন শের আলী। শিশুটিকে বুকে চেপে চিৎকার করতে করতে দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। তখন এক সাংবাদিক শের আলীর ছবি তোলেন। অন্তর্জালের দুনিয়ায় সেই ছবিটি তখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

শের আলী বলেন, আমি যে শিশুটিকে সেদিন হাসপাতালে নিয়ে যাই, তার নাম উম্মে কুলসুম। বর্তমানে সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। টেকনাফে থাকে কুলসুম। তার বাবার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। আমি অসুস্থ শুনে কুলসুম তার বাবার সঙ্গে আমাকে দেখতে এসেছিল। আমাকে আংকেল ডাকে। মাঝেমধ্যে কুলসুমের পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।

শের আলী জানালেন, ২০০৫ সালের দিকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আলী আহমদ সওদাগর ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তাঁকে ফেলে চলে যায়। তখন শের আলী এই ব্যবসায়ীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ব্যবসায়ীর মুঠোফোন থেকে ফোন করে পরিবারকে খবর পাঠান শের আলী। পরে আলী আহমদ সওদাগর শের আলীকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন।

শের আলী বললেন, আমি টাকা নিইনি। এখনো মাঝেমধ্যে ফোন করে আমার খবর নেন আলী আহমদ সওদাগর। আমি মানুষের জন্য কিছু করলে প্রতিদান চাই না। মানুষ আমাকে ভালোবাসে, এটাই বড় কথা। আমার তো মনে হয়, মানুষ দোয়া করছে বলেই আমি আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাচ্ছি। এখন একটু একটু হাঁটতে পারি।

শের আলী ২০১১ সালে কোমরে ব্যথা পান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর কোমরের দুটি হাড় বেড়ে গেছে। ফলে শিরায় চাপ পড়ত, বাঁ পা অবশ লাগত। এরপর বিভিন্ন সময়ই এ ব্যথায় কাবু হতেন শের আলী। এবার প্রথমে চট্টগ্রামের বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি হন গত আগস্টের ১ তারিখ। ঢাকায় আসেন ১৮ সেপ্টেম্বর। অস্ত্রোপচারসহ নানা চিকিৎসা চলছে। শের আলী জানালেন, বর্তমানে অনেকটাই ভালো আছেন তিনি, চিকিৎসার জন্য ভাবতে হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেই শের আলী হাসপাতালে দৌড়াতেন। কোনো না কোনোভাবে শের আলীর সহায়তা পাওয়া মানুষগুলো চট্টগ্রাম ও বর্তমানে ঢাকায় হাসপাতালে তাঁকে দেখতে এসেছেন। শের আলীর সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে শের আলীর জন্য দোয়া চেয়েছেন এই মানুষগুলো।

২০১৬ সালে বাস দুর্ঘটনার পর শের আলীর সেই আলোচিত ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন প্রথম আলোর কক্সবাজার, চকরিয়া প্রতিনিধি এস এম হানিফ। এস এম হানিফ মোবাইলে বললেন, ২০১৬ সালে দুর্ঘটনার পর ইমরুল কায়েস নামের এক সাংবাদিক শের আলীর ছবি তুলেছিলেন। আমি সেখান থেকে কিছু ছবি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়। এরপর শের আলীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাঁর মহানুভবতা, মানবতা, একাগ্রতা আমি বুঝেছি।

বর্তমানে শের আলীর সঙ্গে হাসপাতালে থাকছেন তাঁর স্ত্রী মঞ্জিআরা বেগম। ছেলেমেয়েদের মধ্যে একজন হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে, আর আরেকজন থাকছে নানির বাড়ি। ১৯৯৯ সালে পুলিশে যোগ দেন শের আলী। তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পিপিএম পদকের জন্য এককালীন পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে পাচ্ছেন এক হাজার টাকা করে।

শের আলী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পিপিএম পদক পাওয়ার পর বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও অনেক অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। পদক বা অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর অনেক ভালো লেগেছে। পুলিশের কেউ কেউ আমাকে দেখে নিজেও মানুষের জন্য কিছু করতে উৎসাহিত হয়েছেন।প্রথম আলো

সোনালীনিউজ/এইচএন

Link copied!